ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি
“আমি জন্মেছি বাংলায়
আমি বাংলায় কথা বলি।
আমি বাংলার আলপথ দিয়ে হাজার বছর চলি
চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে
তেরশত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে?
....
এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ , আমি কি তেমন সন্তান?
যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান..”
বাঙালীর শুদ্ধনাম শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা, স্বাধীনতার মহানায়ক।
বিখ্যাত সাংবাদিক সেরিল ডান (Cyril Dunn) বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেছেন, “In the thousand year history of Bangladesh, Sheikh Mujib is the only leader who has, in terms of blood, race, language, culture and birth, been a full-blood Bengali. His voice was redolent of thunder. His charisma worked as magic on people. The courage and charm that flowed from him made him a unique superman in this time.”
বঙ্গবন্ধুর একটি উক্তি আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই, অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি উল্লেখ করেছেন, “একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালী হিসেবে যা কিছু বাঙালীদের সঙ্গে সম্পর্কিত, তা-ই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালবাসা, অক্ষয় ভালবাসা।”
বাঙালীর প্রতি এই অক্ষয় ভালবাসা শেখ মুজিবুর রহমানকে টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে মুজিব ভাই, মুজিব ভাই থেকে বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতার স্বীকৃতি দিয়েছে।
বাংলার নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধু অহর্নিশ সংগ্রাম করেছেন। জীবনের সোনালি চৌদ্দ বছর কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন। একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু প্রদান করেছিলেন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ,“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এই ভাষণ বুকে নিয়ে নিরস্ত্র বাঙালী সশস্ত্র হয়েছিল, রক্ত দিয়ে স্বাধীনতার লাল সূর্য্য ছিনিয়ে এনেছিল।
১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের নিষ্ঠুরতা পৃথিবীর ইতিহাসের সকল নিষ্ঠুরতাকে ছাড়িয়ে গেছে, একটি দেশের জাতির পিতাকে সপরিবারে নৃশংস ভাবে হত্যার নজির পৃথিবীতে নেই। নারী, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী, পঙ্গু ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে নির্মম ভাবে।ঘাতকদের গুলিতে ১০ বছরের শিশু রাসেলের চোখ ও মাথার মগজ বেরিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতা শেখ নাসের পানি বলে আকুতি জানালে তাকে বাথরুমে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সময় বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ খুনিদের কাছে প্রাণভিক্ষা চান নি। বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে খুনিদের বলেছেন- ‘তোমরা এখানেই আমাকে মেরে ফেল।’ ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বিদেশে অবস্থান করায় বেঁচে যান।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী ঘটনাবলি বলে দেয়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড কেন এবং কারা?
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের খেলা শুরু হয়। খুনি মোশতাক নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে, ২০ আগস্ট মার্শাল ল’ জারি করে। ২৫ আগস্ট জিয়াউর রহমানকে চিফ অফ আর্মি স্টাফ নিযুক্ত করে।
১৯৭৫সালে ২৬ সেপ্টেম্বর দিনটি ছিল শুক্রবার, অবৈধ ও স্বঘোষিত রাষ্টপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ- ৫০/১৯৭৫ জারি করে। অধ্যাদেশটিতে দু’টি ভাগ রয়েছে, প্রথম অংশে বলা হয়েছে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ভোরে বলবৎ আইনের পরিপন্থি যা কিছুই ঘটুকনা কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রীম কোর্টসহ কোন আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোন আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবেনা। দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, রাষ্টপতি উল্লিখিত ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাদের দায়মুক্তি দেয়া হল।
