বঙ্গবন্ধুর শিষ্যরা কে কোথায়?


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তারুণ্যের প্রেরণা এবং তারুণ্যের উদ্দীপনা। তরুণদের উপর ভর করেই তিনি স্বাধীকার আন্দোলন করেছিলেন, দেশ স্বাধীন করেছিলেন। তারুণ্যের শক্তিতেই তিনি নতুন দেশ উপহার দিয়েছিলেন জাতিকে। সেজন্যই তিনি জাতির পিতা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তরুণদের তিনি আস্থা অর্জন করেছিলেন এবং অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। তারুণ্যের দ্রোহ দিয়েই তিনি বাঙালিকে জাগিয়েছিলেন। এজন্য তরুণরা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ ছিল এবং বঙ্গবন্ধুর নিউক্লিয়াস বলা হতো এই তরুণদেরকে। আজকে জাতির পিতার ৯৯তম জন্মবার্ষিকী যখন জাতি পালন করছে তখন যদি ফিরে দেখা যায় যে,  বঙ্গবন্ধু যাদের নিজের হাতে গড়েছিলে, যাদের উপর আস্থা রেখেছিলেন সেই তরুণদের অবস্থা কি? তারা কোথায়?

যদি আজকে বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন তরুণদের অবস্থা বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে দেখা যায় যে, বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন তরুণদের মধ্যে শুধুমাত্র তোফায়েল আহমেদ ছাড়া আর কেউই বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া সংগঠন আওয়ামী লীগে নেই। অবশ্য এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু যাদেরকে স্নেহ দিয়ে, আদর্শ দিয়ে গড়তে চেয়েছিলেন শেখ কামাল, শেখ ফজলুল হক মনি ৭৫ এর ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাকাণ্ডে শহীদ হয়েছেন। যাদেরকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আগে এবং তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন বাঁকে বাঁকে গড়তে চেয়েছিলেন, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নেতৃত্ব যাদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন তাঁদের অনেকেই বিভ্রান্ত, বিপথগামী ও দিকভ্রান্ত হয়েছেন। বলা যায়, শুধুমাত্র তোফায়েল আহমেদ ছাড়া সকলেই দিকভ্রান্ত ও বিপথগামী হয়ে গেছেন।

স্বাধীনতার পরপরই  বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজনদের মধ্যে বিভ্রান্তি শুরু হয়। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে জাসদ গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্নেহ হারান আসম আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ। জাসদ যে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পটভূমি তৈরি করেছিল সেটা নিয়ে আজকের বাংলাদেশে কোনো সন্দেহ নেই। আসম আব্দুর রব এখন জেএসডি নামে একটি ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নানারকম বক্তৃতা, বিবৃতি দিলেও তিনি একজন সুবিধাভোগী ব্যাক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত।

৮৮ সালের নির্বাচনে তিনি এরশাদ সরকারের গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতায় পরিনত হয়েছিলেন। এখন তার রাজনীতি হলো যত গর্জে তত বর্ষে না। অন্যদিকে শাহজাহান সিরাজ অসুস্থ। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে থেকেও না থাকার মত করে আছেন। বঙ্গবন্ধুর আরও যারা স্নেহভাজন ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি আওয়ামী লীগ যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসেন, তার আগে ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থী হয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেই কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। তারপর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বঙ্গবন্ধুর যথেষ্ঠ ঘনিষ্ঠ এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন তোফায়েল আহমেদ।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশে যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তার রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। পচাত্তরের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই ছিলেন। পচাত্তরের ১৫ আগস্ট তার ভূমিকা নিয়ে অনেক বিতর্ক ছাড়ানোর চেষ্টা হলেও তিনি সেই বিতর্ককে উপক্ষা করে এখনো বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ট অনুগত অনুসারি হিসেবেই রাজনীতিতে বিচরণ করছেন। রাজনীতিতে কিছু পাওয়া না পাওয়ার চেয়ে তিনি আওয়ামী লীগের তোফায়েল বা বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য তোফায়েল হিসেবেই পরিচিত। রাজনীতি জীবনের সায়াহ্নে তিনিই বঙ্গবন্ধুর একমাত্র উত্তরাধিকার যাদেরকে বঙ্গবন্ধু স্নেহ দিয়ে লালন করেছিলেন এবং আগামী দিনের নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ছাত্র নেতাদের কেউই পরবর্তী প্রজন্মে এসে নেতৃত্ব নিতে পারেননি। বরং নানা বিভ্রান্তি চোরাগলিতে তাদের রাজনীতি আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে গেছে। আজ জাতির পিতা যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে হয়তো তার শিষ্যদের অবস্থা থেকে তিনি হতাশই হতেন।  

সূত্র: বাংলা ইনসাইডার

SUMMARY

855-1.jpg