কাদির কল্লোল
বিবিসি বাংলা, ঢাকা (১৫ অগাস্ট ২০১১)
বাংলাদেশের সংবিধানে দেশটির স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর এই প্রথমবার তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হলো।
উনিশ‘শ পচাত্তর সালের ১৫ই আগস্ট তাঁকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে অনেক রাজনীতিক এবং সাধারণ মানুষ মনে করেন, একধরণের বাধ্যবাধকতা তৈরী করা হয়েছে এবং তাতে শেখ মুজিবকে খাটো করা হয়েছে।
তাঁকে দলীয়ভাবে ব্যবহারের কারণেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে অনেকেই মনে করেন।
তবে তা মানতে রাজী নন আওয়ামীলীগ নেতারা।
তাঁরা বলেছেন, সংবিধান থেকে সঠিক ইতিহাস মুছে ফেলা হয়েছিল, যা তারা ফিরিয়ে এনেছেন।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হলো রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে।
তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর ১৫ই আগষ্ট আবার রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘জাতীয় শোক দিবস‘ হিসেবে পালন করা হলো৻
ধানমন্ডিতে ফুল আর ফুল
যে গ্লানি আমাদের তাড়া করছিল, যে অপরাধেবোধে আমরা ভুগছিলাম, সেই পরিস্থিতি থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী
তবে এবার দিবসটি এসেছে আরেক প্রেক্ষাপটে।
শেখ মুজিবকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেবার পাশা পাশি সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছে তাঁর ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণ।
সাংবিধানিক এই স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে আবেগের বিষয়টিই অনেকখানি উঠে আসছে।
দলটির নীতি-নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং প্রভাবশালী মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী উল্লেখ করেন, সংবিধান থেকে সঠিক ইতিহাস মুছে দেয়া হয়েছিল, যা তারা ফিরিয়ে এনেছেন বলে মনে করেন।
‘বঙ্গবন্ধু এতে নতুন করে মহান হননি। যে গ্লানি আমাদের তাড়া করছিল, যে অপরাধেবোধে আমরা ভুগছিলাম, তাঁকে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে সেই সব পরিস্থিতি থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি,“ মতিয়া চৌধুরী বলেন৻
তবে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিন্ন বক্তব্যও রয়েছে।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মনে করেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার মাধ্যমে শেখ মুজিবকেই খাটো করা হয়েছে।
“ আওয়ামী লীগ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যা করেছে, সেটা দলীয় সংকীর্ণতার মধ্য থেকে করা হয়েছে। এর ফলে শেখ মুজিবের যে মহিমামন্ডিত অবস্থান ছিল ইতিহাসে ,সেটাকেই তারা খাটো করেছেন,‘‘ মি: রিজভী বলেন৻
সাধারন মানুষদের অনেকেই বলেন, প্রধান দুই দলের দৃষ্টিভঙ্গি যেমন এক নয়, তেমনি বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে সব ইস্যুই বদলে যায়৻
ঢাকার একটি ব্যস্ত সড়কে কথা হচ্ছিল বিভিন্ন পেশার কয়েকজনের সাথে, যাদের অনেকেই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার চাইতে মানুষের অনুভূতিকেই গুরুত্ব দিয়েছেন।
অনেকে বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে সাংবিধানিক স্বীকৃতির প্রয়োজন ছিল।
আবার অনেকেই মনে করেন, শেখ মুজিবের অবদান মানুষ অনুভূতি বা আবগে থেকেই মনে করবে।
শিল্পকলা এ্যাকাডেমিতে চিত্রকলা প্রদর্শন
শেখ মুজিবকে দলীয় সংকীর্ণতার মধ্যে আটকে রেখেছে আওয়ামী লীগ
সিপিবি নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
সেখানে লিখিত কিছুর প্রয়োজন ছিল না।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সহ বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের কাছাকাছি ছিল কমিউনিস্ট পার্টি।
এই কমিউনিস্ট পার্টির সাধারন সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম শেখ মুজিবকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া না দেওয়া প্রশ্নকে গুরুত্ব দিতে চাননি।
তিনি মনে করেন, শেখ মুজিবকে দলীয় সংকীর্ণতার মধ্যে আটকে রেখেছে আওয়ামিলীগ।
বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের অনেকের মধ্যেও বিভিন্ন চিন্তা কাজ করছে বলে মনে হয়েছে।
অনেকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবকে দলীয়ভাবে এতটাই ব্যবহার করছে, অনেক সময়ইেএর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
অনেকে আবার ভিন্নমতও তুলে ধরেছেন।
বড় দুটি দলই ব্যাক্তি ভাবমূর্তিকে ব্যবহার করেছে।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাবমূর্তি দরীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে প্রধান বিরোদী দল বিএনপি৻
বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামিলীগ শেখ মুজিবকে দলীয় সংকির্ণতার মধ্যে রেখেছে এবং যে কারণে তার মূল্যায়ণ হচ্ছে খন্ডিতভাবে ।
‘ শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের গন্ডি অতিক্রম করে জাতীয় নেতৃত্বে অবস্থান নিয়েছিলেন, সেটা দলটির উপলব্ধি করা উচিত,‘‘ মি: রিজভী বলেন৻
এমনসব বক্তব্য মানতে রাজী নন আওয়ামী লীগ নেত্রী মতিয়া চৌধুরী।
তিনি উল্লেখ করেছেন,শেখ মুজিব আওয়ামী লীগকে তিলে তিলে গড়েছেন।
‘‘শেখ মুজিবকে মূল্যায়ণের ক্ষেত্রে কোন কোন গোষ্ঠী অনেক সময়ই হীনমন্যতার পরিচয় দেয়‘‘, তিনি বলেন৻
একই সাথে আওয়ামী লীগ নেতারা আশা করেন, সংবিধানে শেখ মুজিবকে যে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, অন্য দল ক্ষমতায় গেলেও তা পাল্টানো হবে না ।
তবে সাধারণ মানুষের অনেকেই সন্হে করছেন, বাংলাদেশের বর্তমনা রাজনীতি যেভাবে চলছে, তাতে সেটা সম্ভব নাও হতে পারে৻
শেখ মুজিবের মৃত্যুদিবস উপলক্ষ্যে ঢাকায় শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা