বাঙালি জাতির ইতিহাসে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ


বাঙালি জাতির রাজনৈতিক ইতিহাসে অ���ন্য এক দিন ৭ মার্চ। সুদীর্ঘ আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঐতিহাসিক এই দিনটি পালনে সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা গণজাগরণ মঞ্চও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এদিন বিকালে মহাসমাবেশ করবে। এদিকে ঐতিহাসিক এই দিনে হরতাল ডেকেছে বিএনপি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী। বুধবার নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশ পণ্ডের পর সরকারকে দায়ী এর প্রতিবাদে হরতাল ডাকে বিএনপি। জামায়াতও তাদের কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার অভিযোগ তুলে একই কর্মসূচি দেয়। ৭ মার্চ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “সেদিন বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের ঘোষণা-‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম-এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক।” বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে শেখ হাসিনা ঘোষিত ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ভাষণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলার গণমানুষের প্রাণের দাবি ধ্বনিত হয়।” ‘তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক’- এই বক্তব্য উদ্ধৃত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, শত্রু মোকাবেলার দিক-নির্দেশনা ওই ভাষণেই ছিল। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শোষণ, বঞ্চনা ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে জানিয়ে তা পূরণে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৪৭ সালের দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্ত্বা ও জাতিগত চেতনা ও জাতিরাষ্ট্র গঠনের যে ভিত রচিত হয়, এরই চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর ছাত্র-কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের বাঙালি স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এর ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ আসে স্বাধীনতার ঘোষণা। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পথ বেয়ে ১৬ ডিসেম্বর আসে বিজয়, বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যূদয় ঘটে বাংলাদেশের। দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হবে। বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা করবে আওয়ামী লীগ। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার এবং জাতীয় পত্রপত্রিকা বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। ১৯৭১ সালের এই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ মানুষের জনসমুদ্রে ২৩ বছরের বঞ্চনার ইতিহাস ১৯ মিনিটে তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায়- ‘তারপর থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের’। 

SUMMARY

662-4.jpg