১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানে কারাবাস শেষে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। জাতির জনক নিজেই তাঁর এ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে। নয় মাসের সশস্ত্র ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন হলেও প্রকৃতপক্ষে তার দেশে ফিরে আসার মধ্যদিয়েই বাঙালির বিজয় পূর্ণতা লাভ করেন, এমনই জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গ্রেপ্তার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আটক রাখা হয় পাকিস্তান কারাগারে। এদিকে, শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। টানা ন’ মাসের যুদ্ধ শেষে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বর্বর পাকিস্তানিদের কারাগারে তখনও বন্দি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের অব্যাহত চাপে অবশেষে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি ছাড়া পান বঙ্গবন্ধু। এদিন সকালে তাঁকে তুলে দেয়া হয় লন্ডনের একটি বিমানে।সেখানে পৌঁছ তিনি তৎকালিন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে ব্রিটেনের বিমানবাহিনীর একটি বিমানে ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন বঙ্গবন্ধু।
১০ জানুয়ারি সকালে পৌঁছান দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, তিন বাহিনীর প্রধান ও সে দেশের জনগণের কাছ থেকে লাভ করেন উষ্ণ সংবর্ধনা।
সেদিন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের গণহত্যার ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেই স্মৃতিচারণ করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য।
বিকেল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করেন সবার ত্যাগের কথা, সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেন দেশ গড়ার কাজে।
ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত ঢল নামে জনতার। বিকেলে জনসমুদ্র থেকে তেজোদীপ্ত ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে অবিসংবাদিত প্রিয় নেতাকে ঘিরে— যখন বাতাসে ভাসছিল স্বাগত ধ্বনি। তখনই মঞ্চে এসে দরাজ কণ্ঠের মহাকবি শেখ মুজিবুর রহমান আপ্লুত হয়ে পড়েন।