কর্নেল শাফায়াত জামিল (অব.)
আমার বাইরের ঘরের দরজায় ধাক্কাধাক্কিতে ঘুম ভাঙতেই আমি ভাবলাম, কী হচ্ছে? এত সকালে দরজার ওপর এ রকম ধাক্কাধাক্কি! দ্রুত পায়ে হেঁটে গিয়ে দরজা খুলে দিই। দিতেই যা দেখলাম তার জন্য তৈরি ছিল না সদ্য ঘুমভাঙা চোখ। আমার একটু দূরে দাঁড়িয়ে মেজর রশিদ (পরে লে. ক. অব.)। সশস্ত্র। তার পাশে আরও দুজন অফিসার। প্রথমজন মেজর হাফিজ (আমার ব্রিগেড মেজর), অন্যজন লে. কর্নেল আমিন আহমেদ চৌধুরী (আর্মি হেডকোয়ার্টারে কর্মরত)। তাদের কাছে কোনো অস্ত্র নেই। মনে হলো এ দুজনকে জবরদস্তি করে ধরে আনা হয়েছে। আমার চমক ভাঙার আগেই রশিদ উচ্চারণ করল ভয়ংকর একটি বাক্য, ‘উই হ্যাভ কিল্ড শেখ মুজিব’। অস্বাভাবিক একটা কিছু যে ঘটেছে, সেটা আগন্তুকদের দেখেই বুঝেছিলাম। তাই বলে এ কী শুনছি! আমাকে আরও হতভম্ব করে দিয়ে রশিদ বলে যেতে লাগল, ‘উই হ্যাভ টেকেন ওভার দ্য কনট্রোল অব দ্য গভর্নমেন্ট আন্ডার দ্য লিডারশিপ অব খন্দকার মোশতাক।...আপনি এই মুহূর্তে আমাদের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশনে যাবেন না। কোনো পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া মানেই গৃহযুদ্ধের উসকানি দেওয়া।’ রশিদের শেষ দিকের কথাগুলোতে হুঁশিয়ারির সুর ছিল।
মেজর রশিদ ছিল আমার অধীনস্থ আর্টিলারি রেজিমেন্টটির অধিনায়ক। মাসখানেক আগে সে ভারত থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশে ফেরে। তার পোস্টিং হয় যশোরে। কয়েক দিন পরেই সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ মেজর রশিদের পোস্টিং পাল্টে তাকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে আসেন। উল্লেখ্য, এ ধরনের পোস্টিং সেনাপ্রধানের একান্তই নিজস্ব দায়িত্ব।
কী সর্বনাশ ঘটে গেছে এ কথা ভেবে স্তম্ভিত আমি! এরই মধ্যে চোখে পড়ল একটু দূরে রাস্তায় দাঁড়ানো একটা ট্রাক আর একটা জিপ। গাড়ি দুটো বোঝাই সশস্ত্র সৈন্যে। রশিদের কথা শেষ হতে না-হতেই পেছনে বেজে উঠল টেলিফোন। দরজা থেকে সরে গিয়ে রিসিভার তুললাম। ভেসে এল সেনাপ্রধান শফিউল্লাহর কণ্ঠ, ‘শাফায়াত, তুমি কি জানো বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কারা ফায়ার করেছে?...উনি তো আমাকে বিশ্বাস করলেন না।’ বিড়বিড় করে একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে লাগলেন সেনাপ্রধান। তাঁর কণ্ঠ বিপর্যস্ত। টেলিফোনে তাঁকে একজন বিধ্বস্ত মানুষ মনে হচ্ছিল। আমি বললাম, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না, তবে এইমাত্র মেজর রশিদ এসে আমাকে জানাল, তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণভারও গ্রহণ করেছে।’ রশিদ যে আমাকে কোনো পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার বিরুদ্ধে হুমকিও দিয়েছে, সেনাপ্রধানকে তাও জানালাম। সেনাপ্রধান তখন বললেন, বঙ্গবন্ধু তাকে টেলিফোনে জানিয়েছেন যে শেখ কামালকে আক্রমণকারীরা সম্ভবত মেরে ফেলেছে। তবে সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা শেষে তাঁর অবস্থান কী, সে সম্পর্কে কিছুই বুঝতে পারলাম না। প্রতিরোধ-উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ বা নির্দেশ কিছুই পেলাম না।
