পাকিস্তানিদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি ‘আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়ার্ক’ করেন বঙ্গবন্ধু


একাত্তরের ৭ মার্চ রেসকোর্স মাঠে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) বঙ্গবন্ধুর জনসভায় ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে চূড়ান্ত রূপে গৃহীত হয়। একই সাথে শুরু হয় স্বাধীনতা অর্জন সংক্রান্ত কার্যক্রম।
পরবর্তী সময়ে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরে ১৯৭২ সালে মার্কিন সাংবাদিক ডেভিট ফ্রস্টের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জাতীয় সংগীত চূড়ান্ত করার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন। সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু ফ্রস্টারকে বলেন, ৭ মার্চ যখন আমি ঢাকা রেসকোর্স মাঠে আমার শেষ মিটিং করি, ওই মিটিংয়ে উপস্থিত দশ লাখ লোক দাঁড়িয়ে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানকে স্যালুট জানায় এবং ওই সময়ই আমাদের জাতীয় সঙ্গীত চূড়ান্তরূপে গৃহীত হয়ে যায়।
বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, আমি জানতাম কী ঘটতে যাচ্ছে। তাই আমি ৭ মার্চ রেসকোর্স মাঠে চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করেছিলাম, এটাই স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য যুদ্ধ করার মোক্ষম সময়।
মার্কিন সাংবাদিক ডেভিট ফ্রস্টের সঙ্গে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত বিবরণ বাংলাদেশ ডকুমেন্টস দ্বিতীয় খণ্ডে আছে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের সঙ্গে যেমন আলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তেমনি সাথে সাথে তিনি কতগুলি আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়ার্কও করে যাচ্ছিলেন। ৭ মার্চের পর তিনি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নুরুল উল্লাকে তাঁর কাছে ডেকে পাঠান এবং বৈঠক করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতারা এ সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেন। বৈঠকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দীন আহমদও উপস্থিত ছিলেন।
স্বাধীনতার দলিল ৮ম খণ্ডের ২২ থেকে ২৩ পৃষ্ঠায় এ বৈঠকের কথা উল্লেখ আছে। বৈঠকে বঙ্গবন্ধু নুরুল উল্লাকে একটি ট্রান্সমিটার তৈরি করে দেওয়ার কথা বলেন। ওই ট্রান্সমিটারে তিনি শেষবারের মতো ভাষণ দেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন।
বঙ্গবন্ধু বলেন, নুরুল উল্লা আমাকে ট্রান্সমিটার তৈরি করে দিতে হবে। আমি যাবার বেলায় শুধু একবার আমার দেশবাসীর কাছে কিছু বলে যেতে চাই। তুমি আমায় কথা দাও, যেভাবেই হোক একটা ট্রান্সমিটার আমার জন্য তৈরি রাখবে। আমি শেষবারের ভাষণ দিয়ে যাব।
ড. মোহান্মদ হান্নান এ ব্যাপারে তার ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ গ্রন্থে লেখেন, বঙ্গবন্ধুর সাথে বৈঠকের পর নুরুল উল্লা সঙ্গে সঙ্গে এসে বার্তাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ কৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিক্ষকদের বলেন। শুরু হয়ে যায় স্বাধীন বাংলার প্রথম রেডিও ট্রান্সমিটার তৈরির কাজ। বিভাগীয় প্রধান ড. জহুরুল হকসহ প্রায় সকল শিক্ষক ৯ দিন কাজ করার পর একটি ট্রান্সমিটার তৈরি করেন। এর সমপ্রচার ক্ষমতা বা শক্তি ছিল প্রায় সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী। শর্ট ওয়েভে এর শব্দ ধরা যেত।’
এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ও মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত ‘বাংলাদেশ সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন’ গ্রন্থে বলা হয়, ‘মার্চের প্রথম থেকেই বঙ্গবন্ধু সশস্ত্র সংগ্রামের সমূহ সম্ভাবনা দেখতে পান। ১৯ মার্চ বঙ্গবন্ধু ও কর্নেল ওসমানি প্রথম আনুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা করে এ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি দিক প্রস্তুত করেন। ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অনেক অফিসারও এ সময় বঙ্গবন্ধুর সাথে গোপনে দেখা করেন।’

SUMMARY

920-1.jpg