ইসলাম প্রচারে বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষ


মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় বাংলাদেশকে মুসলিম দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এই ভূখণ্ডে একটা সময় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। সপ্তম শতাব্দীতে কিছু আরব মুসলিম ব্যবসায়ী ও সুফি ধর্ম প্রচারকদের মাধ্যমে এই ভূখণ্ডে প্রথম ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছিল। দ্বাদশ শতকে মুসলমানরা বাংলা বিজয়ের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করে। সেই সুফি-দরবেশদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন, হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহঃ)। তিনি ১৪৬৩ সালে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে সুদূর ইরাক থেকে বঙ্গদেশে আসেন। হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহঃ) এর সফরসঙ্গীদের মধ্যে শেখ আউয়াল ছিলেন অন্যতম। আর এই দরবেশ শেখ আউয়াল ছিলেন বায়েজিদ বোস্তামীর প্রিয় সহচর এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষ।

একদিন বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.) শেখ আউয়ালকে ডেকে তখনকার বঙ্গের প্রধান এলাকা সোনারগাঁও-এ যাবার নির্দেশ দিলেন। এ অঞ্চলে তখনো ইসলামের প্রচার ব্যাপকভাবে হয়নি। তাঁকে ওই এলাকায় ইসলামের শান্তির বাণী শোনাতে হবে। দরবেশ আউয়াল দু-একজন সঙ্গী নিয়ে এলেন সোনারগাঁও-এ। চতুর্দিকে শেখ আউয়ালের সুনাম ছড়িয়ে পড়লো। সোনারগাঁও-এ দরবেশ এসেছে শুনে এলাকার মানুষ ছুটে এলেন তাঁর কাছে। দরবেশ শোনালেন ধর্মের কথা, মানবতার কথা, মানুষের কল্যাণের কথা। এক সময় তিনি বিয়ে করলেন এক বাঙালি কন্যাকে। একদিন তাঁর ঘর উজালা করে পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো। বাবা শেখ আউয়াল আদর করে ছেলেটির নাম রাখলেন শেখ জহিরউদ্দীন।
 
দেখতে দেখতে জহিরউদ্দীন বড়ো হয়ে উঠলেন। বাবার কাছেই ধর্মীয় পড়াশোনা। প্রতিদিন আস্তানায় হাজার হাজার লোক আসে। তারা শেখ আউয়ালকে ভীষণ শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু একদিন সকলকে না জানিয়ে দরবেশ শেখ আউয়াল পাড়ি জমালেন আপনদেশ ইরাকে। যাত্রার প্রাক্কালে যুবক জহীরকে ডেকে বললেন— মানুষের কল্যাণে থেকো, পরম সৃষ্টিকর্তাকে সব সময় স্মরণ করো এবং তার আদেশ-নিষেধ মানুষের কাছে প্রচার করো। এরপর অনেক বছর কেটে গেছে। দরবেশ শেখ আউয়াল আর ফিরে আসেননি বাংলায় তথা সোনারগাঁও-এ।

এরপরের ঘটনা প্রায় দুই/তিন‘শ বছরের। শেখ জহির বাবার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। পরবর্তীকালে শেখ জহিরের ছেলে তেকড়ী শেখও সোনারগাঁওয়ে দাদার নাম-ডাক টিকিয়ে রাখেন; কিন্তু দিনবদল ও বাস্তবতার কারণে তেকড়ী শেখ ব্যবসার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান খুলনা। খুলনায় তেকড়ী শেখের পুত্র শেখ বোরহানউদ্দীনের জন্ম হয়। বড় হয়ে বোরহাউদ্দীন তাঁর বন্ধুর কাছে শোনেন মধুমতী নদী ও ঘাগোর নদীর মধ্যে জেগে ওঠা টুঙ্গিপাড়া নামক একটি অজপাড়াগাঁয়ের কথা। তিনি রূপসা নদী পাড়ি দিয়ে চলে আসেন এ গ্রামে। এখানেই ধর্ম প্রচারের কাজে মনোনিবেশ করে এই গ্রামকেই একদিন ভালোবেসে ফেললেন দরবেশ শেখ আউয়ালের উত্তরাধিকারী শেখ বোরহানউদ্দিন। তিনি টুঙ্গিপাড়ায় ঘর বাঁধলেন, বিয়ে করলেন। তার তিন পুত্র সন্তান জন্ম হলো। এরা হলেন শেখ আকরাম, শেখ তাজ ও শেখ কুদরত উল্লাহ। শেখ আকরামেরও তিন ছেলে। এদের মধ্যে একজন শেখ আবদুল হামিদ। শেখ আবদুল হামিদের এক ছেলের নাম শেখ লুৎফর রহমান। আর এই লুৎফর রহমানের চার কন্যা সন্তান ও দুই পুত্র সন্তানের মধ্যে এক পুত্র সন্তানের নাম শেখ মুজিব। যিনি বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান ও বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

SUMMARY

508-1.jpg