দিলীপ কুমার বড়ুয়া
উনিশ ’শ একাত্তরের মার্চ বাঙালি জাতিসত্তার এক ঊর্মিমুখর রক্তাক্ত সংগ্রামের মাস। বাঙালির সমগ্র চৈতন্যের আবেগ হৃদয়ের প্রবহমান অন্তর্স্রোতের উষ্ণ রক্তধারায় ও উত্তাল আলোড়নে প্রকাশ পেয়েছিল মুক্তির আকাঙক্ষা। স্বাধীনতাকামী মানুষের জাগরিত চেতনার স্ফুরণে দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত করার জন্য বাঙালির সংবেদনশীল হৃদয়লোকে ঘটেছিল অদৃশ্য রক্তপাত। যা মার্চের অবরুদ্ধ অশ্রুর দিন হিসেবে কালের পরিক্রমায় দিনপঞ্জিতে প্রতি বছর ফিরে আসে। আমরা মার্চের সাহসী এবং প্রত্যয়দীপ্ত দিনগুলো স্মরণ করে বেদনার্ত এবং আলোড়িত হই। একটা নির্যাতিত জাতির চেতনার উন্মেষ ঘটেছিলো সেই ১৯৪৮ সালে। চেতনাটা ভাষা অন্তপ্রাণ এক ঝাঁক তরুণের,একটা জাতিসত্তার। মায়ের ভাষার জন্য অনিবার্য দায়বদ্ধতায় একটা জাতি সর্বস্ব বাজি রেখে একটা স্বাধীন দেশ ছিনিয়ে আনার বিরল কৃতিত্ব শুধু মাত্র বাঙালির ঋদ্ধ চেতনার ফসল । সেই দিন বাঙালি জেগেছিলো প্রতিবাদে, প্রতিরোধে। বহু স্বপ্নের রঙে রাঙানো সাধের জন্মভূমিকে শৃঙ্খল মুক্তির অভিযানে। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের সাফল্য ও গৌরবান্বিত অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার নেপথ্যে ছিল একটি প্রাণ, একটি শক্তি, একটি অভ্যুত্থান, একটি আন্দোলন ও একটি বিপ্লব। এ বিপ্লবের অগ্রসেনানী বঙ্গবন্ধু। যিনি প্রাণের অধিক ভালোবেসে ছিলেন মাতৃভূমিকে, ভালোবেসে ছিলেন বাংলার নিপীড়িত জনগণকে। “জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরীয়সী।” মা যেমন পুরো পৃথিবী সমান তেমনি দেশমাতৃকা ও আমাদের মাতৃসম। এ মা, মাটি , মানুষকে পাকিস্তানি জান্তার শোষণ শাসন থেকে রক্ষার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বজ্রকণ্ঠে ডাক দিয়েছিলেন ৭ মার্চের উদাত্ত ভাষণে। বাঙালি জাতিকে একটি মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। সংগ্রামের পথ পরিক্রমায় ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক আহবান স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে। বঙ্গবন্ধুর বজ্র কণ্ঠে ঘোষিত ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তারিখেই এদেশের কোটি কোটি মানুষ শুনতে পেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সেই আহ্বান। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করলেন, “ প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। ……. রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।”
বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক জীবনের প্রথম থেকেই তারুণ্যময় কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তাঁর সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ১৯৪০ থেকে তারুণ্যের ঔজ্জ্বল্যে ভরা সাংগঠনিক কর্মকান্ড এবং চিন্তা–চেতনার পরিধির ব্যাপকতায়। স্বাধীনতার মূলভিত্তি ছিল ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদ, যার ভিত্তি রচিত হয়েছিল ১৯৪৮ সাল হতে ১৯৫২ পর্যন্ত পরিচালিত ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন, ১৯৭০ এর সংসদ নির্বাচন, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এই সবই ছিল মওলানা ভাসানি, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দেলনের শস্যময় ফসল। ৫২ এর টগবগে তরুণ মুজিব ৬৬ এর ছয় দফাকে সংগে নিয়ে ৬৯ এ বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রাপ্ত হন এবং ৭১ এর ৭ মার্র্চের ভাষণে শোষিত–বঞ্চিত মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহ্বান জানান। বাঙালি জাতির হৃদয়ে সুপ্ত সেই দেশপ্রেম ও মর্যাদাবোধের আগুন তিনি প্রজ্বলিত করেছিলেন আপন হৃদয়ের উত্তাপ ও উজ্জ্বলতা দিয়ে।২৫শে মার্চের তিমির রাত্রির আঁধার কেটে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে পরিণত হন পুরোদুস্তুর এক জ্যোতির্ময় ব্যক্তিত্বে । নেতার আদেশে হাজার হাজার নিরস্ত্র জনতা নিঃশঙ্ক চিত্তে ঝাঁপিয়ে পড়ে সশস্ত্র হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে। স্বাধীনতা ও সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের ডাক দিয়ে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, যার প্রেরণায় ৯ মাস পরিচালিত হয়েছে । বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু । তিনি বাঙালির চেতনা। তিনি আবহমান বাংলার প্রাণপ্রবাহে বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্যের অবিসংবাদিত নেতা।
