বলেশ্বর নদীসংলগ্ন মনোরম পরিবেশে ১৯৭২ সালে ৯ শতাংশ ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া অত্যন্ত প্রাচীন বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৭৬নং পশ্চিম পিরোজপুর বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। প্রায় ৪৩ বছর আগে ’৭৫-পরবর্তী প্রাচীন এই বিদ্যালয়ের নাম থেকে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নামটি রহস্যজনকভাবে সরিয়ে নতুন নামকরণ করা হয় ৭৬নং পশ্চিম পিরোজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সরেজমিনে বিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে বেরিয়ে আসে নাম কর্তনের নানা তথ্য। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবাশীষ গুহ জানান, স্থানীয় ছয়জন দাতা অন্যান্য জমির সঙ্গে বিদ্যালয়ের জন্যও ৯ শতাংশ জমি দান করেন, যার ওপর ১৯৭২ সালের ১৭ জুন শহরের সিআই পাড়ায় প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। তখন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন বর্তমান ইন্দুরকানী উপজেলার বাসিন্দা মৃত সিরাজুল ইসলাম। তিনি ’৭৮ সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিলেন মৃত একেএম আবুল কালাম সরদার, পিতা মৃত আব্দুর রহিম সরদার।
স্থানীয় প্রবীণ শিক্ষক এমএফ সিদ্দিকুর রহমান (৭৪) বলেন, ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারির সময় তিনি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন; পরবর্তীতে জাতীয়করণের পর তিনি সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন সেখানে। এই প্রবীণ শিক্ষক আরও জানান, তখনও তিনি বিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নামটি দেখতে পেয়েছেন। কিন্তু ’৭৫-পরবর্তী সময় বঙ্গবন্ধুর নামটি কেন অদৃশ্য হয়ে গেল তা তিনি আর মনে করে বলতে পারেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সমাজকর্মী মোঃ মুর্শিদ শেখ জানান, বিদ্যালয়ের পুরনো কাগজপত্র সংরক্ষিত না থাকায় বিদ্যালয়ের প্রকৃত নাম উদঘাটনে বর্তমান কমিটিকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। পরবর্তীতে জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল-দস্তাবেজ তল্লাশি করে বিদ্যালয়ের পুরনো দলিলপত্র পাওয়া যায় এবং সেখানে ‘৭৬নং পশ্চিম পিরোজপুর বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয়' লেখা দেখতে পাওয়া যায়। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর প্রধান শিক্ষক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে এ বিষয় দ্রুত চিঠি দিয়ে তা অবহিত করেন।
স্থানীয়, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর’ নামটি যারা মুছে ফেলেছে তাদের চিহ্নিত করা হোক। এজন্য তাই বিদ্যালয়টি ‘বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিরোজপুর’ করার জন্য দাবি জানিয়ে আমরা সুদৃষ্টি কামনা করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শাহিদা বারেক বলেন, বিদ্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম যারাই মুছে ফেলার হীনচক্রান্তে লিপ্ত ছিল তারাই আজ আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।