বঙ্গবন্ধুর সেই স্মৃতি আজো মনে পড়ে

মোহাম্মদ জহির 
আমার বাবা স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা দৈনিক আজাদীর প্রয়াত সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ তখন জাতীয় সংসদের সদস্য। ছোট হলেও জানতাম স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে নিত্য যোগাযোগ। আমার খুব শখ বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখা। বাবার কাছে আবদার করলে তিনি কথা দিলেন একদিন বঙ্গবন্ধুর কাছে আমাকে নিয়ে যাবেন। তখন থেকে আমার মধ্যে একটা অস্থিরতা তৈরি হয় কখন বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা হবে সে ভাবনায়। অবশেষে সে মাহেন্দ্রক্ষণটি এসে গেল। বাবা আমাকে একদিন গণভবনে নিয়ে গেলেন। এক সময় হাজির হলাম বিশালদেহি সেই মানুষ যাকে এতদিন ছবিতে দেখে দেখে সামনাসামনি দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি তাঁর সামনে। বাবা পরিচয় দিয়ে বললেন, বঙ্গবন্ধু ও আপনাকে দেখার জন্য এসেছে। তখন বঙ্গবন্ধু আমার মাথায় হাতবুলিয়ে আদর মাখা কণ্ঠে নাম জিজ্ঞেস করলেন, কোন ক্লাসে পড়ি জানতে চাইলেন। সে সময় ছিল রমজান মাস। ইফতারির সময় হলে বঙ্গবন্ধু আমাদের নিয়ে ইফতারি করতে বসলেন। বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে আমাকে মুড়ি দিয়ে নিজে ছোলামুড়ির সাথে পেঁয়াজু খেতে থাকেন। রূপকথায় পড়েছি রাজা বাদশাদের খাবারের টেবিলে থাকে এলাহি আয়োজন। আর বঙ্গবন্ধু দেশের প্রধানমন্ত্রী (আমার কাছে তিনি দেশের রাজা-বাদশা) হয়ে সাধারণ মানুষের খাবার খাচ্ছেন! সেই বালকবেলায় আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। ইফতারি শেষে বঙ্গবন্ধুর সাথে নামাজ পড়লাম। বিদায় বেলায় তিনি আমার মাথায় আদরমাথা হাতবুলিয়ে বিদায় জানালেন। আমার মানসপটে এখনো সেই মধুর স্মৃতি জ্বল জ্বল হয়ে জ্বলছে। এখনো আমি মাথায় বঙ্গবন্ধুর হাতের স্পর্শ অনুভব করি শিহরিত হই। আরো একটি স্মৃতি আমার আছে। বাবাকে বঙ্গবন্ধু গভর্ণর নিয়োগ দিয়েছেন। রাঙামাটির বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের পর বঙ্গবন্ধুকে রাউজান কলেজমাঠে রাউজানের তখনকার এমপি আমার বাবার উদ্যোগে রাউজানবাসীর পক্ষ থেকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সে সময় বঙ্গবন্ধুকে ফুল দিয়ে বরণ করতে যে স্কুল বালক বালিকাদের নির্বাচন করা হয় তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। সেদিনও বঙ্গবন্ধু আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে শুভাশীষ দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সেদিনের হাতের স্পর্শ আমি এখনো পাই। জীবনের বহু মধুর স্মৃতি আছে। সব স্মৃতি ম্লান করে সবসময় অনবদ্য হয়ে থাকে বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার এই দুটি স্মৃতি। ১৭মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবসে এই মহান ব্যক্তির প্রতি জানায় গভীর শ্রদ্ধা।

SUMMARY

911-1.jpg