বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণটি!


জামান মুকু 
আমরা জেনেছি ১৯৭১ সালের ২১ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানের মার্কিন রাষ্ট্রদূত সিআইএ’র সাবেক কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসভবনে একটি গোপন বৈঠকে বঙ্গবন্ধুকে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রস্তাবটি ছিল- আমাদের সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইজারা দিলে বিনিময়ে বিনা রক্তপাতে আমেরিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ব্যবস্থা করে দেবে। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তখন তাকে বলেছিলেন- আমি আপনাকে চিনি, আপনি বিভিন্ন দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের হোতা ছিলেন, আমি পাকিস্তানের শেয়ালের হাত থেকে মুক্ত করে আমেরিকার বাঘের হাতে দেশকে বন্ধক দিতে পারবো না। এই হচ্ছে- আমাদের অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই গর্বের বিষয়টি আমাদের নতুন প্রজন্মকে অবশ্য অবশ্যই জানতে হবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু আমাদের বা বাঙালির নেতা ছিলেন না। যা তিনি নিজেই বলে গেছেন। তিনি ছিলেন বিশ্বের সকল শোষিত-বঞ্চিত মানুষের নেতা। তিনি তৎকালীন জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে দাঁড়িয়ে দ্ব্যার্থহীনভাবে বলেছিলেনÑ বিশ্ব আজ দুটি শিবিরে বিভক্ত। একদিকে শাসক অন্যদিকে শোষিত।

আমি শোষিত মানুষের পক্ষের নেতা। তখন কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন- আমি হিমালয়ের উচ্চতা দেখিনি, কিন্তু বঙ্গবন্ধু আপনাকে দেখেছি। আপনি মনে রাখবেন- আজ থেকে একটি বুলেট আপনাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এ ঘটনা নিয়ে তৎকালীন সময়ে কবিরা কবিতা লিখেছে এভাবে-“আমি হিমালয় দেখিনি, দেখেছি-হিমালয় সদৃশ্য বঙ্গবন্ধুকে, তাই আমার হিমালয় দেখার সাধ নেই, দেখি শুধু তোমাকে।’’
 
আমরা দেখেছি- ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একটি বুলেট নয়, শত শত বুলেট কীভাবে তাকে তাড়া করেছিল। যে ট্যাংক বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন শত্রুদের মোকবিলা করার জন্য। সেই ট্যাংকই বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসভবনে ভিড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করেছিল হায়েনারা। প্রসঙ্গত মুসলমানদের মধ্যে সর্ব প্রথম নোবেল বিজয়ী মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত প্রায় ২৭টা ট্যাংক ও গোলা-বারূদ বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন।

এর আগে অতিথিপরায়ন ও বন্ধুবৎসল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আনোয়ার সাদাতকে উপহার হিসেবে সিলেটের ৩ ট্রাক ‘চা’ দিয়েছিলেন। পরিশেষে বলবÑ আজ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়ায় বিরাট র‌্যালি, সমাবেশসহ বিভিন্ন আয়োজনে মাতোয়ারা হলাম। এ দিয়ে তেমন কোন সাফল্য আসবে না। বরং আমাদের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে সবাইকে এক কাতারে শামিল হতে হবে। আমাদের র‌্যালি, সমাবেশসহ সমস্ত আয়োজন তখনই সফল হবে, যখন বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে আমরা লালন-বহন-ধারণ করতে পারবো।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

SUMMARY

522-1.jpg