আমার মাথায় তখন হাজার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। দ্রুত আমার ব্রিগেডের তিনজন ব্যাটালিয়ন কমান্ডারকে ফোন করে তাদেরকে স্ট্যান্ড টু (অপারেশনের জন্য প্রস্তুত) হতে বললাম। বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে আমার অধীনস্থ প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিলাম। ব্যারাকে শান্তিকালীন অবস্থায় কোনো ইউনিটকে অভিযানের জন্য তৈরি করতে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন। তার আগে কিছুই করা সম্ভব নয়।
ফোন রেখে ড্রইং রুমে এসে দেখি, মেজর হাফিজ (আমার ব্রিগেড মেজর) একা। রশিদ আর তার সঙ্গের আরেকজন অফিসার এরই মধ্যে চলে গেছে। রাস্তায় দাঁড়ানো গাড়ি দুটোও উধাও। আমার পরনে তখন স্রেফ লুঙ্গি-গেঞ্জি। মানসিক পরিস্থিতি এমন যে ওই অবস্থাতেই বেরোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হাফিজ আমাকে থামাল, ‘স্যার, আপনি ইউনিফর্ম পরে নিন।’ ওর কথায় যেন সংবিৎ ফিরল আমার। ঝটপট ইউনিফর্ম পরে তৈরি হয়ে নিলাম।
হাফিজকে সঙ্গে করে বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম। সেদিন আমার বাড়ির গার্ড ছিল মেজর রশিদের ইউনিটের কয়েকজন সদস্য। কে জানে এটা নিছকই কাকতালীয় ছিল কি না! গার্ডদের পেরিয়ে রাস্তায় পা রাখলাম। গাড়িটাড়ি কিছু নেই। সিদ্ধান্ত নিলাম প্রথমে ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে যাব। বাসা থেকে হেডকোয়ার্টার বেশি দূরে নয়। হাঁটতে হাঁটতেই সিদ্ধান্ত বদলে ফেললাম। ঠিক করলাম, আগে যাব ডেপুটি চিফ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের বাসায়। ডেপুটির কাছ থেকে কোনো নির্দেশ বা উপদেশ পাওয়া যেতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে ছিলাম। একসঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি। তাঁর ওপর আমার একটা আস্থা ও বিশ্বাস ছিল। ডেপুটি চিফ জিয়ার বাসভবন আমার বাসা ও ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারের মাঝামাঝি। জিয়ার বাসার দিকেই পা চালালাম দ্রুত। কিছুক্ষণ ধাক্কাধাক্কি করার পর দরজা খুললেন ডেপুটি চিফ স্বয়ং। অল্প আগে ঘুম থেকে ওঠা চেহারা। স্লিপিং ড্রেসের পাজামা আর স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে। একদিকের গালে শেভিং ক্রিম লাগানো, আরেক দিক পরিষ্কার। এত সকালে আমাকে দেখে বিস্ময় আর প্রশ্ন মেশানো দৃষ্টি তাঁর চোখে। খবরটা দিলাম তাঁকে। রশিদের আগমন আর চিফের সঙ্গে আমার কথোপকথনের কথাও জানালাম। মনে হলো জিয়া একটু হতচকিত হয়ে গেলেন। তবে বিচলিত হলেন না তিনি। নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, ‘So what, President is dead? Vice-president is there. Get your troops ready. Uphold the Constitution. ’ সেই মুহূর্তে যেন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় ধ্বনিত হলো তাঁর কণ্ঠে। ডেপুটি চিফের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম। আমাদের এখন একটা গাড়ি দরকার।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের সেই বাড়ি। ছবি: সংগৃহীত
তিন প্রধান রওনা হলেন রেডিও স্টেশনের দিকে
মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের বাসার গেট থেকে বেরিয়েই দেখি আর্মি হেডকোয়ার্টার থেকে ডেপুটি চিফের জন্য জিপ আসছে। জিপটাকে থামিয়ে কমান্ডিয়ার (অধিগ্রহণ) করলাম। তারপর রওনা হলাম ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারের দিকে। ওদিক থেকে একটানা কিছু গুলির আওয়াজ শুনলাম। একটু সামনে যেতেই দেখলাম একটা ট্যাংক দাঁড়িয়ে আছে ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারের সামনের মোড়টায়। ট্যাংকটার ওপর মেশিনগান নিয়ে বেশ একটা বীরের ভাব করে বসে আছে মেজর ফারুক (পরে লে. কর্নেল অব.)। একটু দূরে এমটি পার্কে আমার ব্রিগেডের এসঅ্যান্ডটির (সাপ্লাই অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট) কয়েকটি সারিবদ্ধ যান। অবস্থাদৃষ্টে নিরস্ত্র অবস্থায় অরক্ষিত হেডকোয়ার্টারে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বুঝতে পারলাম। সে জন্য পদাতিক ব্যাটালিয়ন দুটোর (প্রথম ও চতুর্থ বেঙ্গল) প্রস্তুতি ত্বরান্বিত করার জন্য ইউনিট লাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। এই দুটি ব্যাটালিয়ন আমার হেডকোয়ার্টার সংলগ্ন ছিল।
ইউনিট লাইনে গিয়ে শুনি, ফারুক কিছুক্ষণ আগে ট্যাংকের মেশিনগান থেকে গাড়িগুলোর ওপর ফায়ার করেছে। ওই ফায়ারিংয়ে এসঅ্যান্ডটির কয়েকজন সেনাসদস্য আহত হয়। কয়েকটি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটা সরু রাস্তার দুই পাশে প্রথম ও চতুর্থ বেঙ্গলের অবস্থান। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, ব্যাটালিয়ন দুটোর মাঝখানে তিনটি ট্যাংক অবস্থান নিয়ে আছে। ব্রিগেড সদর দপ্তরের সামনেও ফারুকের ট্যাংকসহ দুটো ট্যাংক দেখেছিলাম। আমার মনে হলো, ব্যাটালিয়ন দুটোকে ঘিরে রাখা হয়েছে। জানতে পারলাম, প্রয়োজনে আমার ব্রিগেড এলাকায় গোলা নিক্ষেপের জন্য মিরপুরে ফিল্ড রেজিমেন্টের আর্টিলারি গানগুলোও তৈরি রয়েছে। ট্যাংকগুলোতে যে কামানের গোলা ছিল না, আমরা তখন জানতাম না। জানতে পারি আরও পরে, দুপুরে।
ফোনে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম, সে অনুযায়ী প্রথম ও চতুর্থ বেঙ্গলের সদস্যরা অপারেশনের জন্য তৈরি হচ্ছিল। প্রথম বেঙ্গলের অফিসে গেলাম; কিন্তু সেখানে যা দেখলাম, তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। আশপাশের জোয়ানদের অনেককেই দেখলাম রীতিমতো উল্লাস করছে। তারা সবাই লাগোয়া টু ফিল্ড রেজিমেন্টের সৈনিক যারা ছিল মেজর রশিদের অধীনে। তবে এই রেজিমেন্টের কর্মরত প্রায় ১৩শ সৈনিকের মধ্যে মাত্র শ খানেক সৈন্যকে মিথ্যা কথা বলে ভাঁওতা দিয়ে ফারুক-রশিদরা ১৫ আগস্টের এ অপকর্মটি সংঘটিত করে। ওই রেজিমেন্টেরই কয়েকজন অফিসার দেয়াল থেকে বঙ্গবন্ধুর বাঁধানো ছবি নামিয়ে ভাঙচুর করছিল। এসব দেখে মনে পড়ল একটি প্রবাদ-Victory has many fathers, defeat is an orphan. সবকিছু দেখে খুবই মর্মাহত হলাম। আমার অধীনস্থ একজন সিওকেই (কমান্ডিং অফিসার) কেবল বিমর্ষ মনে হলো।
