বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ মুজিবের অবদান কেন এখনো এত গুরুত্বপূর্ণ?


আকবর হোসেন
বিবিসি বাংলা, ঢাকা (১৫ অগাস্ট ২০১৬)

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের স্মরণে আজ দেশজুড়ে রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালন করা হয়েছে।

৪১ বছর আগে শেখ মুজিব ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের সাথে হত্যা করা হয়।

দেশজুড়েই চলেছে নানা ধরনের আয়োজন। বড় রাস্তার ধারে অলিতে-গলিতে , সবজায়গায় এ দৃশ্য চোখে পড়ার মতো।

এসব আয়োজনের সামনের সারিতে ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

এর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে যেমন স্মরণ করার পাশাপাশি তার রাজনৈতিক অবদানকেও তুলে ধরা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মূল্যায়নের বাইরেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ মুজিবুর রহমান এখনো বহুল আলোচিত এক নাম।

ইতিহাসের দিকে তাকালে বোঝা যায়, গত পঞ্চাশ বছর ধরে রাজনীতিতে জীবিত অথবা মৃত শেখ মুজিবের আধিপত্য স্পষ্ট।

এর কারণ কী?
ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন
ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
মনে করেন, এর দুটো কারণ রয়েছে। প্রথমত; শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড এবং দ্বিতীয়ত; বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার অবদান।

অধ্যাপক হোসেন বলেন , “ তিনি যদি স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করতেন, তাহলে মানুষের হৃদয়ে এতটা গভীরে যেতে পারতেন কিনা সন্দেহ।”

শেখ মুজিব তার সমসাময়িক অনেক নেতাকে রাজনীতির মাঠে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন।

১৯৬০’র দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে শেখ মুজিব অতি দ্রুত প্রধান রাজনৈতিক নেতা হয়ে উঠেন।

অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের বর্ণনায় মাওলানা ভাসানী এবং এ কে ফজলুল হক পঞ্চাশের দশকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকারের কথা বলেছিলেন।

কিন্তু শেখ মুজিব সাধারণ মানুষের ভাষায় তাদের স্বপ্নের কথা বলেছিলেন।

অধ্যাপক হোসেন বলেন, “ ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনের সময় সিরাজুল আলম (তৎকালীন ছাত্র লীগের প্রথম সারির নেতা) মন্তব্য করেছিলেন, শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন করতে হবে। কারণ লোকে তার কথা শোনে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের শিক্ষক শান্তনু মজুমদার মনে করেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়াটাই শেখ মুজিবের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সাফল্য।

তিনি বলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ মুজিবের যে অবদান, সেটিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন সম্ভব নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের শিক্ষক শান্তনু মজুমদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের শিক্ষক শান্তনু মজুমদার।
মি: মজুমদার বলেন, “ অনেকে হয়তো এমনও বলতে পারেন যে, ওনার (শেখ মুজিব) চাইতেও প্রমিজিং অনেকে ছিলেন।কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়েছেন তিনিই (শেখ মুজিব)।”

ইতিহাসের এ অংশটিকে স্বীকার করার জন্য কাউকে আওয়ামী লীগ সমর্থক হবার দরকার নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

শেখ মুজিবের রহমানের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার অবস্থান আরো জোরালো করেছে বলে মনে করেন রাষ্ট্র বিজ্ঞানের এই শিক্ষক।

মি: মজুমদার বলেন, “ যে যেই রাজনৈতিক মতাদর্শের হোক না কেন, নিতান্তই পাকিস্তানপন্থী যদি না হয়, তারা সম্ভবত এটা ( মুজিব হত্যাকাণ্ড) মেনে নিতে পারে নাই।”

স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল নিয়ে বিশ্লেষকদের মাঝে নানা আলোচনা-সমালোচনা এবং বিতর্ক রয়েছে।

মুজিব হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও তৈরি হয়েছে।

মি: মজুমদার মনে করেন, শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।

প্রথমত: ১৯৪৭ সালের আগে, তারপর পাকিস্তান আমলে এবং সর্বশেষ ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল।

তিনি বলেন শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশ্লেষণ হতে পারে।

কিন্তু ইতিহাসে শেখ মুজিবের যে স্থান সেটি তাকে দিতে হবে বলে মি: মজুমদার উল্লেখে করেন।

SUMMARY

976-1.jpg