সাংবাদিক আমির হোসেন বলেছেন ''৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে আন্দোলনটা যে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়েছিল সেটা আমরা বুঝতে পেরেছিলাম''
১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান।
সেই ভাষণ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। এর প্রায় দুই সপ্তাহ পরেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
৭ই মার্চের ভাষণটি কাভার করতে যেসব সাংবাদিক গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি সানের উপদেষ্টা সম্পাদক আমির হোসেন।
সেই সময় তিনি ইত্তেফাক পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন।মূলত রাজনৈতিক খবরগুলোই তিনি কাভার করতেন।
বিবিসির কাছে সেদিনের স্মৃতিচারণ করেছেন সাংবাদিক আমির হোসেন।
মি: হোসেন বলেছেন “দুইটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আসার কথা ছিল তার অনেক আগেই রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত হয়েছিলাম আমি। উনার আসতে দেরী হয়েছিল। কিন্তু যে বিশাল জনস্রোত! এখনও ভেবে পাইনা কোত্থেকে এত মানুষ এসেছিল!”
তিনি আরও বলেন “৭০ এর নির্বাচনের সময় থেকে আমি বঙ্গবন্ধুর সাথে বাংলাদেশ ঘুরেছি। দেড় শতাধিক জনসভা আমি কাভার করেছি বিভিন্ন সময়ে”।
“কিন্তু ওই ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর যে বিপ্লবী রূপ, তাঁর বক্তব্যের যে ভাষা, ওজস্বিতা, বলিষ্ঠতা-এগুলো আমি এর আগে পাই নাই”-বলেন মি: হোসেন।
এখনও যদি ৭ই মার্চের কথা ভেবে রোমাঞ্চিত হন সাংবাদিক আমির হোসেন।
স্মৃতিচারণ করতে যেয়ে তিনি বলেন “এখনও আমার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ওই দিনটি ভাসে। আমি রোমাঞ্চিত হই। এত বিশাল একটা ঘটনা ওইদিন আমাদের সামনে ঘটেছিল”।
তাঁর কাছে কি মনে হয়েছিল সেইদিনের সেই ভাষণ ঐতিহাসিক এক ভাষণে রূপ নেবে?
সাংবাদিক আমির হোসেন বলেছেন ‘এটা ইতিহাসের অংশ হবে কি হবেনা সেইদিন ওভাবে দেখিনি আমরা। কিন্তু এটা যে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং আন্দোলনের বাঁক পরিবর্তন হতে যাচ্ছে তা বুঝতে পারছিলাম আমরা”।
“ওই ৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে আন্দোলনটা যে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়েছিল সেটা আমরা বুঝতে পেরেছিলাম”-বলেন মি: হোসেন।
পত্রিকা অফিসে ফেরার পর সহকর্মীরা সবাই মি: হোসেনকে ঘিরে ধরেছিলেনকী ঘটেছে জানার জন্য।
হাসতে হাসতে আমির হোসেন বলছিলেন “সেইসময় একাট হুলস্থুল ব্যাপার ঘটেছিল। আমি তখন তাদের বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের কথা বলছিলাম আর পাশাপাশি রিপোর্ট লিখছিলাম। তাঁর চুম্বক কথাগুলো আমার কানে ভাসছিল - ‘রক্ত যখন দিয়ছি রক্ত আরও দেবো; বাংলার মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ..এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম..এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’। স্বাধীনতার কথা সেদিনই তিনি এভাবে জনসম্মুখে উচ্চারণ করেছিলেন”।