এরই মধ্যে জোয়ানরা আমার নির্দেশমতো তৈরি হচ্ছিল। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে সিজিএস (চিফ অব জেনারেল স্টাফ) ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ইউনিট লাইনে এসে উপস্থিত হলেন। তিনি প্রথম বেঙ্গলের অফিসে এসে আমাকে বললেন, সেনাপ্রধান তাকে পাঠিয়েছেন সমস্ত অপারেশন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিয়ে। এখন থেকে ৪৬ ব্রিগেডের সব কর্মকাণ্ড সেনাপ্রধানের পক্ষে তাঁর (সিজিএস) নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হবে। সেনাপ্রধানের নির্দেশে সিজিএস এভাবে আমার কমান্ড অধিগ্রহণ করলেন। আমার আর নিজের থেকে কিছুই করার রইল না। এভাবে আমার কমান্ড অধিগ্রহণ করার কারণ একটাই হতে পারে, সেনাপ্রধান আমাকে বিশ্বাস করতে পারেননি। তিনি হয়তো এমন মনে করেছিলেন যে, আমি অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত। এসব কারণেই হয়তো বিদ্রোহ শুরু হওয়ার খবর রাত সাড়ে চারটায় জেনেও সবার সঙ্গে যোগাযোগের পর সকাল ছয়টায় আমাকে ফোন করেন তিনি। ততক্ষণে সব শেষ। উল্লেখ্য, ১৫ আগস্ট সারা দিনে টেলিফোনে সেনাপ্রধানের সঙ্গে আমার ওই একবারই মাত্র কথা হয়।
আমার কাছে এটা খুবই দুঃখজনক মনে হয়েছে যে, সেনাপ্রধান বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের অনেক আগে অভ্যুত্থানকারীদের অভিযান শুরু হওয়ার খবর পেলেও তার কাছ থেকে না শুনে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের খবর আমাকে শুনতে হলো অভ্যুত্থানকারীদের অন্যতম নেতা মেজর রশিদের কাছ থেকে। এটা আজও আমার জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা।
সকাল আনুমানিক সাড়ে আটটার সময় প্রথম বেঙ্গলের অফিসের সামনে এসে দাঁড়াল একটা বিরাট কনভয়। গাড়ি থেকে নেমে এলেন সেনাপ্রধান শফিউল্লাহ, উপপ্রধান জিয়া, মেজর ডালিম ও তার অনুগামী কয়েকজন সৈনিক। ডালিম ও এই সৈনিকদের সবাই ছিল সশস্ত্র। তাদের পেছনে পেছনে নিরস্ত্র কয়েকজন জুনিয়র অফিসারও আসেন। একটু পর এয়ার চিফ এ কে খন্দকার এবং নেভাল চিফ এম এইচ খানও এসে পৌঁছলেন। এরই মধ্যে বিদ্রোহ দমনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছি আমরা। আমি আশা করেছিলাম, বিমানবাহিনীর সহায়তায় সেনাসদরের তত্ত্বাবধানে বিদ্রোহ দমনে একটি সমন্বিত আন্তঃবাহিনী অভিযান পরিচালনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ ট্যাংক বাহিনীর বিরুদ্ধে পদাতিক সেনাদল এককভাবে কখনোই আক্রমণযুদ্ধ পরিচালনা করে না। সে ক্ষেত্রে পদাতিক সেনাদলের সহায়ক-শক্তি হিসেবে বিমান অথবা ট্যাংক বাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন।
অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, সেনাপ্রধানের তত্ত্বাবধানে বিদ্রোহ দমনের কোনো যৌথ পরিকল্পনা করা হলো না, যদিও তিন বাহিনীর প্রধানই একসঙ্গে ছিলেন। মিনিট দশেক পর সেনাপ্রধান সবাইকে নিয়ে রেডিও স্টেশনের উদ্দেশ্যে চলে গেলেন। সেনাপ্রধান এবং তাঁর সঙ্গীরা প্রথম বেঙ্গলে মাত্র মিনিট দশেক ছিলেন। এরই মধ্যে আমি সেনাপ্রধানের সঙ্গে পরামর্শ ও তাঁর অনুমতিক্রমে জয়দেবপুরে অবস্থানরত একটি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবে তাত্ক্ষণিকভাবে লে. কর্নেল আমিন আহমেদ চৌধুরীর পোস্টিংয়ের ব্যবস্থা করলাম। অফিসারটি ওই ব্যাটালিয়নেরই সাবেক অফিসার ছিলেন। সেই সংকটময় মুহূর্তে ব্যাটালিয়নটিতে কোনো সিনিয়র অফিসার না থাকায় আমি এ ব্যবস্থা নিই। কথাটা এ জন্য বলছি যে, সেনাপ্রধান তাঁর কয়েকটি সাক্ষাত্কার ও রচনায় উল্লেখ করেছেন যে, তিনি আমাকে সেদিন প্রথম বেঙ্গলের ইউনিট লাইন বা ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে দেখেননি বা আমি তাঁর কাছ থেকে দূরত্ব রেখে চলছিলাম।
ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে ফিরলেন ঘণ্টাখানেক পর। তিনি আমার অফিসে বসে সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে লাগলেন। ইতিমধ্যেই সারা জাতিকে স্তম্ভিত করে দিয়ে সেনাপ্রধান অন্যদের নিয়ে একটি অবৈধ ও খুনি সরকারের প্রতি বেতারে তাঁর সমর্থন ও আনুগত্য ঘোষণা করে বসেন। তাঁর এই ভূমিকার ফলে আমাদের বিদ্রোহ দমনের সকল প্রস্তুতি অকার্যকর ও অচল হয়ে পড়ল। কার্যত আমাদের আর কিছুই করার থাকল না এবং অভ্যুত্থানকে তখনকার মতো মেনে নিতে বাধ্য হলাম। রেডিওতে সেনাপ্রধানের আনুগত্যের ঘোষণা শুনে সেনানিবাসের প্রায় সমস্ত অফিসার আমার ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে এসে ভিড় করল। তারা সবাই এ অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়েছিল যে সমগ্র সেনাবাহিনীই এ নৃশংস ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। একজন সিনিয়র অফিসার তো তার অধীনস্থ এক নিতান্ত জুনিয়র অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে ৩২ নম্বরের বাড়ির মূল্যবান সামগ্রী লুটপাটে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। কয়েক দিন পর অন্যান্য জুনিয়র অফিসারের মুখে এই লুটপাটের ঘটনা শুনি।
এরপর বঙ্গভবন থেকে আদিষ্ট হয়ে খালেদ মোশাররফ দিনভর বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক সংস্থা, ইউনিট ও সাব-ইউনিটের প্রতি একের পর এক নির্দেশ জারি করছিলেন। তখনকার মতো সব কিছুরই লক্ষ্য ছিল বিদ্রোহের সাফল্যকে সংহত ও অবৈধ মোশতাক সরকারের অবস্থানকে নিরঙ্কুশ করা। অভ্যুত্থানকারীদের পক্ষে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এই কাজগুলো সম্পাদন করা হয়েছিল সেদিন। ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সেনাসদরের কোনো ভূমিকা ছিল না বলাটাই সংগত হবে। প্রকৃতপক্ষে সেনাসদরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অফিসার আমার হেডকোয়ার্টারে অবস্থান করে সিজিএসকে সাহায্য-সহযোগিতা করছিলেন।
সিঁড়িতে পড়ে আছেন গুলিবিদ্ধ বঙ্গবন্ধু। ছবি: সংগৃহীত
সারাটা দিন একটা উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটল। রাতে ঘোষিত কেবিনেটের সদস্যদের নাম শুনে হতবাক হয়ে গেলাম। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যে অবৈধ মোশতাক সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছেন, সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। জাতির স্থপতিকে হত্যা করে অভ্যুত্থানকারী সেনাসদস্যদের ক্ষমতা দখল করার কয়েক ঘণ্টা পরই আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের এহেন বিশ্বাসঘাতকতায় চরমভাবে হতাশ হলাম।
