‘বাংলাদেশের মানুষের জন্মদিনই কি আর মৃত্যুদিনই বা কি!’

  
‘দিনপঞ্জি একাত্তরে’ বলা হয়, ওই দিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সমাজের সর্বস্তরের মানুষ মিছিল করে বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসভবনে গিয়ে তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। এদিন বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিন ছাড়াও ছিল তার (বঙ্গবন্ধু) ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের ষোড়শ দিবস। সকাল ১০টায় তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠক করেন।

কড়া সামরিক প্রহরার মধ্যে রমনার প্রেসিডেন্ট ভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তৃতীয় কেউ উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে এলে প্রধান ফটকের সামনে অপেক্ষামান দেশি বিদেশি সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ধরেন। তিনি এসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে নিজ বাসভবনে ফিরে যান।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বাসভবনে পৌঁছানোর পর সাংবাদিকদের আনুরোধে বঙ্গবন্ধু তাদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনায় মিলিত হন। এসময় এক বিদেশি সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে জানতে চান ৫২তম জন্ম দিনে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় কামনা কী? জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, জনগণের সার্বিক মুক্তি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি জন্মদিন পালন করি না। আমার জন্মদিনে মোমবাতি জ্বালাই না, কেকও কাটি না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানমুক্তিযুদ্ধ শুরুর ঠিক ৯ দিন আগে ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫২তম জন্মদিন। আন্দোলনের সেই উত্তাল দিনগুলোতে নিজের জন্মদিনে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় কামনা ছিল জনগণের সার্বিক মুক্তি। ওই দিন জনতা তাকে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের জন্মদিনই কি আর মৃত্যুদিনই বা কি!’ সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, তিনি জনগণের একজন। জনগণের জন্যই তার জীবন ও মৃত্যু।
বঙ্গবন্ধু ওই দিন পরিষ্কারভাবে বলেন, তিনি জন্মদিন পালন করেন না। জন্মদিনে মোমবাতি জ্বালান না, কেকও কাটেন না। তবে একাত্তরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ৫২তম জন্ম দিন উপলক্ষে বায়তুল মোকারম মসজিদে আছর নামাজের পর বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘায়ু কামনা করে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা শেখ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বিন সায়িদ জালালাবাদী।
পরের দিন ১৮ মার্চ দৈনিক পূর্বদেশ, ইত্তেফাক ও আজাদ পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ ছাপা হয়। মাহমুদ হাসানের ‘দিনপঞ্জি একাত্তর’ এবং ড. মোহাম্মদ হান্নানের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থেও একাত্তরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন সংক্রান্ত এ বিবরণ পাওয়া যায়।

SUMMARY

686-1.jpg