যে বাইসাইকেলে চড়তেন বঙ্গবন্ধু


তানভীর মাহমুদ
১৯৫৪ সালের কথা। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে ওয়াজেদ চৌধুরীর পক্ষে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালাতে রাজবাড়ী যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানে তার সঙ্গী ছিল একটি বাইসাইকেল। সেটি চালিয়েই গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন তিনি।
বাইসাইকেলের মালিক ছিলেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের আবদুল ওয়াজেদ মণ্ডল (৮০)। ৬২ বছর ধরে আগলে রাখার পর সাইকেলটি গত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় জাদুঘরকে দান করেছেন তিনি।
আবদুল ওয়াজেদ মণ্ডল  জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডির বাড়িতে গেলে প্রথম দেখাতেই তিনি জানতে চান, সাইকেলটি কোথায়?
ওয়াজেদ বঙ্গবন্ধুকে জানান, রাজাকাররা তার বাড়ি লুট করে নিঃস্ব করে দিয়েছে। জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার দেশকেও ওরা নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমার দেশও গরিব, তুইও গরিব। চিন্তা করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে।’
আবদুল ওয়াজেদ মণ্ডলবাইসাইকেলটি কেনার বিষয়টি উল্লেখ করে আবদুল ওয়াজেদ বলেন, আমি সে সময় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। সাইকেলটি ফরিদপুর শহর থেকে ২২০ টাকায় কিনেছিলাম। এটি ইংল্যান্ডের ডানলপ কোম্পানির তৈরি। তিনি বলেন, ওই সাইকেলে চড়ে আমার চাচাতো ভাই মোনাক্কা চেয়ারম্যানের বাড়িতে যাই। বঙ্গবন্ধুও সেদিন মোনাক্কার বাড়িতে এসেছিলেন। বাড়ির উঠানে সাইকেলটি দেখে বঙ্গবন্ধু জানতে চান, এটি কার। এর মালিক আমি জানার পর বঙ্গবন্ধু আমাকে আনন্দে জড়িয়ে ধরে বলেন, তোর সাইকেলটা আমাকে কয়েক দিনের জন্য দে। ওয়াজেদ চৌধুরীর বাড়ি থেকে তুই নিয়ে নিস। এরপর সাইকেলটিতে চড়ে তিনি নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে থাকেন।

আবদুল ওয়াজেদ মণ্ডল

ওয়াজেদ মণ্ডল বলেন, বঙ্গবন্ধুর ব্যবহার করা এই সাইকেলটি দেখতে অনেকেই তার বাড়িতে আসতেন। কেউ কেউ সাইকেলটি জড়িয়ে ধরে আবেগে কেঁদেও ফেলতেন। তা দেখে তার বুক গর্বে ভরে উঠতো।
ওয়াজেদ মণ্ডলের শেষ ইচ্ছা, শেখ হাসিনার সঙ্গে একবার দেখা করবেন তিনি।
এ বিষয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে বাইসাইকেলটি জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জাদুঘর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিচর্চা শেষে বাইসাইকেলটি দর্শনার্থীদের জন্য গ্যালারিতে তোলা হবে।

SUMMARY

682-1.jpg