সিজিএস ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ১৫ আগস্ট সারা দিন আমার ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার আর প্রথম বেঙ্গলের ইউনিট লাইনে কাটান। রাতেও সেখানেই রয়ে যান তিনি। নিরাপত্তার জন্য আমরা দুজনই প্রথম বেঙ্গলের সেনাদের সঙ্গে রাত্রিযাপন করি। সিজিএসকে এ সময় খুব চিন্তাক্লিষ্ট দেখাচ্ছিল। তিনি বারবার বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে আওয়ামী লীগ নেতাদের যে অংশটি ক্ষমতা দখল করেছে, তাদের প্রতি অনুগত্য স্থাপন করা অত্যন্ত পীড়াদায়ক। তিনি বললেন, এই বেইমানগুলোকে যত শিগগির উত্খাত করা যাবে, জাতির ততই মঙ্গল। সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ে হত্যাকারী ও তাদের মদদদাতা রাজনীতিকদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশ পরিচালনার পরিবেশ সৃষ্টি করা এখন আশু কর্তব্য। খালেদ মোশাররফ আরও বললেন, পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ ঘোলাটে। পক্ষ-বিপক্ষ বোঝা দুরূহ হয়ে পড়েছে। এর জন্য সময়ের প্রয়োজন। এই মুহূর্তে কোনো ভুল পদক্ষেপ নেওয়া আত্মঘাতী পদক্ষেপের শামিল হবে বলে মত দিলেন তিনি। তাঁর কথায় যুক্তি ছিল বলে আমিও একমত হলাম। পরদিন অর্থাৎ ১৬ আগস্ট সকালে সিজিএস সেনাসদরে চলে গেলেন। তিনি তাঁর নিজস্ব দায়িত্ব পালন শুরু করলেন। ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারের দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবেই আবার আমার কাছে ফিরে এল।
অবৈধ খুনি সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ
১৬ আগস্ট বিকেলের দিকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদের ধানমন্ডির বাসায় গেলাম। তাঁকে আমি একজন বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতা বলে জানতাম। মুক্তিযুদ্ধ ও তার পরবর্তীকালে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেশার সুযোগ হয়েছিল। তো, ভাবলাম তাঁর কাছে যাই। গিয়ে বলি, আওয়ামী লীগের নেতারা এটা কী করলেন! তোফায়েল আমাকে দেখে অবাক হলেন খুবই। অবাক হওয়ারই কথা। কথাবার্তায় বুঝতে পারলাম প্রচণ্ড নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি। আমাকেও যেন একটু অবিশ্বাস করছেন মনে হলো। আমি তাঁকে আশ্বস্ত করে বললাম, তিনি ইচ্ছে করলে আমার বাসায় এসে থাকতে পারেন। তোফায়েল সবিনয়ে বললেন, তেমন প্রয়োজন মনে করলে আমার বাসায় যাবেন তিনি, তবে এখন নয়! ঘণ্টাখানেক তাঁর বাসায় ছিলাম। পরে শুনেছি, আমি যে তোফায়েল আহমেদের বাসায় গিয়েছি এ কথা প্রকাশ পাওয়ায় রাতে তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। মেজর ডালিম, নূর, শাহরিয়ার, লেফটেন্যান্ট মাজেদসহ অন্যরা তোফায়েল আহমেদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে জানতে চায় আমার সঙ্গে তাঁর কী কথা হয়েছে। সে রকম কোনো কথা হয়নি-এ কথা বারবার বলার পরও ডালিম এবং তার সহযোগীরা তাঁর ওপর অব্যাহত নির্যাতন চালায়। তোফায়েল আহমেদের ওপর অত্যাচারের এই খবর পেলাম রাতে। খুব অনুতাপ হচ্ছিল। আমি তাঁর বাসায় না গেলে হয়তো এই নির্যাতনের শিকার হতে হতো না তাঁকে।
