১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনে কাজী সিরাজ ৫০-নিম্ন বয়সের পাঠকদের ধারণা দেওয়ার জন্য লিখেছেন- "৩ জানুয়ারি ১৯৭১ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ এবং পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের দলীয় শপথ গ্রহণের দিন ছিল। পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধু দলীয় এমএলএ, এমপিদের শপথ পড়িয়েছিলেন। তোফায়েল আহমেদ, নূরে আলম সিদ্দিকীসহ সবাই ওই শপথনামায় লিখিত 'জয় বাংলা'র সঙ্গে 'জয় পাকিস্তান' স্লোগানটিও পাঠ করেছিলেন।" আমি সত্তরোর্ধ্ব বয়সের সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিতদের সাক্ষী রেখে বলছি- সেই অনুষ্ঠানে জয় পাকিস্তান শব্দটি উচ্চারিত হয়নি। কাজী সিরাজের অবগতির জন্য বলি, আমি সেদিন নির্বাচিত প্রতিনিধিও ছিলাম না। ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। আর আমার স্মৃতিশক্তি এখনো এত দুর্বল হয়ে যায়নি। তবুও তর্কের খাতিরে তার কথা যদি সত্যি বলে ধরে নিই, তাতেও আমি দোষের কিছু দেখি না। কারণ, সেদিন যে সংসদটির সদস্য হিসেবে তারা নির্বাচিত হয়েছিলেন সেটি ছিল পাকিস্তানের সংসদ। তখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা আমরা ঘোষণা করিনি। এবং তখন পর্যন্ত আমরা প্রকাশ্যে ছয় দফার ভিত্তিতে স্বাধিকারের দাবিতে সোচ্চার ছিলাম। আর বঙ্গবন্ধু তো পাকিস্তান আন্দোলনেরও প্রতিভাদীপ্ত কর্মী ছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নির্দেশে তিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য ফরিদপুরের আনাচে-কানাচে প্রত্যয়দীপ্ত চেতনা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন, মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন। এটি তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর বিভিন্ন অংশে তিনি উদ্ধৃত করেছেন। তখনকার প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। কিন্তু বাস্তবতা হলো- যেদিন থেকে বঙ্গবন্ধু একটি উপনিবেশ হিসেবে আমাদের শোষণের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানিদের দুরভিসন্ধি বুঝতে পেরেছিলেন সেদিনের পর তিনি একবারের জন্যও 'জয় পাকিস্তান' বা 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' উচ্চারণ করেননি। ৭১-এর ৩ জানুয়ারির শপথের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- নির্যাতন-নিগ্রহ, ভয়-ভীতি, লোভ-লালসা, স্বার্থ ও প্রলোভনের কাছে বাংলার মানুষের অধিকার, বিশেষ করে ছয় দফার প্রশ্নে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবেন না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যত প্রশ্নই থাক, ঐতিহাসিক মার্চ ও ৭ মার্চের স্মৃতিবিজড়িত রেসকোর্সে তাঁর দলের নির্বাচিত সব সদস্যকে নিয়ে শেখ হাসিনাও পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শপথ নিতে পারতেন যে- অতীতে যাই হোক না কেন, আমি আপনাদের সামনে জনতার আদালতে দাঁড়িয়ে শপথ করছি- দুর্নীতি ও সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে আজ থেকে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করছি। কোনো অবস্থাতেই লোভে বা প্রলোভনে পড়ে আমরা দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হব না। বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা নিরলস লড়াই করে যাব। অতীতে যারা দুর্নীতি করেছে তারা যত শক্তিশালীই হোক, দ্রুত বিচার আইনে তাদের বিচার করা হবে, ইনশাল্লাহ্। এ দৃশ্যটির অবতারণা করতে পারলে ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনটি জনগণের কাছে কিছুটা হলেও গ্রহণযোগ্যতা পেত, তার পিতার আদর্শ তার কণ্ঠে ধ্বনিত হতো এবং