‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন চেয়ারের পেছনে দৌড়াবি না’


দীপক দেব
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মাত্র দুই দিন আগে, অর্থাৎ ১৩ আগস্ট বুধবার গণভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে শেষ কথা হয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও তৎকালীন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজাফফর হোসেন পল্টুর। সেই সময় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার কারণে বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছ থেকে দেখার ও ঘনিষ্ঠভাবে মেশার সুযোগ হয়েছিল পল্টুর। বঙ্গবন্ধুর আদর স্নেহ ভালোবাসার স্মৃতি আজও উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।

১৯৬৪ সালে নিজের মাসিক পত্রিকার জন্য বিজ্ঞাপন চাইতে গেলে বঙ্গবন্ধু সে সময় তাকে ১০০ টাকার একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন, যা তার কাছে ছিল বিস্ময়। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যাতায়াত থাকার কারণে একসঙ্গে শুধু ভাত খাওয়ার স্মৃতিই ছিল না, মহান সেই নেতা নিজ হাতে কই মাছের কাঁটাও বেছে দিয়েছিলেন; যা আজও ভুলতে পারেননি আওয়ামী লীগের এই নেতা। তার বিবেচনায়, বঙ্গবন্ধু সঠিকভাবে দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার চেয়েও বাংলাদেশ বেশি উন্নতি করত। শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে আলোকিত বাংলাদেশের বিশেষ আয়োজন ‘স্মৃতির পাতায় বঙ্গবন্ধু’র জন্য দেয়া সাক্ষাৎকারে তৎকালীন তরুণ নেতা মুজাফফর হোসেন পল্টু এসব কথা বলেন।

পল্টু বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রথম থেকেই আমাকে খুব স্নেহ করতেন। বঙ্গবন্ধু যখন পল্টনে ভাষণ দিতেন, আমি তখন সেই ভাষণ শুনতে যেতাম। আমরা তখন শান্তিনগরে থাকতাম। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা সাহেব তখন শান্তিনগরে থাকতেন। বঙ্গবন্ধু প্রায়ই উনার সঙ্গে দেখা করতে বাসায় আসতেন। একদিন আমরা সবাই মিলে শান্তিনগরে শহীদ মিনারে বসে গল্প করছিলাম। তখন বঙ্গবন্ধু গাড়ি নিয়ে ওইদিক দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের দেখে গাড়ি থেকে নেমে এলেন। এসে আমাদের সবার সঙ্গে কথা বললেন। আমরা কে কী করি জানতে চাইলেন। এরপর গাজী সাহেবের বাসায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠভাবে পরিচয় হয়। এটা মধ্যপঞ্চাশের কথা। পরবর্তীকালে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম, বঙ্গবন্ধু তখন আলফা ইন্স্যুরেন্সে বসতেন। গাজী গোলাম মোস্তফা সাহেবও সেখানে কাজ করতেন। পাড়ার ছেলে হিসেবে আমি গাজী সাহেবের কাছে যেতাম। কারণ শান্তিনগর ক্লাব আমাদের পাড়ার ক্লাব ছিল।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ছিলেন সভাপতি, আমি সাধারণ সম্পাদক আর গাজী গোলাম মোস্তফা সাহেব ছিলেন সহ-সভাপতি। এজন্য ক্লাবের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য উনার কাছে যেতাম। তখন প্রায়ই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছে; কুশল বিনিময় হয়েছে।    

স্মৃতিচারণ করে পল্টু বলেন, ‘আমার মনে আছে, আমি তখন একটা মাসিক পত্রিকা বের করতাম মাসিক বর্ণালী নামে। একবার বঙ্গবন্ধুর কাছে একটা বিজ্ঞাপনের জন্য গিয়ে বলেছিলাম, আমার একটা পত্রিকা আছে, আমাকে একটা বিজ্ঞাপন দিন। বঙ্গবন্ধু আমাকে আলফা ইন্স্যুরেন্সের একটা ১০০ টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। তখন (৬৪ সালে) ১০০ টাকা মানে অনেক টাকা।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আন্তরিকতা আমাকে সব সময় খুব মুগ্ধ করত। আন্তরিকভাবে তিনি কুশলবিনিময় করতেন। এই যে তার আন্তরিকতা, আমাকে খুবই মুগ্ধ করত। ৬ দফার আন্দোলনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। কমলাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু হয়। ১৯৭০ এর নির্বাচনে যখন তিনি ঢাকা থেকে খাজা খয়েরউদ্দিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন, তখন আমি সামনে থেকেই অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্য কাজ করেছি। মুসলিম লীগের প্রচণ্ড প্রতাপ ছিল। জোর-জবরদস্তি করার বহু চেষ্টা করেছিল। আমরাও প্রতিহত করার চেষ্টা করেছি। বঙ্গবন্ধু আমাকে বলতেন, ঠিকভাবে রাজনীতি কর।’

মুজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, ‘১৯৭২ সালে নগর আওয়ামী লীগের সদস্য হই। এরপর ’৭৪ সালের শুরুর দিকে ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হই। এরপরই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। তিনি তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন; আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। একদিন বঙ্গবন্ধু আমাকে গল্প শুনিয়েছিলেন- কীভাবে সাইকেল চালিয়ে রাজনীতি করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একটা কথা আমাকে বলেছিলেন- কখনও চেয়ারের পেছনে দৌড়াবি না, চেয়ার যতক্ষণ তোর পেছনে না দৌড়াবে ততক্ষণ চেয়ার পাবি না। উদাহরণ হিসেবে তার নিজের দিকে তাকাতে বলেন বঙ্গবন্ধু।’ তিনি বলেন, ‘আমার আগে কত নেতা ছিল, আজ কেউ নেই। আরেকটা কথা বলতেন- রাজনীতিতে যদি তুই কাউকে পক্ষে আনতে না পারিস, তাকে যদি নিরপেক্ষ রাখতে পারিস তাতে ক্ষতি নেই।’ সাংগঠনিক পর্যবেক্ষণ দক্ষতা কেমন ছিল- এর উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু ময়মনসিংহ থেকে ঘুরে এসে বলেছিলেন, নুরুল আমিনের সিটটি আমরা পাব না। সত্যিই নুরুল আমিনেরটাসহ দুইটি পাইনি। ১৬৯টির মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি পেয়েছিল।’

আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা বলেন, ‘উনার সঙ্গে ভাত খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। দুপুরে যে ক’দিন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে গেছি, উনি প্রথমেই জিজ্ঞেস করতেন- কীরে খেয়েছিস? একদিন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দেখি, তিনি ভাত খাচ্ছেন। আমাকে দেখেই তিনি বললেন, বয় ভাত খা। সেদিন বঙ্গবন্ধু কই মাছ দিয়ে ভাত খাচ্ছিলেন। বঙ্গবন্ধু কই মাছ খেতে খুব পছন্দ করতেন। একসঙ্গে দুই-তিনটা কই মাছ খেয়ে ফেলতেন। ওইদিনও বঙ্গবন্ধু তিনটা কই মাছ খেয়ে ফেলেছেন। তখনও আমি একটা কই শেষ করতে পারিনি। এমন সময় আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কী রে খেতে পারছিস না। দে আমি কাঁটা বেছে দিচ্ছি। বলেই আমার মাছটা নিয়ে কাঁটা বেছে দিলেন। কী অসাধারণ মনের মানুষ!’

মুজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, ‘আমার আরেকটি স্মৃতির কথা না বললেই নয়। ১৯৭৪ এ মৌলভীবাজারের বণিক সমিতির নেতারা একদিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে চাইল। আমি ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। তাদের দাবি ছিল, আমাকেও তাদের সঙ্গে যেতে হবে। যদিও তাদের অনেকেই ঢাকা মহানগরের নেতা ছিলেন। তারপরও তারা চাইছিল, আমি যেন তাদের সঙ্গে যাই, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্য। সে সময় রফিকুল্লা চৌধুরী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব। আজ যিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, তার বাবা ছিলেন উনি। তারা দাবি-দাওয়া বঙ্গবন্ধুকে জানালেন। বঙ্গবন্ধু উনাকে (রফিকুল্লা চৌধুরী) বললেন, তিনি সব লিখে নিলেন। যখন উঠতে যাব বঙ্গবন্ধু তখন আমাকে বললেন, পল্টু তুই বয়, ওরা যাক। আমি ভাবলাম, মনে হয় কোনো কথা বলবেন। হঠাৎ তিনি বলে বসলেন, তুই আমার মহানগর আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারি। তুই একটা ছিঁড়া পাঞ্জাবি পরে ঘুরছিস। আমি তখন ব্যাচেলর ছিলাম। একথা বলার পর বেল চেপে একটা খাম আনতে বললেন। তিনি আমার হাতে খামটি ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এটা নে। এটা দিয়ে তুই ভালো জামাকাপড় বানাবি। কর্মীদের প্রতি তার যে মহানুভবতা- এটাই তার বহিঃপ্রকাশ। আমি তার একজন সাধারণ কর্মী। তারপরও আমার প্রতি তার যে মনোভাব।’ তিনি বলেন, প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রতি তার নজর ছিল। কে কী করছে, কীভাবে আছে- সবকিছুই তিনি লক্ষ্য করতেন। মনে হয় তিনি কর্মীদের চেহারা দেখলেই বুঝতে পারতেন, কে কেমন আছে। সংগঠনের বাইরেও একটা পারিবারিক পরিবেশে আবদ্ধ করে রাখতেন। এটা ছিল বিরল।

