মাহবুবুর রহমান জালাল, প্রীতম দাস, রায়হান জামিল
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর থেকেই বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃত করার চর্চা শুরু হয়। স্বাধীনতার ঘোষণা, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ এবং নির্যাতিতা বীরাঙ্গনাদের সংখ্যা ও তাদের অবদান, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগসহ আমাদের গৌরব ও অর্জনের প্রত্যেকটি উপাদানই শিকার হয়েছে অবিরাম মিথ্যাচার ও বিকৃতির। দীর্ঘ ২১ বছর ধরে স্বাধীনতার চেতনার বিরোধীরা এই কাজ করে এসেছেন। মাঝখানে ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের পর, এই কাজ আরও তীব্রভাবে শুরু হয় পরবর্তী জামায়াত-বিএনপি সরকারের সময়। বহু ঐতিহাসিক দলিল দস্তাবেজ ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করে ফেলাও ছিল এর অংশ।
কাজেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃত করা ঠেকাতে একটি আইন প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি ছিল এবং ছিল সময়ের দাবি। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৪৫ বছর পরে হলেও, সম্প্রতি আইন কমিশন ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ অপরাধ আইন ২০১৬’- এর খসড়া প্রণয়ন করেছে। বাঙালি জাতির গৌরবময় ইতিহাসের বিকৃতির বিরুদ্ধে সময়োপযোগী পদক্ষেপটি নেওয়ার জন্য আইন কমিশন, আইন মন্ত্রণালয়, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে আমরা ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। আমাদের মতো কোটি-কোটি সাধারণ নাগরিক বহু বছর ধরে এমন একটি আইনের প্রণয়ন এবং প্রয়োগের দাবি তুলে আসছিল।
জনসাধারণের মতামত গ্রহণের জন্য আইনের খসড়াটি আইন কমিশনের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এ খসড়া পাঠ করে আমাদের মনে হয়েছে, কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, আমাদের এ আলোচনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক হিসাবে অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। চূড়ান্তভাবে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিজ্ঞ আইনবেত্তাদের মতামত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বিনীত অনুরোধ থাকবে, নিচে বলা বিষয়গুলো এই আইনের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য।
স্বাধীনতার ঘোষণা
মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন অধ্যায়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রমণের শিকার হয়েছে স্বাধীনতার ঘোষণা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেছিলেন, এটিই ঐতিহাসিক সত্য। একে বহুবার বহুভাবে বিকৃত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর সপক্ষে বহু প্রমাণ রয়েছে। কিছু পাওয়া যাবে সেন্টার ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড রিসার্চের ওয়েবসাইটে (www.cbgr1971.org)। ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসাবে এই ঘটনা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আইনে থাকা উচিত বলে আমরা মনে করছি। আমাদের প্রস্তাব, অনুচ্ছেদ ৪ এ, যেসব ঘটনাকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে তার সঙ্গে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করা যেতে পারে:
১। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কে মিথ্যাচার, এ ঘোষণাকে অবমাননার চেষ্টা, ঘোষণাটির গুরুত্ব খর্ব করার চেষ্টা এবং শেখ মুজিবুর রহমান ভিন্ন অন্য কোনও ব্যক্তিকে স্বাধীনতার ঘোষক ও অন্য কোনও ঘোষণাকে ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা - এসব কিছুই অপরাধ বলে গণ্য হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার কোনও বিকৃতি করা যাবে না। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও সত্যের পক্ষে।
২। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এটাকে বিকৃত করা যাবে না।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ
মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে প্রচুর আক্রমণের শিকার হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। এই ভাষণটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের জন্য বাঙালি জাতির প্রতি বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা। এ ভাষণের সঙ্গে বহু কাল্পনিক শব্দ জুড়ে বিকৃতির চেষ্টা এখনও করা হচ্ছে। আমাদের প্রস্তাব, অনুচ্ছেদ ৪-এ, যেসব ঘটনাকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে তার সঙ্গে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক:
১। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের গুরুত্ব খর্ব করার চেষ্টা, ভাষণটি প্রামাণ্যরূপে (লিখিত, অডিও বা ভিডিও) অনুপস্থিত কোনও শব্দ বা বাক্য প্রক্ষেপণের মাধ্যমে ভাষণটির মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা যাবে না।
২। এই ভাষণের কোনও ধরনের বিকৃতি, পরিবর্ধন, বা পরিমার্জন করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু ঠিক যেই ভাবে, যেই ভাষায় ভাষণ দিয়েছেন, সেটাকে সমুন্নত রাখতে হবে। কোনও ধরনের পরিবর্তন এখানে কাম্য নয়। এটা আমাদের জাতীয় অলঙ্কার।
এখানে উল্লেখ্য যে, আমাদের পবিত্র সংবিধানে ৭ মার্চের ভাষণের যেই ভুল-ত্রুটিগুলো আছে, সেগুলো ঠিক করে ফেলা অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশের প্রথম সরকার
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন হয় এপ্রিল মাসের ১০ তারিখে। সরকারের সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখে, মুজিবনগরের আম্রকাননে। মনে রাখা দরকার, সংবিধান অনুসারে, এটা ‘বাংলাদেশ সরকার’, ‘মুজিবনগর সরকার’ নয়। এটাকে বিকৃত করা যাবে না। হতে পারে এটা অস্থায়ী। সুতরাং ভাষার সুক্ষ্মতা দিয়ে, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে, বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে কোনওভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। সব মাধ্যমেই প্রকাশের সময় এটাকে ‘বাংলাদেশ সরকার’ বলে উল্লেখ করতে হবে।
অবদান অস্বীকারকরণ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এ এইচ এম কামারুজ্জামান, এম মনসুর আলিসহ বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা বা অবমাননা করাকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করে ৪ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হচ্ছে।
গণহত্যা অস্বীকারকরণ
১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের নির্দেশে, রাজনৈতিক নেতাদের পরামর্শে এবং সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণে (এবং সহযোগীদের যোগসাজশে) বাংলাদেশে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতির নাম নিশানা মুছে দেওয়া। জেনোসাইড কনভেনশন বা বাংলাদেশের ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩’- থেকে গণহত্যার যে সংজ্ঞা আমরা পাই, তার সঙ্গে তুলনা করলে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ‘গণহত্যা’ সংঘটিত হয়েছিল।
এই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক তোলার চেষ্টা করে বলা হয়েছে বাংলাদেশে আদৌ ‘গণহত্যা’ সংঘটিত হয়নি। ‘স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সামরিক পদক্ষেপ’- এর যুক্তি দিয়ে অস্বীকার করা হয়েছে গত শতাব্দীর অন্যতম নৃশংস এই গণহত্যাকে। গণহত্যার দায় বাঙালি জাতির ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও চলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনে এই প্রসঙ্গটি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ থাকা বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি। এজন্য আইনের ৪(ট) ধারাটি নিম্নলিখিতরূপে পুনঃপ্রস্তাব করা হচ্ছে:
“১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, তাদের সহযোগী শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও অন্যান্য বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, শান্তিবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধ অপরাধ সংগঠনকে অস্বীকার, উক্ত অপরাধকে সমর্থন বা উক্তরূপ অপরাধের বিচার কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা বা এসব বিষয়ে কোনও ধরণের অপপ্রচার”।
শহীদ ও বীরাঙ্গনাদের সংখ্যা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর নির্ভরযোগ্য গবেষণা থেকে পাওয়া যায় যে, যুদ্ধের (১৯৩৯ - ১৯৪৫) ছয় বছরে আনুমানিক ছয় মিলিয়ন (৬০ লাখ) ইহুদিকে হত্যা করা হয়। এছাড়া আরও ৪-৬ মিলিয়ন (৪০-৬০ লাখ) লোক মারা যায়, যেটাকে নাৎসি জার্মানির সরকার দ্বারা হত্যা করা হয়েছে বলা হয়ে থাকে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, পৃথিবীজুড়ে কারও অধিকার নাই এই আনুমানিক ১০ মিলিয়ন মানুষের নাম ঠিকানা পরিচয়ের তালিকা চাইবার, অথবা এই সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার। আমরা সব সময় বলে এসেছি, একটি হত্যাকাণ্ড এবং এক কোটি হত্যাকাণ্ড উভয়ই গুরুতর অপরাধ।
ঠিক একইভাবে, সমস্ত তথ্য-উপাত্ত থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা অনুমান করা হয় তিন মিলিয়ন (৩০ লাখ)। কোনও কোনও হিসাবে এই সংখ্যা হয় আরও ওপরে এবং কোনও হিসাবে এই সংখ্যা হয় আরও নিচে। অনুরূপ, মুক্তিযুদ্ধে চার থেকে ছয় লাখ নারী এবং শিশু অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন বলে বিবেচিত হয়। প্রচণ্ড চতুরতার সঙ্গে এই সংখ্যাগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে বহু দিন ধরে। আমরা দৃঢ়ভাবে এর প্রতিকার চাই। আমরা চাই এই বিষয়ে আইনে পরিষ্কার ভাষায় অনুচ্ছেদ থাকুক।
