কর্নেল ফারুকের সুটকেস বহন করেছিলেন জিয়া


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুক রহমানের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের যোগসাজস ছিল অনেক আগে থেকেই। তারা উভয়ে ছিলেন পুরনো বন্ধু। এ কারণে ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ফেরার পথে লন্ডন থেকে অধঃস্তন অফিসার কর্নেল ফারুকের সু্টকেস ও ব্যাটন পর্যন্ত বহন করে নিয়ে আসেন তদানীন্তন ডেপুটি চিফ অব স্টাফ জিয়াউর রহমান। তাদের উভয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভারতীয় কূটনীতিক শশাঙ্ক ব্যানার্জি এ দাবি করেছেন।

ভারতীয় এই কূটনীতিকের লেখা  ‘ইন্ডিয়া, মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ লিবারেশন অ্যান্ড পাকিস্তান’ (অ্যা পলিটিক্যাল ট্রিটিজ) গ্রন্থে এসব তথ্যের উল্লেখ রয়েছে। এই বইয়ের ১৬তম অধ্যায়ে জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে শশাঙ্ক ব্যানার্জী লিখেছেন, ‘১৯৭৩ সালে লন্ডনে যুদ্ধখেলায় যুক্ত হয়েছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান।’

১৯৬০ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে  নিযুক্ত ছিলেন ভারতীয় এই কূটনীতিক। ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন লন্ডনে ভারতীয় দূতাবাসের অ্যাটাশে। তিনি দাবি করেন, কর্নেল ফারুক রহমানের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও মুজিব সরকারকে উৎখাতের রক্তাক্ত অভ্যুত্থান পরিকল্পনা ১৯৭৩ সালেই শুরু হয়। তবে সরাসরি সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনায় অংশ নেননি তিনি।

বাংলা ট্রিবিউনের লন্ডন প্রতিনিধি তানভীর আহমেদকে সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই ঘটনাটি খুলে বলেন শশাঙ্ক ব্যানার্জি। তিনি দাবি করেন, লন্ডন থেকে ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের আগে ফারুক রহমান তার একটি স্যুটকেস ও কর্নেল ব্যাটন রেখে যান তার কাছে। ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের অংশ হিসেবে ওয়াশিংটন সফরে আসেন তদানীন্তন ডেপুটি চিফ অব স্টাফ জিয়াউর রহমান। ৬ সপ্তাহের যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় পেন্টাগন, সিআইএ এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধানদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে ফেরার পথে লন্ডনে এসে তার (শশাঙ্ক) সঙ্গে দেখা করেন জিয়া। তিনি তখন তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনের অ্যাটাশে। মূলত ফারুক রহমানের স্যুটকেসটি ফেরত নিতেই আসেন তিনি। কিন্তু, তার আগমন ও অধঃস্তন কর্মকর্তার সুটকেস বহনই ইঙ্গিত দেয় অন্য কিছু ঘটতে যাচ্ছে।

তিনি জিয়াউর রহমানের কাছে জানতে চান,‘একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা হয়েও তিনি কেন ফারুক রহমানের মতো অধীনস্ত কর্মচারীর স্যুটকেস নেওয়ার তুচ্ছ কাজ করতে যাচ্ছেন?’ জবাবে জিয়াউর রহমান বলেছিলেন,‘কর্নেল ফারুক আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই তার স্যুটকেসটি আমি নিজ হাতে পৌঁছে দিতে চাই।’ তখনই শশাঙ্ক ব্যানার্জী সামরিক ক্যুর মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল করার গোপন ইচ্ছার বিষয়টা বুঝতে পারেন।

শশাঙ্ক ব্যানার্জী জানান, ওয়াশিংটন সফরকালে পাকিস্তানি মিলিটারির সঙ্গে জিয়াউর রহমানের কী ধরনের কথা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়াউর রহমানকে খুব নার্ভাস দেখাচ্ছিল। তবে শশাঙ্ক ব্যানার্জীর খোঁচাখুচির জবাবে জিয়াউর রহমান স্মিত হেসে জবাব দিলেন,‘আপনার ঈশ্বর প্রদত্ত ঊর্বর কল্পনা শক্তি আছে, একটি স্যুটকেস নিয়ে আপনি আমার সঙ্গে রসালো যুদ্ধ খেলা খেললেন।’

জিয়াউর রহমানের সঙ্গে লন্ডনের কথোপকথনের বিস্তারিত নিয়ে শশাঙ্ক ব্যানার্জী দিল্লিতে একটি রিপোর্ট পাঠান। তবে তিনি যে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আলোচনার বিস্তারিত দিল্লিতে পাঠাবেন এই বিষয়টি জানানোর পর জিয়াউর রহমান বলেছিলেন,‘আপকে পাস ইতনা খিয়ালি পোলাও হ্যায়?’ আপনার ফরেন সার্ভিসে কাজ না করে গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করা উচিত ছিলো মিস্টার ব্যানার্জী।

SUMMARY

793-1.jpg