{{‘Bangladesh Liberation Force’ সংক্ষেপে BLF যা মুজিব বাহিনী নামে পরিচিত। মুজিব বাহিনীর উদ্দ্যোগে ১৯৭২ সালে ৩১ জানুয়ারি ঢাকা স্টেডিয়ামে অস্ত্র হস্তান্তর অনুষ্ঠানে জাতির পিতা, ততকালিন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বক্তব্য রাখেন। সেই ভাষনটি লিখে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। কিছু শব্দ গুলো বুঝা যাচ্ছিল না, আশা করি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি রাখবেন।
{{(জয় বাংলা!! জয় বাংলা!!
বঙ্গবন্ধু ………বঙ্গবন্ধু ……… বঙ্গবন্ধু ………বঙ্গবন্ধু ………
মুজিব বাদ ……… মুজিব বাদ……… মুজিব বাদ ……… মুজিব বাদ……… ) }}
সত্য কথা বলতে কি যখন আপনাদের আমি দেখি, যখন আপনাদের চেহারা আমি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে , তখন সত্যিকারের কথা বলতে গেলে বলতে হয় , আমি বক্তৃতা করা ভুলে গিয়েছি।
যাবার বেলায় আমি আপনাদের কিছু দিয়ে জেতে পারি নাই, আপনাদের দিয়েছিলাম আমার শুভেচ্ছা, আপনাদের দিয়ে গিয়েছিলাম আমার আদর্শ। আপনাদের দিয়ে গিয়েছিলাম এক নিতি যার উপর ভিত্তি করে, পাষণ্ড পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্য বাহিনীর বিরুদ্ধে আপনারা মোকাবেলা করেছেন। আমি যা বলেছিলাম আপনারা তা করেছেন। আমি বলেছিলাম “এবারের স্বংগ্রাম মুক্তির স্বংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। আমি বলেছিলাম আপনাদের কাছে কিছু নাই আমি জানি, কিন্তু আমি জানি যে জাতির মন-বল বেড়ে যায়, যে জাতি সংঘবদ্ধ হয়, যে
জাতি রক্ত দিতে শেখে সে জাতিকে কেউ দাবায় রাখতে পারে না। তাই আমি বলেছিলাম তোমাদের হাতে যা কিছু আছে ঘরে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা কর। আমি নাও থাকতে পারি তোমাদেরে হুকুম দিবার জন্য। তোমরা তা করেছ। তোমাদের আমি যদি আজ ধন্যবাদ জানাই সেটা অন্যায় করা হবে। তোমাদের ধন্যবাদের চেয়ে অনেক বেশি পাওনা। যেটা দেবার মত ক্ষমতা আমার নাই। আমার আছে প্রাণ ভরা ভালোবাশা। আমি তোমাদের সেই প্রাণ ভরা ভারা ভালবাসা দিলাম, আর কিছু দিবার নাই।
তোমাদের এই বাহিনীর ইতিহাস আছে, সেই ইতিহাস অনেকেই জানে না। সেই ইতিহাস লেখা হবে, সেই দিন তোমরা জানতে পারবা। গন বাহিনী, মুজিব বাহিনি, যে সমস্ত বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তির জন্য স্বগ্রাম করেছে , যে সমস্ত ভাইরা আমার শহিদ হয়েছে, আত্ম উৎসর্গ দিয়েছে , সকলকে আমার অন্তরের শুভেচ্ছা জানাই।
