১৬ মার্চ, ২০১৯
একাত্তরের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের বৈঠক হয়। বৈঠকে বঙ্গবন্ধু সামরিক আইন প্রত্যাহার, বাঙালিদের ওপর গুলিবর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড বন্ধসহ বিভিন্ন নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে এর জোরালো প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার দাবি করেন। ধানমণ্ডির বাসভবন থেকে বেলা পৌনে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট হাউসের উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় বিপুল সংখ্যক মানুষ জাতীয় নেতাকে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। বঙ্গবন্ধুও এ সময় তাঁর কর্মী, সমর্থক ও ভক্তদের প্রতি ‘জয় বাংলা’ বলে গাড়িতে ওঠেন। এ সময় অপেক্ষমাণ বিদেশি সাংবাদিকদেরও জয় বাংলা বলে বঙ্গবন্ধুকে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায়। তবে বাঙালি হত্যার প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে বঙ্গবন্ধু অংশ নেন ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠকে। বেলা ১১টার আগে আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান সাদা মোটরগাড়িতে করে প্রেসিডেন্ট ভবনে (বর্তমানে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধা) গেলে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান। বঙ্গবন্ধু কালো পতাকা উড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ভবনে পৌঁছলে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালি জাতির এই নেতাকে স্বাগত জানিয়ে আলোচনার কক্ষে নিয়ে যান। বেলা ১১টায় রুদ্ধদ্বার কক্ষে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও সংসদীয় ক্ষমতার অধিকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে শুরু হয় একান্ত আলোচনা। বৈঠক চলে আড়াই ঘণ্টা। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তার বাসভবনের বারান্দার সিঁড়ি পর্যন্ত এসে বঙ্গবন্ধুকে বিদায় জানান।
বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ভবনের প্রধান ফটকে পৌঁছলে সেখানে উপস্থিত দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীরা তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরেন। বঙ্গবন্ধু স্বেচ্ছায় গাড়ি থেকে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি রাজনৈতিক ও অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আরও অলোচনা হবে। এটি দু’এক মিনিটের ব্যাপার নয়। এজন্য সময়ের দরকার। আলোচনা চলবে। কাল সকালে আমরা আবার বসছি। এর চেয়ে বেশি আমার বলার নেই।’
প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরাসরি ধানমণ্ডির বাসভবনে ফিরে বঙ্গবন্ধু দলের শীর্ষস্থানীয় সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। গভীর রাত পর্যন্ত এই বৈঠক চলে। দু’দফা সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার ফাঁকে বিকেলে বঙ্গবন্ধু তাঁর বাসভবনে কনভেনশন মুসলিম লীগ প্রধান ফজলুল কাদের চৌধুরীকে সাক্ষাত দেন।