..............
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে আমার অনেক স্মৃতি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়েছিল ১৪ আগস্ট। আমার বাসা ছিল ধানমন্ডিতে- এখন যেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়, তার পাশেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের বাসভবন, সেটিই তখন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিবের বাসভবন। প্রতিদিনের মতো সকালবেলা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে যাই। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গণভবনে গিয়েছিলাম। দিনের কাজ শেষে দুপুরবেলা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একই টেবিলে বসে একসঙ্গে খেয়েছি। বাসা থেকে বঙ্গবন্ধুর খাবার যেত। শ্রদ্ধেয়া ভাবী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব- যিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গী। সুখে-দুঃখে, আপদে-বিপদে যিনি বঙ্গবন্ধুকে যত্ন করে রাখতেন। নিজ হাতে রান্না করে বঙ্গবন্ধুকে খাওয়াতেন। খাবার শেষে বঙ্গবন্ধু বিশ্রাম নিলেন। বিকাল ৫টায় প্রথমে সাক্ষাৎ করলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূতের সঙ্গে। তারপর গণভবনের মাঠে হাঁটলেন অনেকক্ষণ। এবিএম মূসা- কিছুদিন আগে যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন, তার সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প করলেন। এরপর এসে গণভবনে নিজ কক্ষে বসলেন। বঙ্গবন্ধু প্রায় প্রতিদিন বিকালে মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের সঙ্গে দৈনন্দিন রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করতেন। একসঙ্গে চা পান করতেন। এরপর রাত ৮টায় স্বীয় বাসভবনে ফিরতেন। বঙ্গবন্ধুকে পৌঁছে দিয়ে আমি বাসায় আসতাম। যেতামও একসঙ্গে আসতামও একসঙ্গে। গণভবনে যেখানে বঙ্গবন্ধুর অফিস ছিল সেখানে তিনি বেলা ২টা পর্যন্ত অফিস করতেন। গণভবনের পাশে এখন যেখানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস সেটি ছিল বঙ্গবন্ধুর অফিস। বঙ্গবন্ধুর অফিস কক্ষের পাশেই আমার দফতর। সেদিন বঙ্গবন্ধুর যুগ্ম সচিব মনোয়ারুল ইসলাম এবং ব্যক্তিগত সচিব ফরাসউদ্দীন এই দুজন পিএইচডি করতে বিদেশ যাবেন এ উপলক্ষে কর্মকর্তাদের নৈশভোজ। নৈশভোজ শেষে তাদের বিদায় করে আমি আবার ৩২ নম্বরে এলাম। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু তখন খাবার টেবিলে। আমাকে কাছে ডেকে বললেন, 'কাল সকালে আমার বাসায় আসবি। তুই তো ডাকসু'র ভিপি ছিলি। তুই আমার সাথে তোর প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাবি।' এই কথা বলে আমি এবং বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার মহিউদ্দীন, যিনি মুন্সীগঞ্জ থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি- প্রথমে আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে তার বাসায় চলে গেলেন।