এস,এম তফিজ উদ্দিন
দীর্ঘ প্রায় ৩৮ বছর ধরে রাতে নিজের কণ্ঠে পরিবারের সবাইকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শুনিয়ে ঘুমান বঙ্গবন্ধুর ভক্ত অধ্যক্ষ বজলুর রশিদ। ছাত্রজীবনে প্রায় দেড় বছর সাধনার পর এই ভাষণটি মুখস্ত করেন। এলাকাবাসীও জানেন তিনি রাতে এই ঐতিহাসিক ভাষণ না শুনিয়ে ঘুমাতে যান না। তিনি বর্তমানে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানা আ.লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং স্থানীয় জালালপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও শাহজাদপুর বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে ভাষণে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দীর্ঘ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে নিজেদের মুক্ত করেছিল। সেই মহান নেতার ১৮ মিনিটের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটি ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির খবরে দেশ-বিদেশের বাঙালিরা আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে।
গত বছর এ ঐতিহাসিক ভাষণটি এনায়েতপুর থানা আ.লীগের অনুষ্ঠানে মুখস্ত বলে এলাকাজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন অধ্যক্ষ বজলুর রশিদ। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ মুখস্ত করার বিষয়টি শুনতে চাইলে তিনি বলেন, বর্বর পাকবাহিনী, তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা যখন নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা, খুন, ধর্ষণ করে দেশকে একটি নরকে পরিণত করেছিল। এমন সময় বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও দেশকে স্বাধীন করতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম' মহান বাণী উচ্চারণ করে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন আমি মাধ্যমিকের ছাত্র ছিলাম এবং পাশের বাড়ির রেডিওতে এলাকার বহু মানুষ একসাথে জড়ো হয়ে ভাষণটি শুনেছিলাম। এ সময় বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, 'তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।' বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের এই ভাষণ শুনে শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়ে যেতে সবার মধ্যে একটি অমিয় শক্তি সঞ্চার হয়েছিল। পরে বাড়িতে গিয়ে পরিবারের কাউকে না জানিয়েই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হয়। এরপর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও বঙ্গবন্ধুর ভাষণ স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কোথাও শোনা যেত না বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। তখন আমার বয়স ১৯ কিংবা ২০ বছর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। ১৯৭৭ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় হই। একটি ঘরোয়া বৈঠকে টেপ রেকর্ডারে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনছিলাম। তখন আবারও গা শিউরে উঠেছিল। সে সময়ই চিন্তা আসে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ মুখস্ত করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। পরে ভাষণের একটি প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করে প্রায় দেড় বছর সাধনার পর পুরোপুরি মুখস্ত করি। এরপর থেকে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ভাষণটি নিজ কণ্ঠে বলেই ঘুমিয়ে পড়ি। প্রায় ৩৮ বছর ধরে প্রতিদিনই চর্চা করে আসছি এই ঐতিহাসিক ভাষণ। তবে নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের একটি ভাষণে গোটা দেশের মানুষ একহয়ে কীভাবে শত্রুপক্ষকে পরাস্ত করেছিল। সেই ভাষণের প্রতিটি বার্তা বাস্তব জীবনে কাজে লাগিয়ে নিজেকে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ ভাষণের বার্তাগুলো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জানাতে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত আত্মনিয়োগ করব ইনশাআল্লাহ।