বঙ্গবন্ধুকে হারানোর ক্ষত ও ক্ষতি


অধ্যাপক ড. এম. শাহ্ নওয়াজ আলি  
শোক, শক্তি ও প্রেরণার মাস আগস্ট। শোক, বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক স্বপরিবারে নিহত হন এ মাসেই। নিহত না বলে বলা যায়, হত্যা করা হয় তাকে। কিছু বর্বর, আনুষ হত্যা করে এ দেশের স্রষ্টাকে। রাজনীতির কবি মহান মুজিবকে। জনগণের প্রকৃত বন্ধু, বন্ধুবন্ধুকে। কীভাবে জনক হত্যার ক্ষতি ও ক্ষত সম্পর্কে লিখব। কীভাবে বোঝাব কী ক্ষতি নিজেরাই আমরা করেছি মহান এই মানুষটি হত্যা করে। কী করেনি এই মানুষটি আমাদের জন্য, এ ভূখন্ড আমাদের জন্য নিশ্চিত করার জন্য। বঙ্গবন্ধুর যাপিত জীবন ছিল প্রায় পঞ্চান্ন বছর, জেল খেটেছেন প্রায় চৌদ্দ বছর। জীবনের চৌদ্দটি মূল্যবান বছর জেলে জেলে, অন্ধকার প্রকোষ্টে কাটিয়েছেন। কেন? এ দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য। পেরেছিলেন কী তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে? তা আর বলার অপেক্ষা রাখে। ইতিহাস সাক্ষী। জনকের অঙ্গুলি হেলনে কেঁপে উঠেছিল পাকিস্তানি শাসকের মসনদ। ফলাফল তো ইতিহাস, মাত্র ন’মাসে মুক্ত স্বাধীন বাংলার এই পবিত্র ভূখন্ড। বিশ্ব ইতিহাস কয়টি রাষ্ট্র আছে সশস্ত্র যুদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভ করেছে? হাতেগোনা। তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ।

স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য এ দেশের মানুষ যুদ্ধ করেছে। রক্তস্রোতেও তাদের ভীত করতে পারেনি। শত্রুর চোখে চোখ রেখে লড়েছে। জয় এসেছে। বিজয়ের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বাংলাদেশ তার স্থপতিকে হারায়। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। সামরিক স্বৈরশাসকেরা দীর্ঘ তেইশ বছর শাসন করেছে এ দেশকে। এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে পেছনের দিকে হেঁটেছে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ উল্টো ধারায় চলেছে। যে স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশ স্বাধীন করা হলো, সেই স্বৈরশাসকদের ভূতই যেন ফিরে এল স্বাধীন রাষ্ট্রে। জনককন্যা ক্ষমতায় এলে সব প্রতিবন্ধকতা সরানোর দায়িত্ব নেন। মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।
 
বঙ্গবন্ধু গ্রাম থেকে উঠে আসা একজন মানুষ। কিন্তু সাধারণ মানুষ থেকে কীভাবে অসাধারণ হয়ে উঠা যায় তার বড় উদাহারণ পৃথিবীতে তিনি তৈরি করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে যে ক্ষত ও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল বাংলাদেশ তা কখনো পূরণ করা সম্ভব না। তবে তার আদর্শ অনুসরণ ও চর্চায় আমরা আমাদেরকে এগিয়ে নিতে পারি। তার দৃঢ়তা, বিশ্বাস ও গভীর দেশপ্রেমে নিজেদের আমরা উজ্জীবিত করতে পারি। এটি যদি আমরা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে কখনো পথ হারাবে না বাংলাদেশ।

লেখক : সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন

SUMMARY

500-1.jpg