ইতিহাসের মহানায়কের প্রত্যাবর্তন


মু. আশরাফ সিদ্দিকী বিটু 
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন, বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন কিন্তু কোনোদিন আপস করেননি। তিনি ছিলেন অটল,মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন বাংলাদেশ একদিন স্বাধীন হবেই। তাঁর জীবনের প্রতিটি ক্ষণ, মুহূর্ত আবর্তিত হয়েছে বাংলার জনগণের মুক্তির জন্য; পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন বাংলাদেশে পরিণত করতে দীর্ঘ ২৩ বছর সংগ্রাম করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বলেছেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমরা এদেশের মানুষের অধিকার চাই’। তাঁর কর্ম, প্রজ্ঞা, অপরিসীম সাহস, সংগ্রামে ও অধিকার আদায়ে দৃঢ়তা, অসাধারণ ধীশক্তি সম্পন্ন সুমহান নেতৃত্বেই তিনি পরিণত হয়েছেন বাংলার অবিসংবাদিত নেতায়। পরিবার পরিজনের চাইতে জনগণকেই বেশি ভালোবেসেছেন, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে বাঙালিকে এনে দিয়েছেন হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন-স্বাধীনতা; বাঙালি পেয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, পেয়েছে আত্মপরিচয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালির ওপর গণহত্যা শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় জুড়ে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদারি বাহিনী এই ঘৃণ্য গণহত্যা চালায়। ৩০ লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করে। দুই লক্ষাধিক মা-বোনকে অত্যাচার নির্যাতন করে। ১ কোটির বেশি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। জাতির পিতার আহবানে সাড়া দিয়ে বাঙালি প্রাণপণ গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত হয়। জাতির পিতার নেতৃত্বেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় লাভ করেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই মুক্তিকামী বাঙালি সিংহপুরুষ, মহান নেতা। তিনিই বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁর নাম নিয়ে, তাঁর নামে স্লোগান দিয়ে বাঙালি দেশকে স্বাধীন করেছে। তিনিই ছিলেন সকল প্রেরণার আধার।

জাতির পিতা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরিকল্পনা বিষয়ে ধারণা করতে পেরেছিলেন, কী হতে যাচ্ছে। তাই ২৫ মার্চ কালরাতে অপারেশন সার্চ লাইট নামের ইতিহাসের কলঙ্কজনক গণহত্যা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদান করেছিলেন। টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার ও ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই ঘোষণা প্রচারিত হয়েছিল।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে জীবিত গ্রেফতারের পরিকল্পনা করে এবং এজন্য ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আক্রমণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ে। মুক্তিপাগল বাঙালি জাতির পিতার আহবানে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে পাকিস্তানের মেজর সিদ্দিক সালিক তাঁর ‘witness to surrender’ নামক বইয়ে লিখেছেন– যখন প্রথম গুলিবর্ষণ করা হয় তখন পাকিস্তানে ক্ষীণভাবে শেখ মুজিবের কণ্ঠ শোনা যায়। মনে হলো পূর্বে রেকর্ডকৃত বানী। শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ঘোষণা করেছেন।...কয়েক মিনিট পর ৫৭ বিগ্রেডের মেজর জাফর তার বেতার কণ্ঠ পেলেন, (বিগ বার্ড ইন দ্য কেজ)... Big bird in the cage...। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তিনদিন পর অর্থাৎ ২৯ মার্চ প্লেনে করে ঢাকা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে লায়ালপুর (বর্তমানে ফয়সালাবাদ) জেলে রাখা হয়েছিল।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে নির্মম গণহত্যা চালায়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকায় তাঁকে রাষ্ট্রপতি করেই ঘোষণা করা হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে তাঁরই নেতৃত্বে চলে মহান মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে তাঁর ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সেলের পাশে কবর খোঁড়া হয়েছিল। ১৯৭১ এর ডিসেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে লায়ালপুর থেকে মিয়ানওয়ালি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। সমগ্র বিশ্ব বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। প্রিয় নেতার জন্য সকলের মধ্যে উৎকণ্ঠা। বিশ্ব নেতৃত্ব ও বিশ্ববাসীর চাপ ও দাবিতে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ভুট্টো। বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী পিআইএ’র বিমানটি ৮ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৬ টায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ভোরে লন্ডনে পৌঁছানোর পর তিনি ক্ল্যারিজে’স হোটেলে বিদেশি সাংবাদিকদের সামনে ইংরেজি বিবৃতি দেন এবং সাংবাদিকদের প্রশ্বের জবার দেন। এ প্রসঙ্গে The Sunday Times of Zambia, 9 January 1972  তে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান আজ (৮ জানুয়ারি) নাটকীয়ভাবে মুক্তিলাভ করেন এবং তাঁর জনগণের স্লোগান ‘জয়বাংলা’ ধ্বনি উচ্চারণের মধ্য দিয়ে বিমানযোগে লন্ডন পৌঁছান।...’

লন্ডনে সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেন, ‘...স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণের মতো এত উচ্চমূল্য, এত ভয়াবহ ও বিভীষিকাময় জীবন ও দুর্ভোগ আর কোনও দেশের মানুষকে ভোগ করতে হয় নাই। বাংলাদেশে নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য পাকিস্তানি সৈন্যরা দায়ী। হিটলার যদি আজ বেঁচে থাকতো, বাংলাদেশের হত্যাকাণ্ডে সেও লজ্জা পেতো।’ সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকতে রাজি নই। আমি আমার জনগণের কাছে ফিরে যেতে চাই।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও জনগণের মুক্তির কথা ভেবেছেন। তাঁর জীবনের প্রতিটি ক্ষণই আর্বতিত হয়েছে জনগণের কথা ভেবে, তাদের মুক্তির জন্যই তিনি সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন এবং বাংলার জনগণকে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা এনে দিতে পেরেছিলেন। ৮ জানুয়ারি রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টেন, ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথের সঙ্গে বৈঠক করেন। বঙ্গবন্ধু বৈঠকে বাংলাদেশকে ব্রিটেনের স্বীকৃতিদানের বিষয়টি উল্লেখ করেন। পরে ক্ল্যারিজে’স হোটেলে মি. উইলসন শেখ মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল মি. আরনল্ড স্মিথও হোটেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সকালে ব্রিটিশ রাজকীয় এক বিমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি এবং প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানায়। বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দরে ইংরেজিতে একটি ভাষণ প্রদান করেন। সেই ভাষণের একটি অংশে তিনি বলেন (বঙ্গানুবাদ করে)– ‘এ অভিযাত্রা অন্ধকার থেকে আলোয়, বন্দিদশা থেকে স্বাধীনতা, নিরাশা থেকে আশায় অভিযাত্রা। অবশেষে আমি নয় মাস পর আমার স্বপ্নের দেশ সোনার বাংলায় ফিরে যাচ্ছি। এ নয় মাসে আমার দেশের মানুষ শতাব্দীর পথ পাড়ি দিয়েছে।...’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পরে দিল্লিতে একটি জনসভায় ভাষণ দেন ও রাষ্ট্রপতি ভবনে যান। দিল্লির সেই জনসভার ভাষণে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ভারতের জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভাষণে এও বলেন... আমি বিশ্বাস করি সেকুলারিজমে, আমি বিশ্বাস করি গণতন্ত্রে, আমি বিশ্বাস করি সোশ্যালিজমে...। উল্লেখ্য, লন্ডন ও ভারতে উভয় দেশেই বঙ্গবন্ধু যে বা যারা বা সরকার প্রধানগণ সহ যেসব দেশের জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে ছিল তাদের সবার প্রতি বিশেষভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