স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের মূলস্রোতে নির্মাণ করেছেন একটি নিখাদ দেশপ্রেমের আখ্যান। হাজার বছরের আশা–আকাঙক্ষা, পুঞ্জীভূত বেদনা–বিক্ষোভ ও আবহমান বাংলার ঐতিহ্যকে তিনি নিজের চেতনায় ধারণ করেছেন । তাঁর কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছিল বাঙালি জাতির সার্বিক মুক্তির আকাঙক্ষা। রাজনৈতিক–সামাজিক ধারাবাহিক বিবর্তনের মধ্যদিয়েই শেখ মুজিবুর রহমান ইতিহাসের মহানায়কে পরিণত হয়েছিলেন তাঁর ভাবনা–চিন্তা–আদর্শবোধ–জীবনদর্শন ইত্যাদি অনুষঙ্গের মাধ্যমে। তাঁর গতিময় সংগ্রামী চেতনা কোনো দিন বন্ধ হয়নি, অব্যাহত থেকেছে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। রাজনীতির অনেক আঁকাবাঁকা বন্ধুর পথে হেঁটেছেন অনুক্ষণ। বিবিসি কর্তৃক পরিচালিত একটি জনমত জরীপে বঙ্গবন্ধু বাঙালির চেতনার রাজ্যে মুকুটহীন রাজা, অপ্রতিদ্বন্দ্বী, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি মেধার উৎকর্ষে দীপ্যমান, চিন্তায় অগ্রগামী ,নির্ভীক, দৃঢ় প্রত্যয়ী এবং আজীবন স্রোতের বিপরীতে চলেছেন, নিজেই সৃষ্টি করেছেন নতুন স্রোতধারা।
আজকের এই দিনে লক্ষ –কোটি মানুষের কণ্ঠে, বাংলার আকাশে বাতাসে যার নামটি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সেই নাম শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধু বাংলার প্রতিটি মানুষের মনে প্রাণে, মানসে। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে লক্ষ –কোটি মুক্তিসেনার সম্মিলিত সত্তা একটি মোহনায় মিলিত হয়ে যে একটি সত্তা হয়েছিল তিনি শেখ মুজিব। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা মুজিব ছাড়া সম্ভব নয়। বায়ান্নতেও মুজিব একাত্তরেও মুজিব। বাঙালির ইতিহাসের পাতায় পাতায় মুজিব। তিনি সংগ্রাম, সাধনা এবং চরম ত্যাগের মাধ্যমে নির্মাণ করে গেছেন এক অলোকিত পথ, যে পথ ধরে আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছে বাঙালি জাতির বহু কাঙিক্ষত স্বাধীনতা। সর্বস্তরের, সব পেশার ও সব ধর্মের মানুষের সম্পৃক্ততায় সুদীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি আমাদের স্বপ্নের স্বাধীনতা।
বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ২৫শে মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটের ঘোষণাটিই ছিল আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা, তিনি বলেছিলেন “এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ, তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্য বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈনিকটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।” বঙ্গবন্ধুর এই বার্তা তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় সারা দেশে পাঠানো হয়। চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার বাণী সেই রাতেই সাইক্লোস্টাইল করে শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন। পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত বিবৃতিটি সর্বপ্রথম পাঠ করেন আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান। এরপর ২৭ মার্চ তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে যে ঘোষণা পাঠ করা হয় সেখানে উল্লেখ ছিল …ডিক্লেয়ার দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ। অন বিহাফ অব আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণার কপি ইংরেজি ও বাংলায় ছাপিয়ে হ্যান্ডবিল আকারে চট্টগ্রামে বিলি করা হয়। এই ঘোষণা টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার ও তৎকালীন ইপিআর–এর ওয়ারলেসের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই ঘোষণা প্রচারিত হয়।
