বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি আল মাহমুদ। সাহিত্যের নানা শাখায়ও রয়েছে তার অবাধ বিচরণ। এর পাশাপাশি রাজ-রাজড়াদের সঙ্গে তার বিশেষ সখ্যের কথা কমবেশি সবার জানা। মুক্তিযোদ্ধা কবি হিসেবে তিনি যেমন গর্বিত, তেমনি তার আর একটি অহংকার হলো, তিনি ছিলেন একটি র্যাডিক্যাল পত্রিকা ‘গণকণ্ঠ’-এর সম্পাদক। তিনি ক্ষমতাসীনদের আনুকূল্য যেমন পেয়েছেন, তেমনি আবার তাদের রোষানলে পড়ে জেলও খাটতে হয়েছে। তার পরও তিনি বিভিন্ন সময় গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি।
সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে আল মাহমুদ বলেন, “… নব্য বাঙালি ধনীরা পাঞ্জাবি, ইস্পাহানী, বাওয়ানী, দাউদ-এদের খপ্পর থেকে বের হতে চেয়েছিলেন। বাঙালিরা কলকারখানা করতে চেয়েছে। নিজেদের পুঁজি খাটাতে চেয়েছে। ধনী হতে চেয়েছে। আর এদের প্রতিনিধি হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালিরা যেটা চেয়েছে, তাদের যে দাবি ছিল, সেটাই রূপায়িত করতে চেষ্টা করেছেন শেখ মুজিব ছয় দফা দিয়ে। বাঙালি জাতির যদি মুক্তি না হয়, বাঙালি পুঁজিপতিদের মুক্তি হবে না; বাঙালি কৃষকের মুক্তি হবে কী করে? এটাই শেখ মুজিব খুব নির্ভুলভাবে কাজে লাগিয়েছেন, যা অন্যরা পারেনি। পাকিস্তান ধর্মীয় দিক দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও ধর্ম দিয়ে কি শাসিত হয়েছে? সোজা কথা, সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে পাকিস্তান শাসিত হয়েছে। এ রকম একটি দেশে বাঙালিরা থাকতে চায়নি। এদের যত উদ্যোগ ছিল, মার্শাল ল তা শেষ করেছে। ঠিক এ রকম একটি পরিস্থিতিতে শেখ মুজিব ছয় দফা দিয়েছেন। সোজা কথা, তিনি জনগণের স্বাভাবিক চাওয়াকে পুঁজি করে রাজনীতি করেছেন এবং তাতে তিনি সার্থকও হয়েছেন। এই হলো আওয়ামী লীগের সার্থকতা। এটা অস্বীকার করে লাভ নেই। আর অবশেষে শেখ মুজিব তার অসাধারণ নেতৃত্বের মাধমে বাঙালিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিলেন, যা আজকের বাংলাদেশ।”
আপনার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় কেটেছে গণকণ্ঠ পত্রিকায়। সত্তরের দশকে তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল পত্রিকাটি। আপনি ছিলেন এ পত্রিকার সম্পাদক। যে কারণে আপনাকে জেলেও যেতে হয়েছিল। আবার ওই সময়েই আপনার কবিখ্যাতিতে মুগ্ধ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আপনাকে মুক্তি দিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে চাকরি দেন। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে?
মাহমুদ: হ্যাঁ, ভীষণভাবে মনে পড়ে। বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেছিলেন, ‘দেখ আমি ওই শিল্পকলা একাডেমি করেছি, তুই এখানে জয়েন কর। আমি তোকে পৃষ্ঠপোষকতা দেব, তুই জয়েন কর।’ বলেই আমার সামনে তিনি নিজের টেলিফোনটা নিয়ে আমার বাসার ফোন নম্বর জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম, তিনি টেলিফোন করলেন। এরপর ফোনে আমার স্ত্রীকে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি ওকে শিল্পকলা একাডেমিতে জয়েন করতে বলেছি, তুমি তাকে রাজি করাবে।’ কথা বলা শেষ ফোনটা রেখে দিলেন তিনি। আসলে একজীবনে কত যে ঘটনা! জীবন আমাকে অনেক দিকে নিয়ে গেছে।
সূত্র: প্রথম আলো