উদিসা ইসলাম
(অক্টোবর ৩১, ২০১৭ )
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন সেটি সাড়ে সাত কোটি মানুষকে মনের বল নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদ্দীপনা দিয়েছে বলে মনে করেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। সাবলিমিটির পর্যায়ে উন্নীত হওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রমনার রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া ১৯ মিনিটের সেই ঐতিহাসিক ভাষণকে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই ভাষণ বাংলার আপামর জনতার প্রেরণার জায়গা এবং এই ভাষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন। বিশ্ব জানুক এ ভাষণ সব মুক্তিকামী মানুষের হাতিয়ার।
আজ সোমবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা এক ঘোষণায় একথা জানান। বিশ্ব ঐতিহ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার একটি আন্তর্জাতিক তালিকাই মূলত মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড। এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন অংশের ঘটনার সংরক্ষণ ও সবার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে ইউনেস্কো।
এই স্বীকৃতির বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামালের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, খবরটি শুনে খুবই গর্ববোধ করছি। আমার মতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ একটি অবিস্মরণীয় ভাষণ যা শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, পৃথিবীর সব মুক্তিকামী মানুষ স্মরণে রাখার দাবি রাখে। যুগে যুগে এই ভাষণ মানুষকে তার অধিকার, মর্যাদা ও স্বাধীন সত্তার পরিচয় সন্ধানে অনুপ্রাণিত করবে।
‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ স্বীকৃতির প্রক্রিয়ার সঙ্গে খানিকটা সম্পৃক্ত থাকায় কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্ট্রি মফিদুল হক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই ভাষণ বাংলার আপমর জনতার প্রেরণার জায়গা এবং এই ভাষণ মেজর মাইলস্টোন। কেবল বাংলাদেশের তখনকার পরিপ্রেক্ষিতে মাইলস্টোন বলছি তা না, মুক্তিকামী মানুষের কাছে এর বৃহত্তর মানে আছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও ওই তাৎপর্য উঠে এলো।
মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে কিভাবে যুক্ত ছিল এ প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, যাদুঘর যে ভূমিকা পালন করেছে সেটা হলো, এর জন্য একটি সাবমিশন দিতে হয়। ভাষণের প্রথম যে রেকর্ড বের হলো সেটার কপি এবং সেটা কোথায় সংরক্ষিত সেটা জানাতে হয়। সেই কাজটা করা হয়েছে।
সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আফসান চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন,৭ মার্চের ভাষণ খুব গুরুত্বপূর্ণ, বড় বিষয় বাংলদেশের মানুষের স্বীকৃতি এবং সেটা এদেশের মানুষ দিয়েছে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চেই। আমি মনে করি, এ ভাষণ বাংলার মানুষকে প্রস্তুত করেছিল সংগ্রামের জন্য। শেখ মুজিবুর রহমানকে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর স্বীকৃতির জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি।
সব স্বীকৃতিই আনন্দ বয়ে আনে উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধা রাইসুল ইসলাম আসাদ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটি এমন একটি ভাষণ যা সারা পৃথিবী খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। এটি একটি অসাধারণ ভাষণ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে অনেক কারণের মধ্যে এই ভাষণটিও অন্যতম কারণ। এ ভাষণ সারাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ শুনেছি, মুক্তিযুদ্ধে জড়িত ছিলাম, আজ পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে এমন কোনও বক্তৃতা আমি শুনিনি যা মানুষকে নিজের দেশ ভাষা ও অধিকার বোধ সম্পর্কে জাগ্রত করে। মাত্র ১৯ মিনিটের যে বক্তৃতা বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন সেটা সাড়ে সাতকোটি মানুষকে মনের বল নিয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদ্দীপনা দিয়েছিল। এটি এর আগে আর কোনও নেতা পারেননি। শিল্পে ইতিহাস রচিত হয়, কিন্তু সেটা ধারণের দায়িত্বও নিতে হয়। আমি সেই সময়টাকে ধরার চেষ্টা করতে ছবি এঁকেছি। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পথ পদক্ষেপ দেশের মানুষকে স্বাধীন করার জন্য। যেটি সারাদেশের নিপীড়িত মানুষকে জাগিয়ে তুলতে পারে। এই ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রয়োজন ছিল।
বাংলা ট্রিবিউন