৩রা নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। জেনারেল জিয়া নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ঘোষণা দেয়। সেসময় অস্থায়ী রাষ্টপতি ছিলেন প্রধান বিচারপতি সায়েম। জিয়াউর রহমান ’৭৭ সালের ২২ এপ্রিল বিচারপতি সায়েমকে সরিয়ে নিজেকে রাষ্টপতি ঘোষণা করে। ‘At Bangabhaban, last phase’গ্রন্থে জাস্টিস সায়েম এপ্রসঙ্গে বলেছেন।জিয়াউর রহমান সংবিধান ও সেনা আইন লঙ্ঘন করে ’৭৭ সালের ৩০মে হ্যাঁ- না গণভোটের আয়োজন করে, ’৭৯ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্টপতি নির্বাচন করে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমান:
যার প্রমাণ জিয়াউর রহমান নিজেই দিয়ে গেছে, ’৭৯ সালে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স সংযুক্ত করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সুরক্ষা দিয়ে। কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই,
ক) জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বিচারে সোপর্দ না করে রাষ্টীয়ভাবে পুরস্কৃত করে। ১২ জন ঘাতককে বিভিন্ন দুতাবাসে চাকুরি দেয়া হয়।
১. লে. কর্ণেল শরিফুল হককে (ডালিম) চীনে প্রথম সচিব
২. লে. কর্ণেল আজিজ পাশাকে আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব
৩. মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব
৪. মেজর বজলুল হুদাকে পাকিস্তানে দ্বিতীয় সচিব
৫. মেজর শাহরিয়ার রশিদকে ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব
৬. মেজর রাশেদ চৌধুরীকে সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব
৭. মেজর নূর চৌধুরীকে ইরানে দ্বিতীয় সচিব
৮. মেজর শরিফুল হোসেনকে কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব
৯. কর্ণেল কিসমত হাশেমকে আবুধারিতে তৃতীয় সচিব
১০. লে. খায়রুজ্জামানকে মিসরে তৃতীয় সচিব
১১. লে. নাজমুল হোসেনকে কানাডায় তৃতীয় সচিব
১২. লে. আবদুল মাজেদকে সেনেগালে তৃতীয় সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
খ) জিয়াউর রহমান কর্তৃক পুরস্কৃত ও পুনর্বাসিত হওয়ার ফলেই বঙ্গবন্ধুর খুনিরা সদম্ভে খুনের কথা স্বীকার করে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছে। ২৬.০৫.১৯৭৬ সালে খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান ’৭৫-এর আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সানডে টাইমস পত্রিকার ১১নং পৃষ্ঠায় একটি বিবৃতি প্রদান করে, যার শিরোনাম- ‘ÔI helped to kill Mujib, dare you put me on trail.’
গ) বিশ্বখ্যাত সাংবাদিক এন্থনি মাসকারেনহাসের কাছে সাক্ষাতকারে খুনি ফারুক ও রশিদ বলেছে,একজন ’৭৫ সালের মার্চ মাসে আরেকজন হত্যাকাণ্ডের দুই দিন আগে অর্থাৎ ১৩ আগস্ট জিয়াউর রহমানের সাথে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জিয়াউর রহমান তাদের কে বলেছে, তিনি সিনিয়র, এই কাজে অংশ নিতে পারবেন না কিন্তু জিয়াউর রহমান তাদের বাঁধা দেয়নি বলেছে ‘Go ahead’এই সাক্ষাতকার ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনায় জিয়াউর রহমানের ভূমিকা সাক্ষী ও আসামিদের জবানবন্দিতে:
ক) রাষ্টপক্ষের সাক্ষী কর্নেল (অব.) শাফায়াত জামিল বিচার আদালতে সাক্ষ্য দেন, ১৫ আগস্ট সকাল অনুমান ৬টায় মেজর রশিদ তাকে বলে- ‘We have captured state power under Khandakar Mustaque, Sheikh is killed, do not try to take any action against us.’ এ কথা শুনে শাফায়াত জামিল হতচকিত হন। দ্রুত ইউনিফরম পরে হেড কোয়ার্টারের দিকে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে জেনারেল জিয়াউর রহমানের বাসায় যান এবং তাকে শেভরত অবস্থায় পান, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে জিয়াউর রহমান শাফায়াত জামিলকে বলেন, ‘So what president is killed... .’
