৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু স্বশস্ত্র সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছেন

 
সুভাষ সিংহ রায় 
 ১৯৭১ সালে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৮:৩০ মিনিটের যে ভাষণটি দেন, এতে শব্দমাত্র ১১০৮টি। এই ১১০৮টি শব্দের ভেতরে তিনি বাঙালী জাতির হাজার বছরের সংগ্রামের ইতিহাস বলে দিয়েছিলেন। যুদ্ধের সময় কখন কী করতে হবে, সেটাও বলে দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পরে জিয়াউর রহমান একটি সাপ্তাহিকে লিখেছিলেন, স্বাধীনতা আমরা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের মাঝে পেয়ে যাই। ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের স্বাধীনতার গ্রীন সিগনাল দিয়ে দেয়। এখন দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে, সারা পৃথিবী আজ ভাষণটিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। ইউনোস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে। ইউনোস্কো স্বীকৃতি দিয়ে বলেছে, ৭ মার্চে ভাষণটিকে স্বীকৃতি দিয়ে আমরা নিজেরা সম্মানিত হয়েছি। অথচ আমাদের দেশে একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া ৭ মার্চের দিনটিকে কেউ পালন করে না। এটা তো সমগ্র জাতির, এটা শুধু আওয়ামী লীগের নয়।

তারা ইতিহাস বিকৃত করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে ২১ বছর শুধু ইতিহাসের বিকৃতিই চলেছে। ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো নিষিদ্ধ ছিলো। ভাষণটিকে লুকিয়ে লুকিয়ে শুনতে হতো। শুধু আওয়ামী লীগ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাষণটি বাজাতো। নতুন প্রজন্মের কাছে ৭ মার্চের ভাষণটিকে তুলে ধরা হয় নি।

ড. জাফর ইকবাল বলেছেন, পৃথিবীতে একমাত্র সৌভাগ্যবান জাতি আমরা, যাদের জাতির নেতা এবং দেশ সমার্থক। এর অর্থ হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। যতকাল বাংলাদেশ থাকবে, বাঙ্গালী জাতি থাকবে, ততকাল ৭ মার্চের ভাষণ থাকবে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না, যেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন। যারা ইতিহাস বিকৃতি করে তারা রাষ্ট্র এবং জাতির শত্রু। ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু নিরস্ত্র বাঙালীকে স্বশস্ত্র সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছেন।

সারা পৃথিবীতি যতগুলো ভাষণ আছে, সেগুলোকে নিয়ে ব্রিটিশ একজন গবেষক জ্যাকব পিস ২০১৩ সালে গবেষণা করেছেন সারা পৃথিবীর ভাষা নিয়ে। যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৪২১ বছর পূর্ব থেকে ২০১৩ পর্যন্ত প্রায় ২৫০০ বছরের সকল ভাষণকে এনালাসিস করে তিনি তৃতীয় বিশ্বের ৪২ টি ভাষণের তালিকা করেছেন। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে স্থান পেয়েছে। তারপর তিনি দেখিয়েছেন, সারা পৃথিবীতে যতগুলো বড় বড় ভাষণ আছে, সমস্ত ভাষণের একটি প্রেক্ষাপট আছে।

প্রাসঙ্গিকতা আছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভাষণটির প্রাসঙ্গিকতা ভিন্ন। জ্যাকব বলেছেন, বঙ্গবন্ধু যখন বলেছেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’- সে সময় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মিত্রশক্তি কেউ ছিলো না। তবু বঙ্গবন্ধু সমগ্র জাতিকে এই ভাষণের মাধ্যমে স্বশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ করেছেন। তখন যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, সবাই বঙ্গবন্ধুর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। যুদ্ধ চলেছে বঙ্গবন্ধুর নামের উপর দিয়ে। তাই এটাকে ইউনোস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু মির্জা ফখরুল বলেছেন , এটা একটা আনন্দের বিষয়।

এটা যদি আনন্দের বিষয় হয়, তাহলে ৭ মার্চ আপনারা পালন করেন না কেন? ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে, আপনারা স্বীকৃতি দিচ্ছেন না কেন? ৭ মার্চ শুধু একটি ভাষণ নয়, এটি মানুষকে যুক্তিবাদিত করার মহাকাব্য। বঙ্গবন্ধু তার প্রতিপক্ষকে বলেছেন, আপনারা যদি ন্যায্য কথা বলেন, যদি সংখ্যায় একজনও হয় আমরা মেনে নেবো। বঙ্গবন্ধুর এই অমর বাণী কি আপনারা অনুসরণ করছেন? একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ এই দিনটিকে পালন করে না কেন? মহাত্মা গান্ধীর কথা ভারতের পাঠ্য সূচিতে এসেছে স্বাধীনতার পরপরে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পাঠ্যসূচিতে আসতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে কেন? মুখে যেমন বলেছেন আনন্দের সংবাদ ,তাহলে পালন করলেন না কেন? স্বাধীনতার কোনো দিবসই আপনারা পালন করেন না। তাই ইতিহাস বিকৃতি না করে আপনারা ৭ মার্চের ভাষণকে মেনে নিন।

পরিচিতি : সিনিয়র সাংবাদিক

SUMMARY

544-4.jpg