১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে অস্বীকার করেছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল পাকিস্তানি সৈন্যরা তাকে না পেলে সারা ঢাকা শহরে জ্বালাও পোড়াও করবে।
তাকে আটক করতে ঢাকা সেনানিবাস থেকে পাকিস্তান সেনাদের একটি গাড়ি বহর বঙ্গবন্ধুর বাড়ির উদ্দেশে বের হলে তাঁর একজন শুভাকাঙ্ক্ষি ফোন করে তাঁকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। জবাবে বঙ্গবন্ধু পালাতে অস্বীকার করে বলেছিলেন, জনগণের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে তিনি পালাবেন না।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ওরা এসে আমাকে না পেলে আমাকে খুঁজে বের করতে সারা ঢাকা শহরে জ্বালাও পোড়াও করবে। সাংবাদিক সাইমন ড্রিং নিশ্চিত মৃত্যুর মুখেও বঙ্গবন্ধুর অবস্থান সম্পর্কে ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ‘পাকিস্তানে ট্যাঙ্ক ক্রাস রিভোল্ট’ শীর্ষক এক নিবন্ধে একথা বলেছেন।
নিবন্ধে বলা হয়, পাক সৈন্যরা শেখের বাড়ি মুহূর্তের মধ্যে ঘেরাও করে ফেলে। বঙ্গবন্ধু ধারণা করলেন যে কোন মুহূর্তে হামলা হচ্ছে। তিনি শুধুমাত্র তাঁর কাজের লোক ও দেহরক্ষী ছাড়া সকলকে সড়িয়ে দিলেন।
একজন প্রতিবেশী জানান, রাত ১টা ১০ মি. একটি ট্যাঙ্ক, একটি সাঁজোয়া যান এবং সৈন্য বোঝাই ট্রাক তাঁর বাড়ির সামনে সড়কে নামল এবং ৩২ নম্বর বাড়িটি লক্ষ্য করে গুলি চালানো শুরু করে।
একজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ইংরেজী ভাষায় বঙ্গবন্ধুকে ‘শেখ ইউশুড কেম ডাউন’ বলে তাকে নিচে নেমে আসতে বলল। এ সময় তারা বাইরে অপেক্ষা করতে থাকল। শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বাড়ির বেলকুনিতে হেঁটে আসলেন এবং তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘হ্যাঁ আমি প্রস্তুত, তবে এ জন্য গুলি ছোড়ার প্রয়োজন নেই। তোমরা আমাকে ফোনে বলতে পারতে। আমি নিচে নেমে আসতাম।’ এরপর সেনা কর্মকর্তাটি বাড়ির বাগানে হেঁটে যান এবং বঙ্গবন্ধু উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ইউ আর এ্যারেস্ট’।
এরপর বঙ্গবন্ধুকে সেনা সদরে নিয়ে যাওয়া হয়। একজন সৈন্য বাড়িতে প্রবেশ করে। সবকিছু তচনচ করে ফেলে। বাগানের গেটটি বন্ধ করে দেয়। লাল, সবুজ ও হলুদ বাংলাদেশ পতাকাটি নামিয়ে ফেলে এবং ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
পাকিস্তানি সেনা হেফাজতে আটক জনগণের নেতা বঙ্গবন্ধু একজন জেলারের সহায়তায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যান।
কারাগারে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা ছিল। জেলার তাঁকে তার ব্যক্তিগত এপার্টমেন্টে লুকিয়ে রাখেন। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সানডে টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়। ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি পত্রিকার কূটনৈতিক সংবাদদাতা রোনাল্ড পেইনের নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়।
খবরে লন্ডনে একজন বাংলাদেশি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, শেখ মুজিব একজন জেলারের সহায়তায় প্রাণে বেঁচে গেছেন। এই কারা কর্মকর্তা দু’দিন বঙ্গবন্ধুকে তার ব্যক্তিগত কোয়ার্টারে লুকিয়ে রেখেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, ‘আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। যেদিন আমি জেলারের বাসায় গিয়েছিলাম, আমি জানতাম না আমি বাঁচবো কিনা। তবে আমি জানতাম, বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই।’
বাসস