বঙ্গবন্ধু বললেন, আমাকে কে মারবে : মুহিত

সজীব হোমরায়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। মাত্র সাড়ে ৩ বছর ক্ষমতায় থেকে তিনি যে নীতিগুলো নিয়েছিলেন তা ছিল দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। এখনও এসব নীতি অনুসরণ করা হয়। তাই বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, আর বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আলোকিত বাংলাদেশকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কখনোই বিশ্বাস করতেন না যে, কোনো বাঙালি তার ক্ষতি করবে। বঙ্গবন্ধুর সাধারণ জীবনযাপন, বঙ্গবন্ধুর নীতিসহ ১৫ আগস্টের সেই শোকাবহ রাতের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের প্রথমেই অর্থমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন নিয়ে কথা বললেন। অর্থমন্ত্রী বললেন, বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন ছিল জ্ঞানের আলোয় আলোকিত জাতির, স্বপ্নের আলোয় আলোকিত বাংলাদেশের। আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার পথেই আছি। জাতির পিতার স্বপ্নের আলোকিত বাংলাদেশে আমরা পৌঁছাবোই। 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে প্রথম দেখার স্মৃতিচারণ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমার বয়স তখন ১১। সে সময় বঙ্গবন্ধু সিলেটে গিয়েছিলেন। সিলেট তখন পূর্ব বাংলার অংশ ছিল। আমাদের অবস্থাটা তখন একটু ভিন্ন ছিল। পরে অবশ্য আমরা একটু বিশেষ চেষ্টায় জায়গা করে নিয়েছি। তখন প্রথম বঙ্গবন্ধুকে আমি দেখেছি। এরপর ১৯৫১ এবং ১৯৫৩ সালে আবার দেখা হয়। তখন আমি ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম। ওই দেখায় আমি তাকে আমার পরিচিতি তুলে ধরার চেষ্টা করি। আমার আব্বার বড় গোফ ছিল। সেই সূত্রে উনি আমাকে চিনে ছিলেন।
স্মৃতিতাড়িত হয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৯৫৬ কিংবা ৫৭ সালে আবার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার দেখা হলো। আমি তখন সরকারি চাকরিতে ছিলাম। ১৯৫৮ বা ৬০ সালে তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। উনি ফুটবল খেলা খুব পছন্দ করতেন। আমি প্রায়ই খেলা দেখতে যেতাম। অবশ্য আমি সরকারি কর্মকর্তা ছিলাম বলে সরকার সেটা ভালোভাবে নেয়নি। তবে উনি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) কখনোই আমার কাছে অন্যায় আবদার করেননি। একবার শুধু আমার কাছে বৈষম্যের তথ্য উনি চেয়েছিলেন। আমি সেটা দিয়েছি। এটাতে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ  তখনকার অর্থমন্ত্রী হাবিবুর রহমানের কমিটির সচিব ছিলাম আমি। তাই বৈষম্যের তথ্য আমি দিতে পেরেছিলাম। বঙ্গবন্ধু খুশি হয়েছিলেন। 
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে নিজেকে ‘সৌভাগ্যবান’ বললেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাজ করতে পারাটা ছিল আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। এমন মহামানবের সঙ্গে কাজ করাটা যে কত আনন্দের তা বলে বোঝানো যাবে না। যারা এ সুযোগ পায়নি তারা বুঝতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন তখন আমি ম্যানিলা থেকে দেশে আসি। এরপর তো উনার অধীনে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। একবার উনি আমার কোনো কাজে একটু অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। বললেন, তুমি বেশি দিন দেশের বাইরে থেকেছো। তোমাকে দেশে নিয়ে আসা দরকার। পরে অবশ্য তিনি তা করেননি।
তিনি খুবই সাধারণ জীবনযাপন করতেন জানিয়ে প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু কখনোই জাঁকজমক পছন্দ করতেন না। তিনি খুবই সাধারণভাবে চলাফেরা করতেন। উনার বাসায় একজন মাত্র প্রহরি ছিল। আমি উনার বাসায় গিয়ে সরাসরি বেডরুমে ঢুকে গিয়েছিলাম। আমি খুব অবাক হয়ে দেখলাম, এত বড় একজন নেতার বাড়িতে মাত্র একজন প্রহরী। আমি বঙ্গবন্ধুকে প্রহরীর ব্যাপারটি জানালে তিনি হেসেই উড়িয়ে দেন। বললেন, আমাকে কে মারবে? কোনো বাঙালি তার ক্ষতি করতে পারে সেটি তিনি কখনোই বিশ্বাস করতেন না।
১৫ আগস্টের সেই কালো রাতের কথা স্মরণ করে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে দেশে এসে আমি সৌদি আরবে গিয়েছিলাম। ফরাস উদ্দিন তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাইভেট সেক্রেটারি ছিলেন। পরে যখন আমি ঢাকায় আসলাম, তখন আর আমি তাকে পাইনি। উনাকে হত্যা করা হয়েছে এমনটি আমি বিশ্বাস করিনি। উনার মতো একজন মহান নেতা, মহামানবকে হত্যা করা হয়েছে এটি বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। উনাকে কোনো বাঙালি হত্যা করতে পারে তা তিনি কখনোই বিশ্বাস করতেন না। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, একটি গোষ্ঠী ‘কু’ করেছিল। হত্যা করা হয়েছে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে। এটি ছিল আমাদের জন্য অনেক বড় আঘাত, অনেক বড় ধাক্কা। তবে তৃপ্তি পাই যে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হচ্ছে। জাতি কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে। 
বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। তার দেখানো পথ ধরেই জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আমরা সঠিক পথেই আছি। বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে ৩ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। এ সাড়ে ৩ বছরে তিনি যে নীতি নিয়েছিলেন তা খুবই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেন। তিনি যখন ছয় দফা দেন বা স্বাধীনতা আন্দোলন করেছিলেন তখনকার জন্য সেটি পরিপূর্ণ ছিল। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন বলেই ভবিষ্যৎ দেখতে পেরেছিলেন। এজন্যই মাত্র সাড়ে ৩ বছরে তিনি অনেক নীতিতে পরিবর্তন আনেন। তার নেয়া ওই নীতি এখনও আমরা মেনে চলেছি। একটি উদাহরণ দিই- বঙ্গবন্ধুর সময় করা সমুদ্র আইন ইত্যাদি ইত্যাদি এখনও আমরা অনুসরণ করছি। 
বঙ্গবন্ধুর দেশ পরিচালনার সঙ্গে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনার অনেক মিল খুঁজে পান আওয়ামী লীগের আমলে সবচেয়ে বেশিবার বাজেট দেয়া অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর মধ্যে যে উচ্চাশা, উচ্চাকাক্সক্ষা, দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, নেতৃত্বগুণ ছিল তা বঙ্গবন্ধু কন্যার মধ্যেও আছে। দেশকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুর ছিল তা শেখ হাসিনা দেখেন। উনার নেতৃত্বে আমরা সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি পরিকল্পনা কমিশনকে যে পথে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যাও সে পথে হাঁটছেন মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের ভবিষ্যতের নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। উনি পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারম্যান থাকাকালীন যা করতে চেয়েছিলেন আমরা ঠিক সে পথেই হাঁটছি। এখনও উনার বানানো স্ট্রাকচারেই আছি আমরা। শুধু একটা তফাত আছে। সেটা হলো, আগে যারা এখানে কাজ করত তারা রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ ছিল। এখন এটাতে পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যে উন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন আমরা তা-ই অনুসরণ করছি।

SUMMARY

557-2.jpg