বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি জানতেন জিয়াউর রহমান।


পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পাঁচ মাস আগে পরিকল্পনার কথা তাকে অবহিত করেছিলেন ফারুক রহমান। জিয়াউর রহমান তখন সেনাবাহিনীর উপপ্রধান ছিলেন। ফারুক বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম হোতা। পরবর্তী সময়ে বিশিষ্ট লেখক অ্যান্থনি মাসকারেনহাসকে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের এসব কথা বলেছিলেন মেজর ফারুক। ১৯৭৫ সালের ২০ মার্চ ফারুক জিয়াউর রহমানকে ওই ষড়যন্ত্রের কথা শোনান। জবাবে জিয়াউর রহমান বলেন, 'তোমরা করতে চাইলে করতে পারো। কিন্তু আমি তাতে যোগ দিতে পারব না।' মেজর ফারুক তার অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিয়া তার এডিসিকে বলেন, এই মেজরকে যেন তার সঙ্গে দেখা করার আর কোনো সুযোগ দেওয়া না হয়। মাসকারেনহাস পরে জিয়ার সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে ফারুক রহমানের এসব কথা তাকে মনে করিয়ে দেন। জিয়া তখন 'হ্যাঁ' অথবা 'না'_ কিছুই বলেননি। এ বিষয়ে গোলাম মুরশিদ তার 'মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর' গ্রন্থে বলেছেন, দেশের রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করার প্রায় পাঁচ মাস আগে থেকেই ষড়যন্ত্রের কথা জিয়া জানতেন। কিন্তু সেনাপ্রধান অথবা রাষ্ট্রপতি কাউকেই তিনি এ কথা জানাননি। এটা তার পবিত্র দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতা। সেদিক দিয়ে বিচার করলে মুজিব হত্যার পরোক্ষ দায় তিনি এড়াতে পারেন না। এদিকে বিশিষ্ট মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফসুজও বলেছেন, তিনি মনে করেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে জেনারেল জিয়াউর রহমান ছিলেন মূল ছায়াব্যক্তি। মার্কিন এই সাংবাদিক সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থান সম্পর্কে ব্যাপক পড়াশোনার জন্য সুপরিচিত। ২০১২ সালে জাতীয় শোক দিবসের প্রাক্কালে একটি সাক্ষাৎকারে লিফসুজ বলেন, 'তার ধারণা, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত থাকার ব্যাপারে ভবিষ্যতে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ মুহূর্তে এটা তার অনুমান যে, জিয়া আগস্ট হত্যাকাণ্ডে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।' মার্কিন সাংবাদিক বলেন, জিয়া ছিলেন প্রধান ছায়াব্যক্তি। যদি তিনি এই অভ্যুত্থানের বিরোধী হতেন, তাহলে তিনি নিজেই এ অভ্যুত্থান থামাতে পারতেন। তা করা ছিল তার সাংবিধানিক দায়িত্ব।

SUMMARY

652-1.jpeg