খ) খুনি লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলে, ‘... এ ব্যাপারে জিয়াউর রহমানের সাথে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয় এবং সে মতে এপ্রিল মাসের এক রাতে তার বাসায় আমি যাই..., আলোচনা হয় এবং সাজেশন চাইলে জিয়াউর রহমান বলেন, ‘তোমরা করতে পারলে কিছু কর।’ পরে আমি রশিদের বাসায় গিয়ে জিয়ার মতামত তাকে জানাই। রশিদ তখন বলে, ‘এ বিষয় নিয়া তোমাকে চিন্তা করতে হবে না... আমি deal করব।’ রশিদ পরে জিয়া এবং খন্দকার মোশতাক আহমেদের সাথে যোগাযোগ করে।
বেনিফিশিয়ারি জিয়া ’৭৫ এর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বাঁধা দিয়েছিল:
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে বঙ্গবন্ধু হত্যা কেন ও কারা এটি আরো স্পষ্ট হয়। যেমন: বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যুক্তরাজ্যে যে অনুসন্ধান কমিশন গঠিত হয়েছিল তার সদস্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি জেফরি টমাস ও তার সহকারিকে ’৮১ সালে বাংলাদেশে আসতে বাঁধা দিয়েছিল জিয়াউর রহমান- আমার প্রশ্ন জিয়াউর রহমান কেন এই ঘৃণ্য কাজটি করেছিলেন? আমি বলব নিজের মুখোশ আড়াল করবার জন্য, তিনি যদি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকতেন তবে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রটেকশন দিতেন না, বিদেশি দূতাবাসে চাকুরি দিতেন না, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স সংবিধানে সংযুক্ত করে বিচারে বাঁধা দিতেন না এবং যুক্তরাজ্যের অনুসন্ধান কমিটিকে বাংলাদেশে আসতে দিতেন। এক্ষেত্রে মাননীয় আইনমন্ত্রীর একটি বক্তব্য প্রনিধানযোগ্য, তিনি বলেছেন, ‘বেঁচে থাকলে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার মামলার আসামি হতেন।’
জিয়াউর রহমানের আরো কিছু কর্মকাণ্ড আমি উল্লেখ করছি:
ক) বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে আশ্রয় দেয়ার কারণে জার্মানে নিযুক্ত তৎকালীন রাষ্টদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে ওএসডি করে।
খ) বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাঁর কন্যাদের দেশে আসতে দেয়নি জিয়াউর রহমান। কনিষ্ঠা কন্যা শেখ রেহানার মেয়াদ উত্তীর্ণ পাসপোর্ট নবায়ন না করার জন্য লন্ডন দূতাবাস কে অফিসিয়ালি নির্দেশ দেয়া হয়। জ্যৈষ্ঠা কন্যা শেখ হাসিনার পাসপোর্ট নবায়ন করায় ভারতে নিযুক্ত সেই সময়ের রাষ্টদূতকে চাকরিচ্যুত করে।
যারা স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেনা এবং বাংলাদেশকে পুণরায় পাকিস্তান বানাতে চেয়েছে, তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর জন্য যা যা দরকার তাই করেছে।
ক) জিয়াউর রহমান ’৭৫এর ৩১ ডিসেম্বর দালাল আইন বাতিল করে (যা বঙ্গবন্ধু সরকার প্রণয়ন করেছিল), কারাগারে আটক ও দন্ডিত সকল যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেয়, ’৭৬ সালে সেকেন্ড প্রক্লেমেশন অর্ডার নং- ৩/১৯৭৬ জারি করে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি করার লক্ষ্যে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের শর্তাবলী তুলে দেয়। সেকেন্ড প্রক্লেমেশন ঘোষণা জারি করে সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদ তুলে দিয়ে দালালদের ভোটার হওয়ার সুযোগ দেয়। প্রক্লেমেশন অর্ডার নাম্বার-ক ১/১৯৭৭ জারি করে দালালদের সংসদে নির্বাচিত হওয়ার লক্ষে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের কিছু অংশ তুলে দেয়। প্রক্লেমেশন অর্ডার নাম্বার- ১/১৯৭৭ দ্বারা সংবিধানের ১২নং অনুচ্ছেদ তুলে দিয়ে দালালদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়।
খ) রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী, রাজাকার আলীমকে মন্ত্রী বানায়। শহীদ পরিবারের জন্য বঙ্গবন্ধু যে সকল বাড়ি বরাদ্দ করেছিলেন জিয়াউর রহমান জোর পূর্বক ওই সব বাড়ী থেকে শহীদ পরিবারের সদস্যদের পুলিশ বা সেনাবাহিনী দিয়ে উৎত্থাত করে। বঙ্গবন্ধু ৭৩ সালে ১৮ এপ্রিল গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কুখ্যাত যুদ্ধপরাধী গোলাম আযম গংদের নাগরিকত্ব বাতিল করেছিলেন। জিয়াউর রহমান ৭৮ সালে গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে আনে। জিয়াউর রহমান ’৭৭ সালে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ও সৈনিকদের বেছে বেছে হত্যা করে। প্রতিরাতে কারফিউ দিয়ে মানুষ হত্যা করা হত ঐসময়।
