ওয়ালিউর রহমান মিরাজ
বিবিসি বাংলা, ঢাকা (১৪ অগাস্ট ২০১০)
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্রত্ব বাতিলের একটি আদেশ ৬১ বছর পর প্রত্যাহার করে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৻
বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি-নির্ধারণী সিন্ডিকেটের এক বিশেষ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৻
উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলছেন যে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে অংশ নেয়ার অভিযোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে বহিস্কারের সিদ্ধান্তটি অগণতান্ত্রিক ও সুবিচারের পরিপন্থী ছিল, আর সেকারণেই ঐ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে৻
শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় শোক দিবস পালনের ঠিক আগে তাঁর ছাত্রত্ব বাতিলের আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনার জন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেটের সভাটি ডেকেছিল৻
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল ১৯৪৯ সালে, যখন তিনি আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়ণরত ছিলেন৻
চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ঐ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে তাকে এবং আরো চারজনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন নির্বাহী পরিষদ বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৻
উপাচার্য অধ্যাপক সিদ্দিক বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে যেসব ছাত্র-ছাত্রী অংশ নিয়েছিল, তাদের মধ্যে পাঁচজনকে কর্তৃপক্ষ বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়৻
যার ছাত্রত্ব আমরা বহাল করলাম, তিনি আজ সব কিছুর উর্ধ্বে৻ কিন্তু এটি করে আইনের শাসনের প্রতি একটি দিক নির্দেশনা আমরা দিলাম
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
তবে বলা হয়েছিল যে ১৫ রুপী জরিমানা এবং পরিবারের মাধ্যমে মুচলেকা দিয়ে তাঁরা ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে৻
শেখ মুজিব ছাড়া অন্য চারজন ছিলেন কল্যাণ চন্দ্র দাশগুপ্ত, নাঈমউদ্দিন আহমেদ, নাদেরা বেগম এবং আবদুল ওয়াদুদ৻
উপাচার্য বলেন, এরা সবাই জরিমানা এবং মুচলেকা দিলেও শেখ মুজিব তাতে রাজী হননি৻
দীর্ঘ ৬১ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় কর্তৃপক্ষ শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্রত্ব বাতিলের বিষয়টি পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নেয় কয়েকটি সামাজিক সংগঠন এ ব্যাপারে আবেদন করার পর৻
অধ্যাপক সিদ্দিক বলছেন যে শেখ মুজিবুর রহমানকে বহিস্কার করার ক্ষেত্রে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়মনীতি মানেন নি বলেই নথিপত্র দেখে সিন্ডিকেট সদস্যদের মনে হয়েছে৻
তিনি বলেন, এধরনের বহিস্কারাদেশ দেওয়ার আগে আত্মপক্ষ সমর্থনের লক্ষ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া উচিত ছিল৻ কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি৻
তাই সবদিক বিবেচনা করেই বহিস্কারাদেশটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে বলে উপাচার্য জানান৻
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে যে ছাত্রত্ব বাতিলের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্যে শেখ মুজিবুর রহমান নিজে কখনো আবেদন করেন নি, এমনকি তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পরও৻
১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাষ্ট পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য সহ তিনি নিহত হন৻
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আর তাই আজ একষট্টি বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের কোন ব্যবহারিক মূল্য হয়তো নেই৻
তবে উপাচার্য বলেন যে একটি ভুল সংশোধন করার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে৻
“যার ছাত্রত্ব আমরা বহাল করলাম, তিনি আজ সব কিছুর উর্ধ্বে৻ কিন্তু এটি করে আইনের শাসনের প্রতি একটি দিক নির্দেশনা আমরা দিলাম৻“
তিনি বলেন, সিন্ডিকেট সদস্যরা সবাই মনে করেন যে এই বহিস্কারাদেশ আরো অনেক আগেই প্রত্যাহার করা উচিত ছিল৻
শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্রত্ব বাতিলের আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সিদ্ধান্তটি নিয়েছে সর্বসম্মতভাবে৻
অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন যে এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি তাঁর পরিবারের সদস্যদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে৻
শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্য রয়েছেন দুইজন – বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর বোন শেখ রেহানা৻