সরকার কর্তৃক প্রকাশিত দলিলপত্র
৪(ঙ) ধারাতে সরকার কর্তৃক প্রকাশিত দলিলপত্রের অপব্যাখ্যা বা অবমূল্যায়নের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতায় স্বাধীনতাবিরোধীরা অধিষ্ঠিত ছিল, অথবা রাষ্ট্রনায়কেরা তাদের বেছে নিয়েছিলেন মিত্র হিসেবে। এই সময়ে প্রকাশিত বহু সরকারি দলিলে ঐতিহাসিক অনেক তথ্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, বিকৃতও করা হয়েছে।
৪(ঙ) অনুসারে ওই সমস্ত বিকৃতি নিয়ে আলোচনা এবং ভুল সংশোধনের ক্ষেত্রে একটি বাধা সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে ৪(ঙ) কে ‘সরকার কর্তৃক এযাবতকালে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংক্রান্ত যে কোনও প্রামাণ্য দলিলপত্রের অপব্যাখ্যা বা অবমূল্যায়ন’ রূপে সংশোধনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। সরকারি নথিপত্রে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলভ্রান্তি আছে, সেগুলো আগে শোধরাতে হবে।
বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর
রক্তক্ষয়ী নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশ যুদ্ধে জয় লাভ করে। সেজন্য ১৬ ডিসেম্বর আমাদের ‘বিজয় দিবস’। এই দিনকে বিজয় দিবস ছাড়া অন্য কিছু হিসাবে উল্লেখ করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল হিসাবে ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধরা হবে।
আইনের প্রয়োগ
আমাদের মনে রাখতে হবে শুধু আইন প্রণয়ন করলেই চলবে না। এই আইনের ব্যাপক প্রচার, প্রসার, প্রয়োগ এবং এর পক্ষে জনমত গঠন করতে সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে। দেশে এবং বিদেশে। বিভিন্ন দেশে আমাদের দূতাবাসগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা জানি, মধ্য প্রাচ্যের অনেক দেশেই এই অপরাধগুলো - বিশেষ করে যুদ্ধপরাধিদের পক্ষে প্রচার - বিশেষ করে ঘটছে। এগুলো মাথায় রেখে আমরা নিচের প্রস্তাবগুলো করছি।
১। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বহুদিন ধরেই চলে আসছে। কাজেই আইনটি প্রণয়নের পূর্বে যারা ইতিহাস বিকৃত করেছেন তাদের ক্ষেত্রে কি করনীয়, তা সুস্পষ্টভাবে থাকা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করছি। এজন্য ৪ অনুচ্ছেদে উল্লিখিত অপরাধসমূহ আইন প্রণয়নের আগে বা পরে যখনই সংঘটিত হোক না কেন, সকল ক্ষেত্রেই এই আইন সমানভাবে প্রয়োগ করা যাবে – এমন বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করা হচ্ছে।
২। যে কোনও বিদেশি ব্যক্তি বা সংগঠন দেশের ভেতরে থাকা অবস্থায় যদি এই আইনের পরিপন্থী কোনও কাজ করেন, তাদের জন্য আরও কঠিন শাস্তির বিধান রাখা হোক। প্রয়োজনে যেন তাদেরকে বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত করা যায়, এমন শাস্তির বিধান রাখতে হবে।
৩। কোনও বিদেশি ব্যক্তি বা সংগঠন বিদেশের মাটিতে বসে এমন অপরাধ করলে তাদের ক্ষেত্রে কী শাস্তির ব্যবস্থা হবে, সেটা এই আইনে পরিষ্কার করতে হবে। আমরা সব সময় দেখি অনেক বিদেশি সংগঠনের পছন্দের কাজের তালিকায় থাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে হেয় করা। এগুলো খুবই অনভিপ্রেত।
৪। শাস্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ব সমাদৃত নুরেম্বার্গ ট্রায়াল অনুসরণ/উল্লেখ করা যেতে পারে। এমন কিছু বলা থাকলে, বহির্বিশ্বে আমাদের এই আইনের গ্রহণযোগ্যতা হবে আরও বেশি।
শেষ কথা, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশের জন্ম হয়েছে, সেই দেশেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃতি একটি কলঙ্কজনক ব্যাপার। পৃথিবীর অনেক দেশে এধরণের বিকৃতিকে নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য করে আইন রয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এ আইনটি হবে একটি মাইলফলক। আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের বিকৃতি ও অবমাননা রোধ করতে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
লেখক:
১. মাহবুবুর রহমান জালাল, প্রতিষ্ঠাতা, সেন্টার ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড রিসার্চ (CBGR), যুক্তরাষ্ট্র
২. প্রীতম দাস, ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা, ইনস্টিটিউট অফ কনফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, বাংলাদেশ
৩. রায়হান জামিল, সহকারী অধ্যাপক, কলেজ অফ বিজনেস, যায়েদ ইউনিভার্সিটি, সংযুক্ত আরব আমিরাত