গ) জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়া ’৯১ সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর সকল হত্যাকারীকে পদোন্নতি দেয়। ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি কালো দিন, ’৯৩সাল থেকে খালেদা জিয়া এই বেদনা বিঁধূর দিনে মিথ্যা জন্মদিন পালন করে, কেক কাটে, এই বর্বরতম কাজ করে খালেদা জিয়া মূলত বাংলাদেশ নামক রাষ্টের বুকে ছুঁড়ি চালায়। ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনী রশিদ এবং হুদাকে এমপি বানায় খালেদা জিয়া। খুনী রশিদকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা বানিয়ে সংসদকে কলুষিত করে খালেদা জিয়া।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
মূলত ’৭৫ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত গণতন্ত্র বন্দী ছিল, আইনের শাসন ছিল অনুপস্থিত। ’৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর ১২ নভেম্বর সংসদে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স রহিতকরণকল্পে বিল আনয়ন করা হয় সেদিন বিএনপি সংসদে অনুপস্থিত ছিল। প্রশ্ন উঠে, কেন তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি সংসদে অনুপস্থিত ছিল?
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করতে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ২১ বছর এবং ৩৪ বছর পর কার্যকর হয়েছে আংশিক বিচার। দণ্ডপ্রাপ্ত ছয়জন খুনী এখন বিদেশে পালিয়ে আছে।
জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শুধু সুরক্ষা বা পুরস্কৃতই করেনি, আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়া দায়রা জজ আদালত কর্তৃক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন হরতাল পালন করেছে।
স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু সরকার যখন যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিল তখনই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নিশ্চিহ্ন করতে খুনিরা নারকীয় হত্যাযজ্ঞ করেছে।
খুনিরা শুধু একজন নেতাকে নয়, একটি আদর্শকে হত্যা করতে চেয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিকে হত্যা করতে চেয়েছে। কিন্তু খুনীর দল জানেনা আদর্শকে হত্যা করা যায়না, স্বপ্নকে হত্যা করা যায় না। বঙ্গবন্ধু অমর, অব্যয়, অক্ষয়।
পাকিস্তানের মিয়াওয়ালির কারাগারে ভুট্টো-ইয়াহিয়া কবর খুঁড়েছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার জন্য, বাঙালীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালবাসার এমনই অপার শক্তি যা বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ইপ্সিত লক্ষ্য থেকে একচুলও নড়াতে পারেনি। বাঙালীর মুক্তির প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে প্রস্তুত ছিলেন।
ভুট্টো-ইয়াহিয়া যা করতে সাহস পায়নি একাত্তরে, পঁচাত্তরে তাই করেছে খুনী মোশতাক খুনী জিয়া বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। শেষ করব ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির একটি মন্তব্য দিয়ে, ”আজও আমি বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন থেকে অনুপ্রাণিত হই, বাঙালী হিসেবে তাঁকে নিয়ে গর্ববোধ করি। নিজের জাতি সত্তা সম্পর্কে গর্ববোধ না থাকলে কোন জাতি বড় হতে পারে না। সেটিই বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে আমার প্রথম শিক্ষা।”
এই শিক্ষা আমাদের জীবনে পাথেয় হতে পারে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে পারে, ষড়যন্ত্র ও ইতিহাস বিকৃতি থেকে সত্য সুন্দর ও কল্যাণের পথে নিয়ে যেতে পারে, স্বপ্ন দেখাতে পারে সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশের।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক: আইনজীবী ও সংসদ সদস্য।