সংগঠনকে তিনি সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল করতে পারতেন। তাতে করে বাংলাদেশের আতঙ্কিত জনতার মনে জোনাকির মৃদু আলোর মতো ক্ষীণ আশাবাদ সৃষ্টি হলেও হতে পারত। কিন্তু দুর্ভাগ্য জাতির, পোড়া কপাল ১৭ কোটি মানুষের- সেটি না করে তিনি উল্টো পথে হাঁটলেন। শেয়ারবাজার, হলমার্ক, ডেসটিনি, যুবক, বেসিক ব্যাংকের দুষ্কৃতকারীরা দণ্ডপ্রাপ্ত তো হলোই না, বরং তার সান্নিধ্য বিবর্জিত হওয়ারও পরিবেশ তৈরি হলো না। ৭ মার্চের ভাষণ প্রসঙ্গে আগের লেখায় বলেছি, আজ আবারও বলি- সেদিন রেসকোর্সে যে লাখ লাখ জনতা উপস্থিত ছিল তারা প্রত্যেকেই বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের প্রতি সর্বোচ্চ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে 'জয় বাংলা' বুকে ধারণ করে সেই জনসমুদ্রের অংশ হয়েছিল। সেদিন সারা জাতি যেখানে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা শোনার অপেক্ষায় উৎসুক ছিল এবং 'জয় বাংলা' স্লোগানে সমগ্র রেসকোর্স প্রকম্পিত হচ্ছিল সেখানে বঙ্গবন্ধু 'জয় পাকিস্তান' বলবেন- এটি কোনো পাগলেরও মাথায় আসার কথা না। আর যদি তা হতোই উপস্থিত জনতা তাৎক্ষণিক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি বিদ্রোহ করে বসত। সমালোচনা, নিরপেক্ষ, নিষ্কলুষ ও তীক্ষ্ন পর্যালোচনা, বিশেষজ্ঞদের সুচিন্তিত অভিমত, আইন বিশেষজ্ঞদের তাত্তি্বক বিশ্লেষণ সবকিছুকে নিদারুণভাবে উপহাসই নয় বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদে সর্বসম্মতভাবে বিচারপতিদের অভিশংসন আইনটি গৃহীত হয়েছে। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় শাসন (বাকশাল) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল (এরও প্রতিবাদ হয়েছিল। সংসদ সদস্যদেরও পদত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছিল)। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার অর্থাৎ শেখ হাসিনার একক, অপ্রতিরোধ্য নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন এবং সংসদের ভেতর ও বাইরে গণতন্ত্রের চর্চা ও অনুশীলন তো অনেক দূরের কথা, গণতন্ত্রের অস্তিত্ব সংকটে বাংলাদেশের ভাগ্যাহত বিপুলসংখ্যক মানুষকে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে অধিকার বঞ্চিত, আশঙ্কিত ও আতঙ্কিত করেছে। এমনকি খোদ আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায় হতে মন্ত্রিপরিষদ পর্যন্ত সবাইকে শঙ্কিত করেছে। বাইরে থেকে যাদের জাতীয় নেতা বলে প্রতীয়মান হতো তারা আজ নিজ অবস্থানটুকু ধরে রাখার জন্য বিবেকবর্জিত স্তাবকতা ছাড়া কিছুই কল্পনা করতে পারছেন না। অভিশংসন আইনটি পাসে বিশ্ববাসী বিস্ময়াভিভূত ও আশ্চর্যান্বিত হয়ে লক্ষ্য করল, শেখ হাসিনার দাপট এতটাই প্রবল যে, দুয়েকজন মৃদুভাষ্যে, ক্ষীণকণ্ঠে, ম্রিয়মাণ হৃদয়ে এক-আধটু বিরোধিতা করার অভিব্যক্তি ব্যক্ত করলেও এর প্রতিবাদে কেউ সংসদ কক্ষ পরিত্যাগ বা পদত্যাগের দৃষ্টান্ত প্রতিস্থাপিত করতে পারেননি। আমি বিরোধী দলকে কখনো গৃহপালিত, কখনো রোবট, কখনো আজ্ঞাবহ, কখনো সরকারেরই উচ্ছিষ্ট অংশ বলে আখ্যায়িত করলেও আমার হৃদয়ের নিভৃত কন্দরে জোনাকির আলোর মতো একটুখানি আশাবাদ জীবিত ছিল যে, স্বতন্ত্র ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে একটা তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনি উচ্চারিত হবে। বাকশাল প্রতিস্থাপনের সময় যেটি হয়েছিল। কিন্তু নিষ্ঠুর বাস্তবতা এটি প্রমাণ করল যে, শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণ এতখানি নিরঙ্কুশ যে, চ্যালেঞ্জ তো দূরে থাক, তার চোখের ইশারাকে এড়িয়ে যাওয়ার মতো সংসদের অভ্যন্তরে কেউ নেই। এটি বিরল ও অভূতপূর্ব ঘটনা নয়, অবিশ্বাস্য রকমের