১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ নিজের জীবন বাঁচাতে জনগণকে ছেড়ে আত্মগোপন করতে অস্বীকার করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যদিও এটি প্রথম ঘটনা নয়। এর আগেও তিনি এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। ২৬ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক জান্তা তাকে গ্রেপ্তার করে। খবর বাসসের।
লন্ডনভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক ডেইলি টেলিগ্রাফে ৩০ মার্চ ‘পাকিস্তানে আন্দোলন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ট্যাংক’ শিরোনামে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ কথা বলা হয়। ২৫ মার্চের কালরাতে একজন সহকর্মীর ফোন পেলেন বঙ্গবন্ধু। এই সহকর্মী তাকে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি জানান, রাত ১০টা থেকে তিন ব্যাটালিয়ন সৈন্য ঢাকা ঘিরে ফেলেছে। এর মধ্যে এক ব্যাটালিয়ন সাঁজোয়া যান, এক ব্যাটালিয়ান পদাতিক ও এক ব্যাটালিয়ন গোলন্দাজ সৈন্য রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারলেন একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে। তবে, তিনি বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে অস্বীকার করেন। তাঁর সেই সহকর্মীকে তিনি বললেন, তিনি যদি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান, তাহলে পাকিস্তানি সৈন্যরা তাঁকে খুঁজে বের করতে সারা ঢাকা শহর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবে।
পত্রিকাটিতে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত এম-২৪ ট্যাংক নিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনসহ সমগ্র ঢাকা মহানগরী ঘিরে ফেলে। পাকিস্তানি সৈন্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করে এবং ক্যাম্পাসে ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেয়। এখান থেকে আবাসিক হল এলাকায় কামানের গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে। একই সময় সৈন্যরা রাজারবাগ পুলিশ লাইন এলাকায় প্রবেশ করে। এখানে প্রথমে ট্যাংক থেকে গোলা নিক্ষেপ করা হয়।
সাংবাদিক সাইমন ড্রিং-এর লেখা এই নিবন্ধে বলা হয়, পাকিস্তানের সৈন্যদের অপর একটি ইউনিট বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ঘিরে ফেলে। এ সময় বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারছিলেন, যেকোনো মুহূর্তে তাঁর বাড়ি আক্রান্ত হবে। তিনি বাড়ির গৃহকর্মীদের এবং তাঁর নিরাপত্তা কর্মী ছাড়া বাড়ির সকলকে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেন। এক প্রতিবেশীর উদ্ধৃতি দিয়ে এতে বলা হয়, রাত ১টা ১০ মিনিটে একটি ট্যাংক, একটি সাঁজোয়া যান এবং এক ট্রাক সৈন্য রাস্তায় নামে এবং বাড়ি লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে থাকে।
একজন পাক সেনা কর্মকর্তা সামনে এগিয়ে গিয়ে ইংরেজিতে বঙ্গবন্ধুকে নেমে আসতে বলেন। পাক সেনা কর্মকর্তা বলেন, শেখ, ইউ শুড কাম ডাউন। শেখ মুজিব বাড়ির বেলকনিতে বেরিয়ে এসে জবাবে বললেন, ইয়েস, আমি প্রস্তুত। তবে গুলি করার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনারা আমাকে প্রয়োজনে টেলিফোনে ডাকতে পারতেন। আমি চলে যেতাম। এরপর পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা বাড়ির বাগানে হেঁটে আসেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ইউ আর অ্যারেস্ট। তারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গেলেন। এ সময় তিনজন গৃহকর্মী, একজন সহযোগী ও তাঁর একজন দেহরক্ষী সঙ্গে ছিল।