বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস


মো. তরিকুল ইসলাম 
১০ জানুয়ারি ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতির জন্য ছিল একটি ঐতিহাসিক দিন। এই দিনে মহান স্বাধীনতার স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির মহান শিক্ষক, স্বাধীনতার ঘোষক বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, অন্ধকারাচ্ছন্ন বাঙালির আলোর দিশারী, দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে নির্যাতিত নিপীড়িত শোষিত বঞ্চিত অভাগা বাঙালির আবেগ ও ভালবাসা ঠিকানা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ ২৯২ দিন পাকিস্তানের কারাগারের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে তার স্বপ্নের স্বাধীন দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালির উপর সশস্ত্র হামলা করে শত শত বাঙালিকে হত্যা করে। সেই খবর জাতির পিতার কানে পৌঁছামাত্র তিনি আর কালক্ষেপন না করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। আর তারপরই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানের সামরিক সরকার ইয়াহিয়া খান জাতির পিতাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে রাখেন।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বীর বাঙালি জাতি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে জাতির পিতার ঘোষণা মতে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে। পাকিস্তানি সামরিক সরকার যখন বুঝতে পারে বাংলাদেশের অপর নাম শেখ মুজিবুর রহমান। ৮ জানুয়ারি তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ঐদিনই তাকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় জাতির পিতা লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে নামেন। সকাল ১০টার পর জাতির পিতা তৎকালীন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, বাংলাদেশের তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদসহ অনেকের সাথে কথা বলেন। পরদিন ৯ জানুয়ারি বৃটেনের বিমান বাহিনী তাদের নিজস্ব বিমানে করে অত্যন্ত সম্মানের সাথে জাতির পিতাকে স্বদেশের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়। ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা দিল্লীতে নামেন। সেখানে তিনি ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ ও সেই দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পান। জাতির পিতা তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
 
জাতির পিতা সেই দিনই বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনা বাহিনী ফিরিয়ে নেওয়ার কথাটি বলতে শুরু করেন।জাতির পিতার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে সেদিন সারা বাঙলার জনগণের মধ্যে আনন্দঘন মুহূর্ত অপেক্ষা করছিল। জাতির পিতার যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, সেদিকে মনোযোগী ছিলেন এদেশবাসী। তিনি যাতে সুস্থভাবে তার স্বাধীন দেশে ফিরে আসতে পারেন সেজন্য সেদিন হাজার হাজার মুজিব ভক্ত রোজা রেখেছিলেন, নামাজ মেনে ছিলেন। ১০ জানুয়ারি দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে জাতির পিতা বিমান বন্দরে নামেন। সেদিন তেজগাঁও বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ সমাবেত হন। সেদিন অনেকে জাতির পিতাকে দেখে আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিকাল ৫টায় জাতির পিতা রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেন। ভাষণে জাতির পিতা তার দীর্ঘ ২৯২ দিন কারাবন্দি জীবনের কিছু কিছু মুহূর্ত ও ঘটনা তুলে ধরেন।

সেদিন তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানের মিয়ানওয়াল নামে যে কারাগারে তাকে রাখা হয়েছিল, সেখানে কোনো আলো ঢুকতে পারত না। পাকিস্তান সরকার তার রুমের মধ্যে কবর খুড়ে রেখেছিল। কিন্তু তাতেও তিনি ভয় পাননি। মুসলমান হিসাবে আল্লাহর উপর ভরসা ও বিশ্বাস রেখেছিলেন। তিনি বলেন, আল্লাহ যেভাবে মৃত্যু লিখে রেখেছে, সেভাবেই আমার মৃত্যু হবে। জাতির পিতা তার বক্তব্যে বলেন, বাঙালি জাতির উপর তার বিশ্বাস ছিল তারা এ দেশকে স্বাধীন করবেই করবে। জাতির পিতা দেশের সকল জনগণকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের ইতিহাসের স্মরণীয় ঘটনা। এজন্য ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে জাতির পিতাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

SUMMARY

532-1.jpg