স্বাধীনতা পেয়েছি বটে, কিন্তু অত্যন্ত , এত রক্ত কোন জাতি কোন দিন দেয় নাই। মানুষ যে এত নৃশংস হতে পারে, মানুষ যে এত নিচু হতে পারে, মানুষ যে এত পশু হতে পারে তা যা পাকিস্তানের সৈন্য বাহিনী দেখিয়েছে, দুনিয়ার ইতিহাসে কেউ তা দেখায় নাই। লক্ষ লক্ষ গ্রাম পুড়ায়ে দিয়েছে, লক্ষ লক্ষ মা-বোনকে হত্যা করেছে, লক্ষ লক্ষ মা-বোনকে অত্যাচার করে শেষ করেছে, আমার মা-বোনের উপর পাষাবিক অত্যাচার করেছে, চিন্তা করলে আমি শিহরিয়ে উঠি। কিন্তু তোমরা যে শৃঙ্খলা দেখিয়েছ, তোমরা যে ব্যবহার দেখিয়েছ, দুনিয়ার কাছে বাঙ্গালি যত দিন বেচে থাকবে, মাথা উচু করে বেচে থাকবে। না হলে এমন কোন আমার ছেলে নাই , যারা সংঘটিত হয়ে সংগ্রাম করেছেন, যারা গন বাহিনীতে সংগ্রাম করেছেন, সৈন্য, পুলিশ ও অনান্য এপিয়ার, যারা ছাত্র-যুবক যুদ্ধ করেছেন তার ফেমিলির উপর অত্যাচার করা হয় নাই,তার ঘরবাড়ি জালিয়ে দেওয়া হয় নাই, তার মা-বনের উপর অত্যাচার করা হয়নাই। তবুও তোমরা যে ধৈর্য আপনারা দেখিয়েছেন বা দেখিয়েছ তা দুনিয়া ডেকে একবার দেখে যাক, যে বাঙালি জাতি বিনা অস্রে সস্রর বাহিনীর বিরুদ্ধে মোকাবেলা করতে পারে, অস্র কেড়ে নিয়ে স্বংগ্রাম করতে পারে, বাংলা মাকে মুক্ত করতে পারে , সে জাতি দেখাতে পারে ধৈর্য কি জিনিস। তাই এতবড় স্বংগ্রামের পরেও কোন রকমের হত্যা কান্ড হয় নাই। কেউ যদি মনে করে থাকেন এটা আমার যুবকদের দুর্বলতা ? তারা ভুল করেছেন, এটা দুর্বলতা নয়, এটা হল মহানুভবতা। তাই তোমাদের প্রতি আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ রইল। যে ডিসিপ্লিন তোমরা দেখিয়েছ আমি গর্বে দুনিয়ার কাছে মাথা উচু করে কথা বলতে পারি।
আমি যদি এই মুহুর্তে ভারতের প্রধানমুন্ত্রি মিসেস গান্ধী, ভারতের জনসাধারণ, ভারতের সামরিক বাহিনী, পশ্চিম বঙ্গের জনসাধারণ, আসামের জনসাধারণ, ত্রিপুরার জনসাধারণ, মেঘালয়ের জনসাধারনকে মুবারকবাদ না জানাই তাহলে অন্যায় করা হবে। তাদের আমি আপনাদের৭
পক্ষথেকে, সাত কোটি দুঃখি বাঙ্গালির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। এক কোটি লোককে তারা আমার খাবার দিয়েছে, এক কোটি লোককে তারা আমার স্থান দিয়েছে, এক কোটি লোককে আমার বাসনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
আমি যদি রাশিয়ার সরকার, রাশিয়ার জনসাধারনকে ধন্যবাদ না জানাই অন্যায় করা হবে। যখন সাম্রাজ্জবাদী শক্তি, যখন আমার, আমার সৈন্য বাহিনী, যারা আপনার, মুজিব বাহিনী গন বাহিনী এগিয়ে আসছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে সাহায্য করেছিলন ভারতিয় সৈন্য বাহিনী চেষ্টা করেছিল যাতে এই বাংলাদেশের বুকে পশ্চিম পাকিস্তানের ঘাঁটি রাখতে পারে। কিন্ত রাশিয়ার ভেটুতে তা পারেনাই। সেই জন্য রাশিয়াকে আমি মোবারকবাদ জানাই।
