১৯৭১ সালের ২৩ শে মার্চ। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারাদেশব্যাপী চলছে অসহযোগ আন্দোলন। একাত্তরের এদিনে প্রথমবারের মতো সারাদেশে স্বাধীন বাংলার পতাকা ও চলমান আন্দোলনে নিহত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
একের পর এক পতাকাশোভিত ঝাঁজাল মিছিল জোয়ারের উচ্ছ্বাস নিয়ে আছড়ে পড়ছিল গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাতিঘরের পাদদেশে। শহরের সব মিছিল গিয়ে মিশেছে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ধানমণ্ডির বাসভবনে নিজ হাতে পতাকা উত্তোলন করেন। সেখানে তখন লাখো জনতা সম্মিলিত কণ্ঠে গেয়ে ওঠেন ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি। বঙ্গবন্ধু বারবার হাত নেড়ে মিছিলকারিদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শিশু রাসেল বসেছিল পিতার কাছেই। দোতলার বারান্দায় রেলিংটার ওপর ভর দিয়ে গণআবেগের উদ্দাম দৃশ্য অবলোকন করছিলেন বেগম মুজিব ও তাঁর অন্য সন্তানরা।
এদিন বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষনে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘৭ কোটি মানুষের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। সংগ্রাম চলছে, সংগ্রাম চলবে। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। ঐক্যবদ্ধ হও। প্রস্তুত হও। বাঙালীকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না ইনশাআল্লাহ্...জয় বাংলা।‘
বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তৃতা শেষে নিজে শ্লোগান ধরেন ‘জয় বাংলা। আমার দেশ তোমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ। জাগো জাগো, বাঙালি জাগো।’
এদিন প্রধান বিচারপতি ভবন, ঢাকার সেক্রেটারিয়েট, হাইকোর্ট, ইপিআর ও রাজারবাগ পুলিশ সদর দফতর, ঢাকা বেতার ও টেলিভিশন ভবন, মুখ্য সচিবের বাসভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব সরকারি-বেসরকারি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।
ঢাকার নেপাল, ইরান, ইন্দোনেশিয়া ও চীনা দূতাবাসে প্রথমে পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরবর্তীতে তা নামিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। সোভিয়েত কনস্যুলেট ও ব্রিটিশ হাইকমিশনেও এদিন উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে প্রেসিডেন্ট ভবন ও সেনা সদর দফতর ছাড়া দেশের কোথাও পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা ওড়েনি।
এদিন পশ্চিম পাকিস্তান ও ঢাকার প্রেসিডেন্ট হাউসে দিনটিকে পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে তা পালিত হয়নি। তথাকথিত পাকিস্তান দিবসকে স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ প্রতিরোধ দিবস এবং ন্যাপ (ভাসানী) স্বাধীন পূর্ববঙ্গ দিবস হিসেবে পালন করে।