১০ জানুয়ারি দুপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বহনকারী ব্রিটিশ কমেট বিমানটি তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করে। একুশবার তোপধ্বনি ও লাখ লাখ মানুষের উল্লাসের মধ্য দিয়ে জাতির পিতাকে বরণ করে নেয়। স্বাধীন জাতির পিতার শুভাগমন উপলক্ষে সমগ্র ঢাকায় আনন্দের বন্যা বইতে থাকে। বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ মুজিব জিন্দাবাদ’, ‘আমার নেতা তোমার নেতা, শেখ মুজিব শেখ মুজিব’ স্লোগানে সেদিন মুখরিত ছিল ঢাকার আকাশ-বাতাস। জাতির পিতাকে দেখার জন্য জনতার স্রোত নেমেছিল রাজপথ জুড়ে। তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত মাত্র এই পাঁচ কিলোমিটার যেতে বঙ্গবন্ধুর খোলা ট্রাক-বহরের লেগেছিল আড়াই ঘণ্টারও বেশি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আবেগতাড়িত হয়ে ক্রন্দনরত অবস্থায় লাখ লাখ মানুষের সামনে ৩৫ মিনিট বক্তৃতা করেন। তাঁর ভাষণ প্রদানের সময় বারবার করতালির মাধ্যমে তাঁকে অভিনন্দন জানায় উপস্থিত জনতা। জাতির পিতার অন্যান্য ভাষণের মতো এই ভাষণটিও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভাষণের শুরুতেই তিনি শহীদের মহান আত্মত্যাগের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান। এ ভাষণে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের ছবি যেন সবাই দেখতে পাচ্ছিল। তিনি কিভাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলবেন সে বিষয়গুলো তুলে ধরেন। ভাষণে ফুটে উঠেছিল স্বাধীন বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের রুপরেখা। যারা ইয়াহিয়া খানকে সহায়তা করেছে তাদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি ভাষণে দেশ পুনর্গঠনে কঠোর পরিশ্রম করার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানান। তিনি ভাষণে বলেছিলেন, রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। যার প্রতিফলন আমরা আমাদের পবিত্র সংবিধানে দেখতে পাই। জাতির পিতা শেখ মুজিব স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে প্রথমে তাঁর মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের লাখো জনগণের কাছে যান। জনতার মঞ্চ থেকে তিনি পরিবারের কাছে গেলে তারপরই তাঁর পরিবারবর্গ তাদের প্রিয় মানুষকে একান্তভাবে কাছে ফিরে পায়।

স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে মনোনিবেশ করেন। ১২ জানুয়ারি তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। মাত্র ১০ মাসের মধ্যে জাতিকে সংবিধান উপহার দেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে তিনি বাংলাদেশকে জাতিসংঘ, ওআইসি, কমনওয়েলথ সহ পৃথিবীর ১২৬ টি রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি এনে দিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালেই বিশ্ব মন্দা সত্ত্বেও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সুস্পষ্টভাবে ঊর্ধ্বমুখী হওয়া শুরু করেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ প্রথম শুরু করেন। জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।

বাঙালির কাছে বঙ্গবন্ধু হলেন ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ করেছে, জীবন দিয়েছে দেশকে স্বাধীন করতে, রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের পরাজিত করেছে; তাই তাদের কাছে জাতির পিতার ফিরে আসা ছিল গভীর আবেগ, আনন্দ, উল্লাস ও পরিতৃপ্তির ঘটনা। বঙ্গবন্ধুই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশদাতা, তাঁর নাম উচ্চারণ করে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছে, তাঁর নাম উচ্চারণ করেই তারা রক্ত দিয়েছে।

জাতির পিতার ফিরে আসা তাই নানামাত্রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁকে ফিরে পেয়ে বাঙালি পেয়েছিল পূর্ণতার স্বাদ, হয়েছিল উজ্জীবিত। স্বাধীন দেশে জাতির পিতার বিজয়ীর বেশে প্রত্যাবর্তন আমাদের স্বাধীনতাকে গৌরবান্বিত করেছিল। মুজিবনগর সরকারও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য কঠিন অবস্থান নিয়েছিল, ঘোষণা করেছিল বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য প্রয়োজনে পাকিস্তান সীমান্তে গিয়ে যুদ্ধ করতে সকলে প্রস্তুত। সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির বিষয়টি হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক, মানবিক ও সকলভাবেই অত্যন্ত যৌক্তিক ও গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে লন্ডন থেকে প্রকাশিত দৈনিক গার্ডিয়ান পত্রিকার ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল: ‘শেখ মুজিব ঢাকা বিমানবন্দরে পর্দাপণ করা মাত্র নতুন প্রজাতন্ত্র এক সুদৃঢ় বাস্তবতা লাভ করে।’    

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভাষণ প্রদান কালে বলেছিলেন-‘বাংলাদেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।’ আজকে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদার আসন লাভ করেছে। সমগ্র বিশ্বে আজ  বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের এই অভাবনীয় সাফল্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে জনগণ বিপুল ম্যান্ডেট দিয়ে আবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশের শাসনভার ন্যস্ত করেছে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবেই। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যমণ্ডিত স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস অমর হোক।

SUMMARY

674-1.jpg