ঘটনা। সত্যিকার অর্থে যেখানে রাজতন্ত্র আজও বিদ্যমান অথবা আফ্রিকার অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশে উপজাতীয় শাসন যেখানে চলমান, সেখানেও এরূপ নিষ্কণ্টক দৃষ্টান্ত আর নেই। আফসোস আমার- এখানে এটি যে পর্যায়ে তাকে দাম্ভিক ও তার নির্দেশকে অলঙ্ঘনীয় করল তার চেয়েও গণতন্ত্রকে অস্থিতিশীল এবং দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিল। সম্প্রতি বিএনপির এক সাবেক নেতা, এককালীন জাঁদরেল মন্ত্রী (এখন এলডিপির চেয়ারম্যান) অনেকটা আক্ষেপের সুরে বলেছেন, 'বিএনপির হাতে এখন কোনো প্রেসক্রিপশন নেই।' এর কারণ বিশ্লেষণে তিনি বলতে চেয়েছেন আওয়ামী লীগ তাদের কোনো পরামর্শ, উপদেশ গ্রহণ না করে দেশের স্বার্থের চেয়ে দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে। বিএনপির বর্তমান হালহকিকত আমার চেয়ে কর্নেল অলির গভীরভাবে অবগত হওয়ার কথা। কর্নেল অলি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তিনি অবশ্যই আমার সঙ্গে একটি শাশ্বত সত্যে একমত হবেন- অধিকার ভিক্ষা করে পাওয়া যায় না, সংগঠিত জনমতের ওপর ভিত্তি করে আন্দোলনে গণমানুষের সম্পৃক্ততায় সেটিকে আদায় করে নিতে হয়। ক্ষমতাসীনদের দয়া-দাক্ষিণ্য ও উদাত্তচিত্তের অনুগ্রহের প্রত্যাশা থেকে কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা তো কোনোদিন পূরণ হয়ই না, বরং সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা ও দাম্ভিকতাকে আরও উসকে দেয়। ৫ জানুয়ারির আগে পাঁচ-পাঁচটি সিটি করপোরেশনের পরাজয় আওয়ামী লীগের একটি বিরাট অংশের মনকে শঙ্কিত করে তুলেছিল। ক্ষমতায় থাকা না থাকা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও একধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবেশী একটি উঠতি পরাশক্তির শর্তহীন সমর্থন তাদের ভেঙে পড়তে দেয়নি এবং শেখ হাসিনাকে প্রত্যয়দৃঢ়চিত্তে নিশ্চিত করা সত্ত্বেও তাকে ১৫৩টি আসন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় কুক্ষিগত করতে হয়েছিল- পাছে কোনো অভাবনীয় অঘটন ঘটে যায়। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো বেগম খালেদা জিয়ার ২৯ ডিসেম্বর 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি'র ব্যর্থতার পর আমেরিকাসহ পশ্চিমা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর যে সহানুভূতির মানসিকতা বিএনপির প্রতি ছিল সেটি কর্পূরের মতো উবে গেল। ২৯ ডিসেম্বরের পর প্রমাণিত হলো বিএনপি একটি গণবিচ্ছিন্ন নেতাসর্বস্ব দল। আন্দোলন ও গণবিস্ফোরণ তৈরি করার মতো সাংগঠনিক শক্তি তো দূরে থাক, মননশীলতা ও কৌশল সম্পর্কেও তারা সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ এবং আওয়ামী লীগের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে প্রতিহত করার বিন্দুমাত্র সাংগঠনিক শক্তি বিএনপি-জামায়াত জোটের নেই। ওটি একটি 'মধুচক্র'। আন্দোলন একটু চাঙ্গা হলে ওরা পদ ও পদবির, প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার ডালে ঝুলতে থাকে। আর আন্দোলনের মুখে সরকারি নির্যাতনের মুখোমুখি হওয়ার বিন্দুমাত্র সাহস তাদের নেই। বরং কেউ আত্মসমর্পণের ধান্দায় থাকেন, কেউ শিয়ালের গর্তে অন্তর্ধান করেন। ৬০ দশকে আমরা যারা স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধিকার, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা অর্জনের আন্দোলনে অগ্রযাত্রী ছিলাম- শুধু নির্যাতনই নয়, মৃত্যুও ছিল আমাদের সহযাত্রী। আমাদের হৃদয়ের ক্যানভাসটি পরিপূর্ণ ছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন দ্বারা। সেখানে প্রাপ্তি-প্রত্যাশা কিংবা নির্যাতন-নিগ্রহের ভয় আমাদের হৃদয়কে প্রকম্পিত করেনি। