ডা. এম এ হাসান
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে পৃথিবীকে জানাতে তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ই যথেষ্ট নয়। তবে এই স্বীকৃতির মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক বেশি গবেষণা হতে পারে। তার আদর্শ সারাবিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত ও গণতন্ত্রমনা মানুষদের অনুকরণীয় দর্শন হিসেবে ছড়িয়ে দিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ দরকার। এই কাজটি করতে আমি আগ্রহী। আমাদের যদি সে সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে অত্যন্ত গৌরব ও সম্মানিত বোধ করব। প্রসঙ্গ যখন বন্ধু, তখন তার নানা অবদান, অর্জনের বিষয়গুলো সামনে আসবে। ৭ মার্চের ভাষণের বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়ে ইউনেস্কো নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। সম্মানিত হয়েছে। আমি মনে করি না এই স্বীকৃতির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আলাদা করে কোনো সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে। তবে নিশ্চয়ই এটি একটি অসাধারণ স্বীকৃতি। যা ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সাত মার্চ একাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণটি দিয়েছিলেন, সেটি ওই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানে যে সামরিক শাসন ছিল, তাদের ক্ষমতার যে বলয় ছিল, বাংলার মানুষের প্রতি তাদের শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিল, তা ছিল অত্যন্ত নিকৃষ্ট। অর্থাৎ নানা সীমাবদ্ধতা, দেশের মানুষের নিরাপত্তা এবং সামষ্টিক স্বপ্নকে বিবেচনা ও সব কূল রক্ষা করে, বাংলার মানুষেরে স্বাধীনতা এবং স্বপ্নের কথা চিন্তা করে এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু একটি অসাধারণ ভাষণ দিয়েছিলেন। ভাষণের লক্ষ্য ছিল, জনগণকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা। নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করা।
হঠকারী কোনো পদক্ষেপ, মন্তব্য আচরণের কারণে স্বাধীনতার আন্দোলনটি যেন আমাদের বিপক্ষে চলে না যায় এবং সামগ্রিকভাবে আমাদের স্বপ্নযাত্রা যাতে ব্যহত না হয়, ভুলপথে পরিচালিত না হয় সবকিছু পরিমাপ করেই ওই ভাষণটি তিনি দিয়েছিলেন। তাই সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে বলব, হাজার বছরের দশটি ভাষণের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল অন্যতম সেরা। এটি কোনো ধর্মীয় বা প্রতিযোগিতার ভাষণ নয় এটি রাজনৈতিক, জনতার প্রতি, এবং একটি জাতির কল্যাণের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণ। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতিটা অবশ্যই প্রাপ্য ছিল। তবে এই স্বীকৃতি যদি নাও পেত তাতেও এ ভাষণের গুরুত্ব ন্যূনতমও কমত না।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এবং দর্শনকে একটি ক্লাসিক্যাল দর্শনে পরিণত করা যায়, যে কাজটি বাংলাদেশে আজও হয়নি। এটি করতে হলে যারা প্রফেশনাল তাদের দিয়ে করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে বলেন, এটা বাস্তবায়ন করতে হবে, নিশ্চয়ই আমি সে কাজে সব রকম সহযোগিতা দিব। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে যত রকম সহযোগিতা প্রয়োজন তা করতে আমি খুবই আগ্রহী।
লেখক : মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও ওয়ারক্রাইম ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংয়ের চেয়ারম্যান