নির্মমতার সাক্ষী শোকাবহ আগস্ট


আগস্ট। বাঙালি জাতির জীবনে বেদনাবিধুর ও শোকাবহ মাস। এ মাসটি এলেই বাঙালির জীবনে নেমে আসে শোকের ছায়া। এ মাসের ১৫ তারিখে নির্মম হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি তাদের পিতাকে স্বপরিবারে হারিয়েছে; ১৭ আগস্ট সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলার মতো জঘন্য ঘটনা ঘটেছে। ২১ আগস্ট জাতির পিতার কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা হয়, তাতে ২৪ জন নিহত হয়।

এই শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিন আজ। ১৯৭৫ সালের এ মাসেই বাঙালি হারিয়েছে তার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল এবং পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।
পৃথিবীর এই ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মনি, তার সহধর্মিনী আরজু মনি ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন।

৭৫’র ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নোবেল জয়ী পশ্চিম জার্মানির নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।

ভারত বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদ সি চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরা হয়েছে।

দ্য টাইমস অব লন্ডনের ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় বলা হয় ‘সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সবসময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই।

একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় লেখা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’

এরপর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড ছুড়ে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল জাতির জনকের কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে গেলেও ওই ঘটনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী, আওয়ামী লীগের ওই সময়ের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা বাঙালির জীবনে সন্ত্রাসের তিলক লাগিয়ে দেয়। সেদিন মুন্সিগঞ্জ ছাড়া দেশের ৬৩ জেলায় বোমা হামলা করে জেএমবি। এদিন থেকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়। নড়েচড়ে বসে গোটা বিশ্ব। কালিমা লেপন হয় বাঙালির আত্মপরিচয়ে। এদিন একযোগে পাঁচ শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ, নিহত মানুষের স্বজনদের আর্তনাদ ও আহত মানুষের কান্নায় বাঙালির মনে ক্ষোভ ও ঘৃণা আরো তীব্র হয়ে উঠেছিল।

SUMMARY

902-1.jpg