ডাঃ মুহাম্মদ আলী মানিক
একজন মানুষ একটি নিপীড়িত, নির্যাতিত জাতিকে মুক্ত করতে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় যখন জেলে বন্দি হয়ে থাকেন, তখন তার প্রতি শ্রদ্ধায় মাথাটা এমনিতেই নত হয়ে আসে। আর সেই মানুষটিই যখন সেই নির্যাতিত জাতিকে মুক্ত করে মাত্র কয়েক বছরের মাথায় ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেন তারই প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন দেশে, তখন দুঃখে কষ্টে রাগে অভিমানে বুকের ভেতরটা যায় দুমড়ে মুচড়ে! বলছিলাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কথা।
পাকিস্তানিদের অত্যাচার নিপীড়ন নির্যাতন শোষণ থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে বঙ্গবন্ধু যেভাবে তার জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন , তার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল! যৌবনের সাধ-আহ্লাদকে বলি দিয়ে বঙ্গবন্ধু ৪৬৮২টি দিন, প্রায় ১৩ টি বছর ছিলেন জেলে! আর তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে বেঁচে ছিলেন মাত্র ১৩১৪ দিন , প্রায় সাড়ে তিন বছর! এ থেকেই বোঝা যায় বঙ্গবন্ধু সারাটা জীবন বাঙালির মুক্তির জন্য ত্যাগই করে গেছেন বিনিমিয়ে কিছু নেননি!
যে কোনো সন্তানই চায় বাবার একান্ত নৈকট্যে থেকে বড় হতে। বঙ্গবন্ধুর সন্তানেরা কিন্তু তা পায়নি! তাইতো দেখি বঙ্গবন্ধু যখন জেল থেকে মুক্ত হয়ে বাড়ি আসতেন তখন বড় ছেলে কামাল বোনকে বলতেন, “হাসু আপা তোমার আব্বুকে কি আমি আব্বু বলতে পারি”? আর ছোট ছেলে রাসেল তো বঙ্গবন্ধুকে দেখতে ঢাকা জেলে গেলে বাসায় আসতে চাইতো না, মনে করতো ওটাই বাবার বাসা, তাই সেখানেই বাবার সাথে থাকতে চাইতো। এমনকি বড় মেয়ে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার বিয়ের সময় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হিসাবে বঙ্গবন্ধু ছিলেন জেলে, এর চেয়ে হৃদয়বিদারক আর কি হতে পারে!
এতো জেল-জুলুমের পর বঙ্গবন্ধু যখন মুক্ত হয়ে জনতার মাঝে ফিরে এলেন, তখন বাঙালি জাতিকে তাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতার জন্য আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশের মতো এতো অল্প সময়ে আর কোনো দেশ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি। এর জন্য বাঙালি জাতি চিরকৃতজ্ঞ বঙ্গবন্ধুর নিকট। আর তাই তো কবিতার ছন্দে বলতে হয় :
বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা
তোমার তরে নত মাথা ,
কীর্তি তোমার অমরগাঁথা ,
আমরা সবাই তোমার সৈনিক ,
তোমার চিন্তা করি দৈনিক।
জয় বাংলা ,
জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক : সহ-সভাপতি , যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