বত্রিশ নম্বর বাড়ির ভেতরের ঘরে পাতা চেয়ারে পাইপ হাতে পদ্মাসনে বসে আছেন বঙ্গবন্ধু্। গায়ে স্যান্ডু গেঞ্জি, চোখ দুটো দিগন্তবিসারী। যেন তিনি এক দার্শনিক নেতা, যিনি সতত নিজেকে দেখেন নিজের আলোয়, যিনি নিজেকে দেখেন তার জনগণের চোখে এবং দেখতে পান সমালোচকের দৃষ্টিতেও। অন্তর জুড়ে তার বাংলা আর বাঙালি। বিশ্বকবির সমর্পণ ও সৌন্দর্যবোধ সর্বোপরি তার অন্তর্দৃষ্টি, নজরুলের দ্রোহ, লালন-হাসনের বাউল মন, সুফী-দরবেশের আধ্যাত্মচেতনা আর অবারিত মাঠ, নদ ও নদীর নিরন্তর ভাঙাগড়ার মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা বাঙালি মানসের এক মহান সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান। বস্তুত তিনি ছিলেন এক স্বজ্ঞাত শক্তি, যার ব্যক্তিত্ব এবং কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের জনমানসের গভীরতম প্রদেশকে আন্দোলিত করেছে। রাজনৈতিক পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি কথা ও কাজের মধ্যে ছিল এক অনাড়ম্বর আভিজাত্য। স্বাধীন বাংলাদেশ আর বাঙালি নিয়ে তার গৌরবের শেষ ছিল না। স্বপ্ন ছিল অনেক। চারপাশের বিরূপ বাস্তবতা থেকেও তিনি কখনই মুখ ফিরিয়ে রাখেননি। সখেদে, কখনও সগৌরবে অনেক কথা বলেছেন। সেসবের কিছু ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে। কিছু লেখা আছে অতি আপনজনদের স্মৃতিপটে। স্বাধীনতা- উত্তর বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতার চর্চা হয়েছে অবাধে। তখনকার পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা হয়েছে অজস্রধারায়। বুদ্ধিজীবীমহল জাতির জনকের সমালোচনায় ছিলেন খড়গহস্ত। বঙ্গবন্ধুর কানে সে সব আসতো। তিনি নিজেও পড়তেন। একদিন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু তার শোবার ঘরের খাটে পাজরের নিচে বালিশ দিয়ে কাত হয়ে কথা বলছেন। খাটের পাশে মোড়ায় বসে, কেউ বা দাঁড়িয়ে গভীর অভিনিবেশ সহকারে তার কথা শুনছিলেন সেই সময়ের কয়েকজন অনুরাগী যুবক। তাদের মধ্যে উঠতি বুদ্ধিজীবীও ছিলেন দুই-তিনজন। বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বললেন, তোরা আমার অনেক আলোচনা-সমালোচনা করতে পারবি। বলতে পারবি আমি ভাল প্রশাসক ছিলাম না।