ধানমন্ডির লেক সার্কাসের পশ্চিম পাশে ৩২ নম্বর রোডে গেলেই দেখা মিলবে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি। যেখানে তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত স্বপরিবারে ছিলেন। বাড়ির প্রতিটি জায়গায় বঙ্গবন্ধুর সেই সময়ের সব চিহ্নগুলোকে সেভাবেই রেখে দেয়া হয়েছে। তার স্মৃতিগুলো ধরে রাখতেই বাড়িটিকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রুপান্তরিত করা হয় ১৯৯৪ সালে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের এই বাড়িটিতে বসবাস করা শুরু করেন। ১৯৬২ এর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন, ৭০’র নির্বাচন ও ১৯৭১ এর অসহযোগ আন্দোলনসহ যুদ্ধের প্রথম উত্তাল দিনগুলোতে তিনি এ বাড়িতে বসেই সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতেন। সাধারণ মানুষজন সব সময়ই তার কাছাকাছি যেতে পারতো। তিনি সবার দু:খ কষ্টগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা, রাজনৈতিক বিভিন্ন মিটিং সব তিনি এখানে থেকেই করতেন। এই বাড়ি থেকেই পাকিস্তানী সৈন্যরা তাকে অসংখ্যবার গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি এখান থেকেই তার রাষ্ট্রীয় কর্ম পরিচালনা করে থাকতেন। এবং শেষ পর্যন্ত সেই ভয়াল দিন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে স্বপরিবারে এই বাড়িটিতেই প্রাণ দিতে হয়। ১৯৮১ সনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে বাড়িটি হস্তান্তর করা হয়। শেখ হাসিনা বাড়িটিকে জাদুঘরে রুপান্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে ট্রাস্ট বাড়িটিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে রুপান্তরিত করে। তাই বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর আসলে বেদনারই জাদুঘর। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরটিতে মূলত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিষপত্র যেমন, চশমা, তামাকের পাইপ, জুতা, খাবার টেবিল, বিভিন্ন তৈজসপত্রসহ ব্যবহৃত জামাকাপড় রয়েছে। এছাড়া তার বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিবিজড়িত ছবি দিয়ে জাদুঘরটি সাজানো হয়েছে। জাদুঘরটিতে গাইডেরও ব্যবস্থা রয়েছে, যিনি আপনাকে জাদুঘরের বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে এর ইতিহাসও তুলে ধরবেন। বুধবার ছাড়া বাকি ছয়দিনই সকাল ১০ থেকে ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য জাদুঘর উন্মুক্ত থাকে। ৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের কোন টিকেট প্রয়োজন হয় না। এবং শুক্রবার ১২ বছর বয়সের নিচের কারো টিকেটের প্রয়োজন হয় না। টিকেট মূল্যও হাতের নাগালে, মাত্র ৫ টাকা।