৩২ মানে বঙ্গবন্ধু, ৩২ মানে বাংলাদেশ


আবদুল মালেক

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রনে যত প্রকার আইন প্রয়োজন হয় সব করুন। যত ধারা সংযোজন করা সম্ভব তাও করুন। শুধু ধারাটি যেন ৩২ নম্বর হিসাবে চিহ্নিত না হয় সে জন্য বিনীত প্রার্থনা। কারন কিছু নম্বর ও শব্দ বাঙালী জাতির জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর। যেমন ৩২, ৫২, ৫৪, ৫৭, ৬৬, ৬৮, ৬৯, ৭১ এগুলো কেবল এক একটি সংখ্যা বা নম্বর নয়। এই প্রতিটি নম্বরের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বাঙালী জাতির দুঃখ-বেদনা, গর্ব ও মর্যাদার দীর্ঘ ইতিহাস। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পৃথিবী জুড়ে আপনার পিতার ৩২ নম্বরের ধানমন্ডির বাড়িটি একটি ঐতিহাসিক ঠিকানা যা এক ডাকে, এক নামে সুপরিচিত। এই বাড়িটির সাথে, এই নম্বরটির সাথে জুড়ে আছে কতশত ঐতিহাসিক ও হৃদয় স্পর্শ  করা ঘটনা। শুধু ৩২ এই নম্বরটি পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে উচ্চারিত হলে আমাদের মানসপটে ভেসে উঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির বাড়িটি। এমন একটি বাড়ির, এমন একটি নম্বরের সঙ্গে এমন একটি আইনের এমন একটি ধারার নম্বরকে চিহ্নিত করতে হবে কেন?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীনতার এই ৪৭ বছরে, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পরে রাষ্ট্রযন্ত্রের ম্তরে স্তরে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র স্থায়ী আসন গেড়ে বসেছে। বাঙালী জাতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে কেবলমাত্র আপনিই ঐ সমস্ত জঞ্জাল সমূলে উৎপাটন করতে পারবেন। সেই বিশ্বাস থেকেই প্রার্থনা, যারা আপনার চারপাশে আছে, শুদ্ধি অভিযান সেখান থেকেই শুরু করুন। ৫৭ ধারার বদলে ৩২ ধারার প্রবর্তনে আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু ধারাটিকে ৩২ নামে যারা সংজ্ঞায়িত করেছে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করুন। জামায়াতে ইসলামীর বহু খায়েস পূর্ন হয়েছে এদেশে, অন্তত বঙ্গবন্ধুর বাড়ির নামটি কোন নিবর্তন মূলক আইনের নম্বর না হোক।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তি নানা ভাবে আমাদের অর্জনসমূহকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াসে লিপ্ত। এই কাজে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে প্রয়াত মেজর জিয়া এবং তৎপরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়া, যা হাত দিয়ে রাজাকারের গাড়িতে ওঠে তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত পতাকা। বেগম জিয়া, জাতির পিতার মর্মান্তিক মৃত্যুদিবসে কেক কাটে,  আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। ১৫ সংখ্যাটিকে আমাদের হৃদয় থেকে মুছে দেবার এই ঘৃন্য প্রয়াস জামায়াতের। আপনি এবং দেশবাসী মর্মাহত হয়। এখন যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তাতে কোনদিন হয়তো দেখবো কোন কুখ্যাত আইনের ধারা হয়ে যাবে ৭১। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বর্তমানে ৩২ ধারার আইনটি ভালো না মন্দ সে বিচার করবে ভবিতব্য। কারন যে কোন আইনের ভালো-মন্দ দু'দিকই থাকে, সেটি আমার বিবেচ্য বা বক্তব্যের বিষয় নয়। তবে সংক্ষেপে এটুকু বলা যায়, যাদের সুরক্ষা দিতে এই আইন প্রণীত হলো, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সেই পার্লামেন্ট মেম্বাররা জবাবদিহিতার উর্ধ্বে। যে দেশে আমি আপনার খোলামেলা সমালোচনা করতে পারি সেখানে আপনার পারিষদবর্গ নিয়ে কথা বলতে পারবো না কেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার এমন কোন সংসদ সদস্য কি আছে যিনি অবৈধ সম্পদের মালিক হোন নি। আমরা দেখি সাংসদ হলেই তাদের সম্পদ ৫০০-১২০০ গুন পর্যন্ত বেড়ে যায়, এগুলো আসে কোত্থেকে? সে যাই হোক, রাষ্ট্রীয় আইন মানতে হবে তবে। আইন থাকুক বহাল তবিয়তে কেবল ৩২ এর স্থলে ভিন্ন একটি নম্বর দিন। কারন ৩২ মানে বঙ্গবন্ধু, ৩২ মানে বাংলাদেশ, ৩২ আমার গর্বের ঠিকানা, ৩২ আমার অস্তিত্বের অহংকার।

লেখকঃ উপ-সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রেস।

SUMMARY

853-4.jpg