মাছুম বিল্লাহ
‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ গঠনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের আসাম রাজ্যকে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন।এ জন্য বঙ্গবন্ধু নাকি তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন মহলে বক্তব্য রেখেছিলেন বলে দাবি করেছেন ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) সাবেক কর্মকর্তা অমর ভূষণ।
সদ্য প্রকাশিত ‘দ্য জিরো কষ্ট মিশন এবং দ্য উইলি এজেন্ট শীর্ষক বইয়ে সাবেক ‘র’ কর্মকর্তা অমর ভূষণ গোয়েন্দা ফাইলের উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করেছেন, আসামের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নজর ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। অসীম প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আসামকে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বদলে যাবে বলেও বিভিন্ন সময় মত ব্যক্ত করেন তিনি।
গোয়েন্দা ফাইলের উদ্ধৃতি দিয়ে ভূষণ যেসব অভিযোগ করেছেন, ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ গঠনের সমর্থনে জুলফিকার আলি ভুট্টো ও শেখ মুজিবুর রহমানও নাকি বিভিন্ন মহলে বক্তব্য রেখেছিলেন। জুলফিকারের মতে, ভারত-পাকিস্তান তিক্ত সম্পর্কের পেছনে শুধু কাশ্মীর নয়, আসামও রয়েছে। অবিভক্ত আসাম পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে দাবি করেছিলেন ভুট্টো।
অমর ভূষণ পুরনো এক ফাইলের উদ্ধৃতি দিয়ে আরো বলেন, ভারতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের পেছনে রয়েছে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। আইএসআইয়ের প্রত্যক্ষ মদতেই বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরে আসাম তথা উত্তর-পূর্ব ভারতে অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ করছে। আইএসআই’র মূল লক্ষ্যই হচ্ছে আসামে ক্রমশ অনুপ্রবেশকারী বৃদ্ধি করা। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন স্থানে অনুপ্রবেশকারী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘাত বাধানোর লক্ষ্যেই এই পরিকল্পনা তাদের। এখানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখতে পারলেই তাদের ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ গঠনের পথ প্রশস্ত হবে, আর এটাই তাদের পরিকল্পনা।
বইয়ে ভূষণ জানান, নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের মাটিতে এক দু:সাহসিক অভিযান চালিয়েছিল ‘র’। আইএসআইয়ের প্রচ্ছন্ন মদতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠা জামায়াত শিবির ধ্বংস করাই ছিল ‘র’ র প্রধান লক্ষ্য।এই ক্ষেত্রে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় মুখ্য ভুমিকা পালন করেছিল বলেও বইয়ে উল্লেখ করেন ভূষণ। বাংলাদেশে অত্যন্ত গোপনে অভিযান চালিয়ে প্রাথমিকভাবে যথেষ্ট সাফল্যও পায় ‘র’। বিশেষ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের বিষয়টি যাতে কোনও ভাবে প্রকাশ্যে না আসে, এজন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছিল।
বইয়ে ভূষণ আরও জানান, উত্তর-পূর্ব ভারতসহ পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তবর্তী কিছু জেলা নিয়ে আইএসআইয়ের বৃহত্তর বাংলাদেশ গঠনের ব্লুপ্রিন্ট নয়া দিল্লির হাতে এসেছিল। তাই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে তখন সাবেক এক ‘র’ কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ অভিযান চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এইক্ষেত্রে সুজল রথ নামের অন্য এক কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন বলেও নিজের বইয়ে উল্লেখ করেছেন ভূষণ।