সারা দেশে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ওই দিন বঙ্গবন্ধুকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাস ভবন থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যায়। ২৫শে মার্চ কাল রাত্রিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে একটি অভিযান চালিয়ে বাঙালি নিধনের ষড়যন্ত্রে মত্ত হয়েছিল। ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চ লাইট’–এর নামে একযোগে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ঢাকায় তখনকার পুলিশ (ইপিআর) সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবাসে। তারা গোলা নিক্ষেপ করে মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রাবাসে, হামলা চালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বস্তি এলাকায়। ইতিহাসের এই নির্মম নিধনযজ্ঞ রাতেই ছড়িয়ে পরে পুরো শহরে। ঘুমন্ত মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হায়নারা। সেই রাতেই রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে প্রতিরোধ শুরু হয়। ইপিআর সদস্যরাও প্রতিরোধের চেষ্টা করে জীবন দেন। ২৬ শে মার্চ থেকেই স্বাধীনতালাভের জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে সেনাসদস্যসহ ছাত্রশিক্ষক, দিনমজুর, কৃষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার জনসাধারণ দেশমাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে। ইতিহাসে ২৬ শে মার্চ বাঙালির শৃঙ্খল মুক্তির দিন। এ দিন গৌরব ও অহঙ্কারের দিন। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এ দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে ত্যাগের উজ্জীবনী মন্ত্রে একাত্তরের এ দিনে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এদেশের মানুষ। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বাধীনতার ঘোষণার ভিত্তিতেই ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। ২৬ মার্চ থেকেই চারদিকে যুদ্ধের ডামাডোল শুরু হয়েছিল। মা এবং মাতৃভূমিকে রক্ষার অঙ্গীকারে বাঙালিরা বীরদর্পে হৃদয়ের উষ্ণ রক্তধারায় মাতৃভূমিকে রঞ্জিত করেছিল।
বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শনের পরিব্যাপ্তি ছিল বাঙালি জাতিসত্তায়। জাতিসত্তায় বিশ্বাসী বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে ভীষণ ভালবাসতেন বলেই ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন দিনে দেশের মাটিতে পা রেখেই সেই ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে ছুটে যান লক্ষ লক্ষ অপেক্ষমাণ মানুষের সমাবেশে। ভাষণ দিতে গিয়ে উচ্চারণ করলেন: “ আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলেম, আমার মৃত্যু এসে থাকে যদি, আমি হাসতে হাসতে যাব। তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইব না এবং যাবার সময় বলে যাব, জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান। আজ আমি বাংলাদেশে ফিরে এসেছি। আমার ভাইদের কাছে, আমার মাদের কাছে। আমার বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন। বাংলার মানুষ আজ আমার স্বাধীন।”
বঙ্গবন্ধুর জীবন সাধনাই ছিল বাঙালির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি। এক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা দিলেন সোনার বাংলা গড়ার। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে আমৃত্যু পর্যন্ত মেহনতি মানুষের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিই তাঁর কাছে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু রাত–দিন পরিশ্রম করেছেন। এ জন্য জেল, জুলুম, হুলিয়া, ফাঁসির কাষ্ঠ পেরিয়ে প্রাণও দিলেন সপরিবারেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে। বীরের জাতির পিতা বীরের মতো মৃত্যুবরণ করেছেন। বিশ্ববাসী যে মানুষটিকে ক্যারিশমেটিক লিডার ভাবত, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য মঙ্গল দূত ভাবত, সেই দুর্লভ চরিত্রের মানুষটিকে কিছু অকৃতজ্ঞ, স্বাধীনতাবিরোধী ও ক্ষমতালিঞ্ঝু লোক দেশের উন্নয়নের শুভ সূচনাতেই হত্যা করে গোটা বাঙালি জাতিকে কলুষিত করেছে। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে এমন আরেকজন মহান নেতার আবির্ভাব ঘটেনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশের বঙ্গবন্ধু যখন আর্থ–সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির নবতর কর্মসূচি সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন সে সময় পরাজিত ও ঘৃণ্য অপশক্তি তাঁর ওপর চরম আঘাত হানে, তাঁকে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ও ইতিহাসের মহানায়ক হিসেবে ঠাঁই পেয়েছে এবং সময়ের ব্যাপ্তিতে বঙ্গবন্ধুর ঔজ্জ্বল্য সমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে স্বাধীন এ বাংলায়।
লেখক : উপ–রেজিস্ট্রার, ইউএসটিসি, কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক