সে সময় কারাগারের বাইরের চিত্র ছিলো বিভিন্ন রাস্তায় শত শত উৎসুক মানুষের ভিড়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে তাদের লাশ হস্তান্তর করার পর সেগুলো নিয়ে যেতে কারাগারের বাইরে ৫টি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ৫ জনের ফাঁসির রায় ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করা হয়। এর মধ্যদিয়ে জাতির ইতিহাসের অন্ধকার যুগের অবসান ঘটে।
এদিন রাত ১২টা ১ মিনিটে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথমে সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আটিলারী) ও সাবেক মেজর বজলুল হুদার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এর কয়েক মিনিট পর বহিস্কৃত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সবশেষে সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার রশিদ খান এবং এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদের (ল্যান্সার) মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সামগ্রিক প্রক্রিয়া মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যেই সম্পন্ন হয়।
ফাঁসির মঞ্চ থেকে বের হয়ে কারা কর্মকর্তারা ব্যাপক নিরাপত্তাবেষ্টিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে অপেক্ষামাণ সাংবাদিকদের ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা জানান।
সে সময় কারাগারের বাইরের চিত্র ছিলো বিভিন্ন রাস্তায় শত শত উৎসুক মানুষের ভিড়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে তাদের লাশ হস্তান্তর করার পর সেগুলো নিয়ে যেতে কারাগারের বাইরে ৫টি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়।
এ ছাড়াও ৫টি কাঠের কফিন বহনকারী একটি পুলিশ ভ্যান কারাগারের প্রবেশ দ্বারে এবং দু’টি কাঠের খাট নিয়ে অপর একটি বেসরকারি গাড়ি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। মৃতুদণ্ডের পর লাশ গোছল করানোর জন্য এ খাট ব্যবহার করা হয়।
২৮ জানুয়ারি ফাঁসি কার্যকর করার দিন সন্ধ্যার পর র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও সাদা পোশাকধারী পুলিশ ঢাকা কারাগারের চারদিকে অবস্থান নেয় এবং কয়েক ঘন্টা ধরে কারাগার ভবনের চারদিকের রাস্তা বন্ধ রাখে।
এর আগে ফাঁসির সেলে বন্দি সাবেক এ পাঁচ সেনা কর্মকর্তার ৬১ জন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় শেষবারের মতো এসব আসামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে মহিউদ্দিন আহমেদের আটক দুই পুত্রকে তাদের বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করাতে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়।
১৯৯৮ সালে প্রথম বিচারিক আদালত সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য ১৫ সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। অবশ্য পরবর্তীতে হাইকোর্ট এদের ৩ জনকে বেকসুর খালাস দেন।
দোষী সাব্যস্ত ১২ জনের মধ্যে এদিন ৫ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এ ছাড়া ৬ জন পলাতক রয়েছে এবং অপর একজন জিম্বাবুয়েতে মারা যায়।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও দণ্ডিত ১২ জন খুনির মধ্যে সাতজন পলাতক। তাদের মধ্যে একজন জিম্বাবুয়েতে মারা যায়। বাকি ছয়জনের মধ্যে একাধিক ব্যাক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অবস্থান করছেন। দুই থেকে তিনজনের অবস্থান সর্ম্পকে সরকারের কাছে শতভাগ নিশ্চিত তথ্য নেই। তবে যে সব দেশে তাদের থাকার সম্ভবনা আছে, সেসব দেশের সঙ্গে বিভিন্ন সময় যোগাযোগ হয়েছে।