১৯৭৫ সালের ১৩ আগস্ট দিনটি ছিল বুধবার। গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল জানিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বলেন, ‘ওইদিন গণভবন থেকে আমার বাসায় ফোন এসেছে। আমি তখন এসপি মাহবুব সাহেবের বাসায় ছিলাম। আমার বাবুর্চি এসপি মাহবুব সাহেবের বাসায় ফোন করে। সে আমাকে জানায়, স্যার, আপনাকে গণভবন থেকে হানিফ (ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মুহাম্মদ হানিফ) সাহেব খুঁজছিলেন। আমি ফোন রেখেই গণভবনে ফোন করলাম। তখন সেখান থেকে আমাকে জানানো হলো, হানিফ সাহেব নন, বড় সাহেব (বঙ্গবন্ধু) আপনাকে খুঁজছেন। আপনি লাইনে থাকেন, আমি বড় সাহেবকে দিচ্ছি। পল্টু, তুই কই। তুই ৫টার মধ্যে আমার এখানে আসবি। তোর ৫টা নয়। ঘড়ির ৫টা। আমি বললাম, জি আচ্ছা। আমি ৫টার আগেই উনার সঙ্গে দেখা করতে গণভবনে গেলাম।’

সেদিনের স্মৃতি মনে করে পল্টু বলেন, ‘দোতলায় উঠে দেখি বঙ্গবন্ধু বসে চা খাচ্ছেন। আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস করলেন, এসেছিস? ওই সময় বঙ্গবন্ধু আমার দিকে তাকিয়ে ঠাট্টার সুরে বললেন- তোকে কেন জানি আজ আমার লাঠি দিয়ে পেটাতে মন চাচ্ছে। আমিও বঙ্গবন্ধুর ঠাট্টার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বললাম, নিশ্চয়ই অপরাধীর জানার অধিকার আছে- কেন তাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তারপর তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে অনেক কথা বললেন। সংগঠনের কথা, দেশের রাজনীতির কথা, বিভিন্ন জায়গায় ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সেসব কথা। একটা পর্যায়ে তিনি আমাকে বললেন, চল যাই। এরপর গণভবনের লেকের দিকে নিয়ে গেলেন। বললেন, মানুষকে তো বশ করতে পারিনি। দেখ, মাছগুলো কেমন বশ হয়েছে- বলেই হাতের মুড়ি পানিতে ছিটিয়ে দিলেন; আর মাছ এসে খাওয়া শুরু করল। দেখ, চারদিকে আমি শুধু ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। আমার কাছের লোকগুলোকে বিভিন্নভাবে দূরে সরানো হচ্ছে। এ সময় তিনি আমাকে পুরান ঢাকায় একটা স্টেডিয়াম বানানোর কথা বললেন।’  

পল্টু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর একটা কুকুর ছিল। তিনি সেটাকে মাংসের টুকরা খাওয়াতেন। সেদিন ওই সময় কুকুরটার দিকে মাংসের ছাট দিতেই, সে খেতে চাইল না। তখন বঙ্গবন্ধু বললেন, ওকে লাঠি দিয়ে মারো, ও দুষ্টু হয়ে গেছে।’

পল্টু বলেন, ‘আমাদের মধ্যে একটা কথা আছে, পশু-পাখিরা আগে থেকে অনেক কিছুই টের পায়। ঘটনাটি ছিল ১৩ আগস্ট বিকালে। পরে তো ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটল ১৫ আগস্ট ভোর রাতে।’ আওয়ামী লীগের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘হয়তো পশুরা আগেই বুঝতে পেরেছিল। তখন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অনেক কথা হচ্ছিল। এ সময় বঙ্গবন্ধুর এপিএস এসে একজনের নাম নিয়ে বললেন, সে দেখা করতে এসেছে; এখন উনি বিরোধী দলের রাজনীতি করেন। নাম বলতেই বঙ্গবন্ধু বললেন, আসতে বলো। এ সময় উপস্থিত কয়েকজনের সামনে বঙ্গবন্ধু আমাকে লাঠি দিয়ে তিনটা বাড়ি দিলেন। বাড়ি দিয়ে বললেন, তোকে তিনটা বাড়ি দিলাম, যেন সব সময় আমার কথা মনে থাকে। এর চেয়ে বড় জিনিস আর কিছু হতে পারে না। তার মানে বঙ্গবন্ধু অনেক কিছু আঁচ করতে পারছিলেন।’

পল্টু বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের কথা জানলেও কোনো বাঙালি তাকে হত্যা করতে পারে- এটা তিনি কখনোই বিশ্বাস করতেন না। মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও অগাধ বিশ্বাস তার জন্য কাল হয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয়, ১৫ আগস্টের পর এক মাস আমি এটা অনুভব করেছি। প্রতি সেকেন্ডেই আমার উনার কথা মনে হয়েছে। এখনও যখন নিরিবিলি বসি, তখনও এসব স্মৃতিই আমাকে তাড়া করে। কাউকে এগুলো বলতে গেলেই আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু দেশ শাসনের জন্য সময় পেলে বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার চেয়েও উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন। সেই দূরদর্শী নেতৃত্ব উনার মধ্যে ছিল। মাত্র সাড়ে তিন বছরেই তিনি সেই প্রমাণ দিয়েছিলেন।’

SUMMARY

563-1.jpeg