মোশতাকের সহযোগী হত্যাকারীরা তোফায়েল আহমেদের আনুগত্য ও সমর্থন আদায়ের জন্য তাঁর ওপর প্রবল মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। তারা তোফায়েল আহমেদের এপিএস শফিকুল আলম মিন্টুকেও ধরে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায় তার ওপর। একপর্যায়ে ওই কর্তব্যপরায়ণ তরুণ অফিসারটিকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়।
শোনা যায়, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মাজেদ এই নির্মম কাজটি করে। হত্যাকারী ওই অফিসারটি এখনো সরকারি চাকরিতে (বেসামরিক পদে) বহাল রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, সরকারি কর্মচারীদের অসংখ্য সংগঠন থাকা সত্ত্বেও পরবর্তীকালে এই অফিসারটির বিচারের ব্যাপারে কেউই সোচ্চার হননি।
অভ্যুত্থান-পরবর্তী কয়েক দিনে বিদ্রোহীরা ঢাকার কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বেতার কেন্দ্রে স্থাপিত নিজেদের ক্যাম্পগুলোতে ধরে নিয়ে গিয়ে নিগৃহীত করে। বিদ্রোহীদের মূল উদ্দেশ্য ছিল তাদের আনুগত্য ও সমর্থন আদায় করা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রচেষ্টাও ছিল। লাঞ্ছিত ও শারীরিকভাবে নিগৃহীত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজ্ঞ আমিনুল হক। পরবর্তীকালে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছেন। আমিনুল হক পাক যুদ্ধবন্দী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের যুদ্ধাপরাধ তদন্ত কমিশনের একজন বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন। নিষ্ঠার সঙ্গে তদন্তের দায়িত্ব পালনকালে তিনি অভ্যুত্থানকারীদের দেশি-বিদেশি প্রভুদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। এরই পরিণতিতে বিদ্রোহীদের হাতে তাঁকে নিগৃহীত হতে হয়। ডালিম, নূর, শাহরিয়ার ও মাজেদ-এরা তাঁর ওপর বর্বর নির্যাতন চালায়।
১৬ ও ১৭ আগস্ট ক্যান্টনমেন্টের পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। সবাই যার যার অফিশিয়াল কাজকর্ম করেছি। অভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে কোনো তত্পরতা দেখা গেল না কোথাও। বেতারে মোশতাক সরকারের প্রতি সেনাপ্রধান ও অন্যান্য বাহিনীপ্রধানের আনুগত্য ঘোষণার পর এই দুটো দিন মূলত সেনাপ্রধানের তত্ত্বাবধানে অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতি সংহত করার কাজেই ব্যাপৃত ছিলাম আমরা। চেইন অব কমান্ড মানার স্বার্থেই এটা করতে হয়েছে আমাদের। তবে অনেককেই অতি উত্সাহে অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করতে দেখা গেছে।
১৮ আগস্ট সেনাসদরে অনুষ্ঠিত এক মিটিংয়ে ডিজিএফআইয়ের দায়িত্ব পালনরত ব্রিগেডিয়ার রউফ তোফায়েল আহমেদের বাসায় আমার যাওয়ার কথা সবাইকে অবহিত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, তোফায়েল সাহেবের বাসার সামনে আমার গাড়ি দেখা গেছে। এ কথা শুনে সেনাপ্রধান ও উপপ্রধান উভয়েই আমাকে তিরস্কার করলেন। আমি যেন ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে আর সম্পর্ক না রাখি, সে জন্য তাঁরা সাবধান করে দিলেন আমাকে। এই মিটিংয়ে চেইন অব কমান্ড এবং পরবর্তী আর কোনো রক্তপাত ও সংঘাত এড়ানোর বিষয় আলোচিত হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ছবি: ফোকাস বাংলা
