পত্রিকার পাতায় পাতায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান


উদিসা ইসলাম 
  
বাঙালি জাতির জীবনে একাত্তরপূর্ব গণঅভ্যুত্থান মানেই ঊনসত্তর। আর ঊনসত্তরের এই গণঅভ্যুত্থান স্বধীনতা-উত্তর কালের পত্রিকার পাতায় এসেছে বারবার গুরুত্বের সঙ্গেই। ইতিহাস বিশ্লেষকরা বলছেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা, পরবর্তী সময়ে ১১ দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় রক্তাক্ত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই বাঙালি অর্জন করেছিল স্বাধীনতা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসন ও বঞ্চনা থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে যে ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন, এরই ধারাবাহিকতায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। তাকে মিথ্যা মামলায় বন্দী করা হলে পাকিস্তানি সামরিক শাসন উৎখাতের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের এ দিনে সংগ্রামী জনতা শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন ও সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে মিছিল বের করে।
 
সেই মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে নিহত হন নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান। আর শহীদ আসাদের আত্মদানের পর ২১, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি শোক পালনের মধ্য দিয়ে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে এই দিনে গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। শোষিত মানুষের পক্ষে মুক্তিকামী ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মাইলফলক গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়।



এর ২০ জানুয়ারি নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, যাকে শহীদ আসাদ নামেই চেনেন সবাই। তার আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে বেগবান হয়েছিল তৎকালীন স্বৈরাচার আইয়ুববিরোধী আন্দোলন। আসাদের রক্তাক্ত শার্ট হয়ে ওঠে বাঙালির প্রাণের পতাকা। আসাদ শহীদ হওয়ার মাত্র ৩ দিনের মাথায় ২৪ জানুয়ারি পতন ঘটে আইয়ুব শাহীর। আসাদের আত্মত্যাগ ও গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরেই এগিয়ে আসে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন। ৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত প্রত্যেকটা পত্রিকা ৬৯ এর আন্দোলনকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে।


বাংলাদেশ অবজারভার আজকের এই দিনে ১৯৭২ সালে পুরো পাতাজুড়ে ’৬৯-এর স্মরণে ছবি দিয়ে সাজায়। ১৯৭৩ এর দৈনিক বাংলায় ’৬৯ স্থান পায় শেষের পাতায়, শিরোনাম স্বৈরাচারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। আর ইত্তেফাকের লিডস্টোরি ছিল ‘ইতিহাসের পাতায় দেখা রক্তে রাঙা ২৪ শে জানুয়ারি’। ’৬৯-এর অভ্যুত্থানের দিনের ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে পত্রিকা।

  

জনতার রুদ্ররোষ এবং গণঅভ্যুত্থানের জোয়ারে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান অভিযুক্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সবাইকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পতন ঘটে আইয়ুবের স্বৈরতন্ত্রের। অপশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তাই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান আজও দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন বলেন, এদেশের প্রতিটা আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার দিকে আমরা এগিয়ে গিয়েছি। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ৬৯ একটি আলোর পথ তৈরি করে দেয়। ছাত্র জনতার সেই লড়াইয়ের যতটা ইতিহাসে সামনে আসা দরকার ছিল, ততটা আসে না। এমনকি প্রতিটা দিবস, প্রতিটা মৃত্যু ধরে সঠিক ইতিহাসটা জানানোর সময় এসেছে। এটা যত তাড়াতাড়ি হয় ততই ভালো।

১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাস বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান করে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার শুনানির বিরুদ্ধে আইয়ুববিরোধী গণবিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল সমগ্র পূর্ব বাংলা।

পত্রিকা সংগ্রহ কৃতজ্ঞতা: সেন্টার ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড রিসার্চ ও ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্যাটেজি ফোরাম

SUMMARY

736-1.jpg