শুরু হয়েছে শোকের মাস। এই মাসেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কে সপরিবারে হত্য করা হয়। আজ ৬ আগস্ট। জাতি মহান এই নেতাকে স্মরণ করে। জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে শোকের কর্মসূচির মাধ্যমে পুরো মাস তাকে স্মরণ করে। পথে-ঘাটে-পাড়া-মহল্লায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান, মিছিল-স্লোগান ও তার ভাষণ শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু জাতীয় জীবনে তার আদর্শের চর্চা চোখে পড়ে খুব কমই বলে অনেকেই অভিযোগ করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার অপর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার বাবা মায়ের কাছে আদরের নাম ‘খোকা’। শেখ মুজিবুর রহমানকে বলা হয় ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’, ‘স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা’, ‘জাতির পিতা’, ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘বাংলাদেশের জনক’সহ আরও অনেক নামে। কিন্তু সার্বিকভাবে তিনি একটি আদর্শের নাম। যে আদর্শে উদ্ভূত হয়ে বাঙালি জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, বিশ্বের বুকে জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
আমরা সবাই জানি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে। বাঙালি জাতিকে দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্ত করে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরতে। আর এসব করতে গিয়ে তিনি যা যা করেছেন, সেটাই তার আদর্শ। এ আদর্শের মূল কথা ত্যাগ আর সংগ্রাম। যেখানে ব্যক্তিস্বার্থ, লোভ, মোহ, পদ-পদবির ঊর্ধ্বে উঠে নিজের বিশ্বাসে অটল থেকেছিলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে খুব সংক্ষেপে তুলে ধরা যায় এভাবে- ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়া, অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ-প্রগতিশীল রাষ্ট্র গড়ে তোলা আর মানুষের জন্য ভালোবাসা। আত্মসংযম, আত্মশুদ্ধি, আত্মসমালোচনা, সমাজের সর্বস্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সমাজ থেকে দুর্নীতি নির্মূল ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। আজীবন তিনি বাংলার মানুষের কথা চিন্তা করেছেন।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন ত্যাগী নেতা। সারা জীবন ত্যাগ করে গেছেন। বাংলার মানুষের জন্য ছিলেন নিবেদিত এক প্রাণ। বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপোষহীন নেতা। তার অসংখ্যা প্রমাণ রেখে গেছেন তিনি। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ডাকা ধর্মঘটে নেতৃত্বদানের অভিযোগে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে মুচলেকা দিয়ে ছাত্রত্ব ফেরত পাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু রাজি হননি। এদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে পারা সবসময়ই সম্মান ও গর্বের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া প্রায় সব ছাত্রছাত্রীর স্বপ্ন। কিন্তু নিজের বিশ্বাস ও কাজে আস্থাশীল ছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধু মুচলেকা দিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব ফেরত নেননি।
জাতির জনক গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের প্রশ্নে আপস করেননি বলেই তার জীবদ্দশায় তাকে ৪ হাজার ৬৭৫ দিন কারাগারে কাটাতে হয়েছে। অথচ পাকিস্তানি শাসকদের লোভনীয় প্রস্তাব মেনে নিয়ে তিনি অনায়াসেই বড় পদ নিয়ে আরাম-আয়েশে বিলাসী জীবন-যাপন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি কখনও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।