জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা ও গণহত্যার প্রতিবাদে ১৯৭১ সালের ৪মার্চ আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঢাকাসহ সারা বাংলায় সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। এতে ভেঙে পড়ে প্রদেশের বেসামরিক শাসনব্যবস্থা। হরতাল চলাকালে খুলনায় সেনাবাহিনীর গুলিতে ৬ জন শহীদ হন। আর চট্টগ্রামে দু’দিনে প্রাণ হারায় ১২১ জন।
৪ মার্চ, ১৯৭১। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নে বাঙালির হৃদয়ে দানা বাঁধতে থাকা পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ক্রমেই এক দফা তথা স্বাধীনতার দাবিতে রূপ নেয়। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা ও গণহত্যার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয় এদিন। হরতালে পূর্ব পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। হরতালে খুলনায় সেনাবাহিনীর গুলিতে ৬ জন শহীদ হন। আর চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২১ জনে।
গুলিতে আহতদের প্রাণ রক্ষায় শত শত নারী পুরুষ সেদিন বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে ছুটে আসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে। এদিনই প্রথম রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রকে ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র’ এবং পাকিস্তান টেলিভিশন’কে ‘ঢাকা টেলিভিশন’ হিসেবে সম্প্রচার শুরু করা হয়। একইসঙ্গে বেতার-টেলিভিশন শিল্পীরা আন্দোলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেন। পাক বাহিনীর ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় এমন বীরত্বের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে, তাদের অভিনন্দন জানান। পাশাপাশি ৫ ও ৬ মার্চ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতালের ডাক দেন।
করাচী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল আসগর খান দেশকে বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান। এছাড়া, পিডিপি প্রধান নূরুল আমীন এক বিবৃতিতে ১০ মার্চ রাজনৈতিক নেতাদের সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে ঢাকায় দ্রুত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবানের দাবি তোলেন প্রেসিডেন্টের প্রতি।
এমন, নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্যদিয়ে ৪ মার্চ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে জায়গা করে নেয়।