এই দুনিয়ার ব্রিটিস,ফ্রান্স, জার্মানি, এমনকি ….. সেই দেশের সাংবাদিক ও নেতাদের ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু অ্যামেরিকার সরাকারকে আমি ধন্যবাদ দিতে পারি না। তারা জানে, তাদের কাছে খবর আছে, যে বাংলাদেশে কি করে মানুষকে মারা হচ্ছে। তারা জানে যে গ্রামকে গ্রাম পুড়িয়ে ছারখার করা করচ্ছে। সেই মুহুর্তে অ্যামেরিকার নিকসন সরকার অশ্র দিয়েছে পাকিস্তানের সৈন্য বাহিনীকে আমার মা-বোনদের হত্যা করার জন্য। কিন্তু অ্যামেরিকার জনসাধারনদের কাছে আমার শুভেচ্ছা বানী পৌছে দিতে চাই। অ্যামেরিকার সাংবাদিকদের কাছে আমার শুভেচ্ছা বানী পৌছে দিতে চাই। কানাডির কাছে আমার শুভেচ্ছা বানী পৌছে দিতে চাই। সিনেটের ………(বুঝা যাচ্ছে না)। বাংলার মানুষ কোন মানুষের বিরুদ্ধে নয়, বাংলার জনগন জালেমের বিরুদ্ধে সে যেখানেই পয়দা হক না কেন।
ভাইয়েরা আমার আপনারা যদি মনেকরে থাকেন স্বাধীনতা এনেছেন আপনাদের কাজ খতম হয়ে গিয়েছে, সেটা ভুল করা হবে। স্বাধীনতা পাওয়া যেমন কষ্টকর স্বাধীনতা রক্ষা করাও অতিব কষ্টকর। ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু তারা জানেনা বাংলাদেশের মানুষকে। তারা জানে না আমার গন বাহিনীর লোকদের, তারা জানে না আমার মুজিব বাহিনীর লোকদের, তারা জানে না আমার- এই বাংলার জন-সাধারনকে। কি করবে? আমার স্বাধীনতা হরণ করার চেষ্টা করবে? ষড়যন্ত্র করবে? ভুলে যাও — — সাত কোটি মানুষ গুনে গুনে জান দিবে বাংলার স্বাধীনতাকে কেউ নিবার পারবে না।
আমি আমার সহকর্মিরা যারা আমার অনুপস্থিতি নেত্রিত্ত দিয়েছে তদেরো মোবারকবাদ জানাই। তারা যে শৃংখলা প্রমাণ দিয়েছে তাতে ধন্যবাদ না দিয়ে পারি না। আওয়ামিলীগের কর্মিদের, আওয়ামিলীগের নেত্রিবিন্দের।
বাংলার জনসাধারনকে আমি বলে দিতে চাই এবং তাদেরও আমি বলে দিতে চাই যে এমন কোন বাংলার ঘর নাই যে ঘরে মুজিবর রহমানকে ভালবাশে না। তারা আমার কাছে খবর পৌছিয়ে দিবেন যে কার কাছে অশ্র আছে, সে অশ্র আমরা কেমন করে আনতে হয় সে জানি।
টাকা নাই, পয়সা নাই, চাইল নাই, ডাইল নাই, রাস্তা নাই, রেলওয়ে ভেঙ্গে দিয়ে গেছে। সব… শেষ করে দিয়ে গেছে, অ্যা.. অ্যা.. কি জানি কয়? ফেরাওনের দল সব শেষ করে দিয়েগেছে। কিন্তু আছে আমার মানুষের একতা,আছে তাদের ইমান, আছে তাদের শক্তি। এই মনুষ্য শক্তি নিয়েই এই বাংলাকে নতুন করে গড়ে তুলতে চাই।
তোমাদের কাছে আমি চাই, যেভাবে এই আরও দু-মাস লাগত কি তিন-মাস লাগত স্বাধীন হতে কি তোমরা যুদ্ধ করতা না? যদি এক বৎসর লাগত যুদ্ধ করতা না? না খেয়ে কষ্ট করতা না? তোমরা শত্রুর মোকাবেলা করতা না? গুলি খেয়ে মরতা না? এই এক বৎসর তোমাদের সর্বশ্য ত্যাগ করে আমার দেশের গঠনমুলক কাজে আত্বঃ নিয়োগ তোমাদের করতে হবে। করবা?
রাস্তা তোমাদের নিজেদের করতে হবে, ব্রিজ তোমাদের নিজেদের করতে হবে, ফসল উৎপাদন তোমাদের করতে হবে, গ্রামে গ্রামে তোমাদের কাজ করতে হবে। শান্তি শৃংখলা তোমাদের অ্যারিয়াতে তোমাদের রাখতে হবে। করবা?