১৯ আগস্ট সেনাসদরে আরেকটি মিটিং হয়। বেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো মিটিংয়ে। সেনাপ্রধান সভায় ঢাকাস্থ সকল সিনিয়র অফিসারকে তলব করেন। তিনি মেজর রশিদ ও ফারুককে সঙ্গে করে কনফারেন্স রুমে এলেন। বললেন, প্রেসিডেন্ট মোশতাকের নির্দেশে রশিদ ও ফারুক সিনিয়র অফিসারদের কাছে অভ্যুত্থানের বিষয়টি ব্যাখ্যা করবে। রশিদ তার বক্তব্য শুরু করল। সে বলল, সেনাবাহিনীর সব সিনিয়র অফিসার এই অভ্যুত্থানের কথা আগে থেকেই জানতেন। এমনকি ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডারও (অর্থাৎ আমি) এ বিষয়ে অবগত ছিলেন। রশিদ আরও দাবি করল, প্রত্যেকের সঙ্গে আগেই তাদের আলাদাভাবে সমঝোতা হয়েছে। উপস্থিত অফিসারদের কেউই এই সর্বৈব মিথ্যার কোনো প্রতিবাদ করলেন না। একটি শব্দও উচ্চারণ করলেন না কেউ। কিন্তু আমি চুপ করে থাকতে পারলাম না। নীরব থাকা সম্ভব ছিল না আমার পক্ষে। ফারুক-রশিদের মিথ্যে বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আমি সেদিন বলেছিলাম, ‘You are all liars, mutineers and deserters. You are all murderers. Tell your Mustaque that he is an usurper and conspirator. He is not my President. In my first opportunity I shall dislodge him and you all will be tried for your crimes. ’ আমার কথা শুনে তারা বাক্যহীন হয়ে পড়ে এবং বিষণ্ন মুখে বসে থাকে।
পরবর্তী সময়ে জীবনবাজি রেখে সে কথা রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করি আমি।
যাই হোক, আমার তীব্র প্রতিবাদের মুখে মিটিং শুরু হতে না হতেই ভেঙে গেল। সেনাপ্রধান শফিউল্লাহ উঠে গিয়ে তাঁর কক্ষে ঢুকলেন। উপপ্রধান জিয়া অনুসরণ করলেন তাঁকে। আমি তখন স্বভাবতই বেশ উত্তেজিত। তাঁদের দুজনের প্রায় পেছনে পেছনেই গেলাম আমি। সেনাপ্রধানের কক্ষে ঢুকতেই জিয়া আমার কাঁধে হাত দিয়ে বললেন, ‘শাফায়াত, একেবারে ঠিক আচরণ করছ ওদের সঙ্গে। কিপ ইট আপ। ওয়েল ডান!’ উত্সাহিত হয়ে আমি তাঁদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বললাম, ‘Sir, the way I treated the murderers you must talk to Mustaque in the same language and get the conspirator out of Bangabhaban. ’
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, সেনাপ্রধান বা উপপ্রধান কেউই অবৈধ খুনি সরকারের স্বঘোষিত প্রেসিডেন্টকে সরানোর মতো সৎ সাহস অর্জন করতে পারেননি। এই বিশাল ব্যর্থতা তাঁদের উভয়ের ওপরই বর্তায়।
প্রসঙ্গত, একটা কথা বলতে হয়, ১৫ আগস্ট থেকে মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ যত দিন সেনাপ্রধান ছিলেন (অর্থাত্ ২৪ আগস্ট পর্যন্ত), তাঁকে এবং মেজর জেনারেল জিয়াকে প্রায় সর্বক্ষণ একসঙ্গে দেখা গেছে। একজন যেন আরেকজনের সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে ছিলেন।
(লেখাটি কর্নেল শাফায়াত জামিল, (অব.)-এর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর বই থেকে সংগৃহিত এবং সংক্ষেপিত। বইটির প্রকাশক সাহিত্য প্রকাশ। লেখাটির বানানরীতি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।)