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে কোনো অবস্থায়ই বিন্দুমাত্র পিছু হটিনি। স্বাধীনতার স্থপতি, আমাদের চেতনার ধ্রুবতারা, স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রদীপ্ত সূর্য বঙ্গবন্ধুকে আন্দোলনের স্বার্থে বিভিন্ন কৌশল নিতে হয়েছে; অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর মতো। কিন্তু মূল লক্ষ্য থেকে লোভ-লালসা, নির্যাতন-নিগ্রহ তাকে বিন্দুমাত্র পথবিচ্যুত করতে পারেনি। সেটিই ছিল আমাদের উজ্জীবিত চেতনার উপকরণ। আমরা নিশ্চিত ছিলাম, হয় জয়, না হয় ক্ষয়। পরাধীনতার বক্ষ বিদীর্ণ করে স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে আমরা জীবনকে বাজি ধরেছিলাম। ব্যক্তিগত প্রাপ্তি-প্রত্যাশা আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করেনি বলেই ভয়-ভীতি, নির্যাতন-নিগ্রহকে আমরা ভ্রুকুটি দেখাতে পেরেছিলাম। আমাদের শক্তির উৎস ছিল জনগণ এবং তাদের বুকনিঃসৃত সমর্থন। তাই নির্যাতন-নিগ্রহকে ভ্রুকুটি দেখিয়ে দুর্ধর্ষ পাকিস্তানি সামরিক শক্তিকে শুধু প্রতিহতই নয়, পরাজিতও করতে পেরেছি। আমি পুনরুল্লেখ করতে চাই, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের নিষ্কলুষতা সম্পর্কে মানুষের কোনো সন্দেহ ছিল না বলেই তাদের সমর্থন ছিল শতকরা ৯৮ ভাগ। সেই মানুষ নির্বিকার, নিশ্চুপ, নিস্তব্ধ। সব কিছু তাদের গা-সওয়া হয়ে গেল কেন? পথে-ঘাটে, বন্দরে-নগরে আজ একটিই কথা- যে যাবে লঙ্কায় সেই হবে রাবণ। শেখ হাসিনা প্রচণ্ড দাম্ভিকতা ও অনমনীয়তায় সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার অজুহাতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করার পরই দাম্ভিক উচ্চারণ করলেন, ৫ বছরের আগে আর কোনো নির্বাচন নয়। বিরোধীরা ক্রমেই নরম হতে থাকল। বসার জন্য, সমঝোতার জন্য, আলোচনার জন্য, মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রথমে দাবি, পরে অনুরোধ, এখন আকুতি-মিনতি করছেন (সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য বিএনপি বুঝেই গেছে)। তাদের বুঝতে হবে, কথায় যেমন চিঁড়ে ভিজে না, অনুরোধ করে, ভিক্ষা করে তেমনি অধিকার আদায় করা যায় না। সাম্প্রতিককালে হরতালের ব্যর্থতাও জনগণের উদাসীনতার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। কারণ মানুষ ধরেই নিয়েছে মহাজোট আর ২০ দলীয় জোট লড়াই, বাকবিতণ্ডা, সংঘাত-সংঘর্ষ, সবকিছু ক্ষমতা অাঁকড়ে রাখা এবং ক্ষমতায় আসার জন্য। আগে সমালোচনা হতো রাজনীতি ক্রমশ ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাচ্ছে। এখন রাজনীতিই সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। সমালোচনা যতই করা হোক না কেন একটি বিশেষ সিন্ডিকেটের মধ্যে সমুদ্রচুরির (শেয়ারবাজার, হলমার্ক, ডেসটিনি, যুবক) একটি অংশ সরকারি ও বিরোধী দলে আনুপাতিক হারে বণ্টিত হচ্ছে। ছোটবেলায় ঝড় হলে আম কুড়ানোর ধুম পড়ত, এখন দুর্নীতির ধুম পড়েছে। ফরমালিন শুধু শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ-মাংসে নয়, সমাজের সর্বস্তরেই বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও মারাত্মকভাবে প্রতিভাত হচ্ছে। পাঠকের প্রশ্ন থাকতে পারে এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী। রাজনীতিসংশ্লিষ্ট অঙ্গনের বাইরে যে সীমিতসংখ্যক বিবেকাশ্রিত অংশ রয়েছে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে জাগ্রত হতে হবে, সরব হতে হবে, প্রতিবাদী হতে হবে। আল্লাহর কাছে সেটিই আমার প্রার্থনা এবং এই ঘোর সামাজিক অমানিশার মধ্যেও প্রদীপ্ত সূর্যকিরণের প্রত্যাশা ও স্বপ্ন নিয়ে আমি বেঁচে আছি। (এই পোষ্টটি দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রথম প্রকাশিত হয়েছে)