আমি জানি তোমরা করবা, আমি যখন ছিলাম না তখন যখন আমার কথা মত করেছ, নিশ্চয় করবা। এ বিশ্বাস না থাকলে আমি বাচতে পারতাম না। আর তোমরা যদি আমার স্বংগ্রাম না করতা তাহলে বোধয় আমি, গন বাহিনী, মুজিব বাহিনী, আমার আওয়ামিলীগের কর্মিরা আর সমস্ত দল যার আমকে সমর্থন করেছেন, সেই সমস্ত দলের কর্মিরা যদি সমর্থন না করতেন বোধয় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আমি আসতে পারতাম না।
আর একটা কথা বলতে চাই, ভুট্টু সাহেব বড় নারাজ হয়ে গেছে। তিনি জেই আমাকে রিকগনিশন দেয় আর অমনেই তিনি কাট করে দেন। আমার মনে হয় হারাধনের একটি ছেলে কাঁদে ঘেও ঘেও, মনের দুঃখে বনে গেলো রইলনা আর কেও। বোধয় শ্রীমানের এই অবস্থাই হবে। সুখে থাক সুখে থাক আমি তুমাদের আশির্বাদ করি, সুখে থাক ভুট্টু সাহেব। তোমার লোকের বিরুদ্ধে আমার কিছুই নাই, তোমার জালেমদের বিরুদ্ধে আমার জতেষ্ঠ বলার রয়েছে। তেইশ বৎসরে আমার মা-বোনের রক্ত শোশন করে নিয়েছ, তেইশ বৎসর পরে আমার মানুষের বুকের রক্ত নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছ। তেইশ বৎসর পরে আমার মা-বোনেকে গুলি করে হত্যা করেছ, তেইশ বৎসরের পরে আমার মা-বোনের উপর তুমি পাষাবিক অত্যাচার তোমার সৈন্যরা করেছে। তবুও আমি চাই তোমরা সুখে থাক। আমাদের সুখে থাকতে দাও। তোমাদের সঙ্গে আমাদের কোন সম্মন্ধ হতে পারে না।
তুমি রিয়েলিটি মাইনে নেও। তুমি রিয়েলিটি মাইনে নেও। এই দিক চিন্তা ভাবনা না করে নিজের মানুষকে বাঁচাও। করণ তুমার অর্থনৈতিক অবস্থা,আমি জানি… বারটা তুমার বেজে গেছে। সাত কোটি লোকের বাজার আর তোমার নাই, সাত কোটি লোকের কলোনী তোমার আর নাই। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার অবস্থাও তোমার আর নাই। সৈন্য বাহিনীতে শতকরা ৭০ টাকা খরচ কর, আনপ্রডাক্টিভ একটি কাজ। ঐদিকে নজর দাও বন্ধু, এদিকে কোন চিন্তা কর না। নিজের কথা ভাব, পরের জন্য চিন্তা করে আর লাভ নাই।
ভাইয়েরা আমার!! তাই তোমাদের আমি ধন্যবাদ জানাই। এবং নিশ্চয় তোমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমি জানি তোমরা কি কষ্ট করেছ, আমি বুঝতে পারি। আমি নিজেও ভুক্তভুগি। পাহাড়ের মধ্যে থেকেছ, না খেয়ে কষ্ট করেছ। দু-মাস তিন-মাসের মধ্যেও এক দিন মাছ মাংস খেতে পার নাই। এমনকি তোমরা কোন দিন পেট ভরে ভাল করে ভাত খেতে পার নাই। তোমাদের গায়ে একটু কাপড় পর্জন্ত ছিল না, তাই নিয়ে তোমরা শত্রুর মোকাবেলা করেছ। জাগায় জাগায় সৈন্যদের কাছথেকে অশ্র কেড়ে নিয়েছ। তোমাদের আমি কি দিয়ে? কি দিয়? আমার ভালবাশা জানাব বুঝে উঠতে পারছি না। তোমরা জান আমি তোমাদের ভালবাসি, আর আমিও জানি তোমরা আমাদে ভালবাশ।
তোমাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ রইল, যেদিন তোমরা সন্ধেহ কর যে আমার ভালবাশার মধ্যে কোন কৃপনতা আছে, সে দিন আমায় বলে দিয়ও। আমি চিরদিনের মত তোমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যাব। আমি সব ত্যাগ করতে পারি তোমাদের ভালবাসা আমি ত্যাগ করতে পারি না।