আব্দুর রৌফ চৌধুরী

আব্দুর রৌফ চৌধুরী

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রৌফ চৌধুরী বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন।১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর দিনাজপুরের বোঁচাগঞ্জ উপজেলার ধনতলা গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র এক বছর বয়সেই তার বাবা মারা যান। আট ভাইবোনের মধ্যে রৌফ চৌধুরী ছিলেন সর্ব কনিষ্ঠ।

আবদুর রৌফ চৌধুরী ছিলেন বৃহত্তর দিনাজপুরের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনের সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। তার একমাত্র ছেলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী দিনাজপুর-২ আসনে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য ও টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।


পারিবারিক জীবন
তার পিতা মৌলভী খোরশেস চৌধুরী এবং মাতা আয়েশা খাতুন চৌধুরী। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন সব থেকে ছোট। পিতা মৌলভী খোরশেস চৌধুরী সমাজ সেবক ছিলেন। রৌফ চৌধুরীর জন্মের ১ বছর পর তার পিতা পরলোক গমন করেন। ১৯৬২ সালে তিনি পঞ্চগড়ের ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন সরকারের জ্যেষ্ঠ কন্যা রমিজা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৫ কন্যা ও এক পুত্রের জনক।

তার একমাত্র পুত্র খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সরকারের পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

শিক্ষাজীবন
রৌফ চৌধুরী ১৯৫২ সালে সিরাজগঞ্জ থেকে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। তৎকালীন ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে কারাবরণ করেন রৌফ চৌধুরী। পরে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। পরবর্তীতে দিনাজপুর তৎকালীন সুরেন্দ্রনাথ (এস.এন) কলেজে বি.এ পড়েন।

রাজনৈতিক জীবন
ঢাকা কলেজে পড়াকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত আস্থাভাজন ছাত্রনেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আসেন তিনি। পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে (বর্তমানে দিনাজপুর সরকারি কলেজ) ভর্তি হন এবং কলেজ ছাত্র সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। পাকিস্তান আমলে বৃহত্তর দিনাজপুর (বর্তমান দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়) জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। 
১৯৯৬ এর পূর্ববর্তী সময়ে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন একাধারে ১৫ বছর। ২০০২ সালে জোট সরকারের শাসন আমলে ১৫ আগস্ট সেতাবগঞ্জে জাতীয় শোক দিবস কর্মসূচীতে পুলিশের বাঁধার সম্মুখীন হয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। এরপর দীর্ঘদিন চিকিৎসারত ছিলেন।

নির্বাচন
১৯৮৯ সালে বোঁচাগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে দিনাজপুর-১ আসন (বীরগঞ্জ-কাহারোল) থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। 

আন্দোলন
১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রণীত ৬ দফা আন্দোলন, পরে ছাত্রসমাজের ১১ দফাসহ আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী প্রতিটি আন্দোলনে সামনের কাতারে ছিলেন রৌফ চৌধুরী। ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু তাকে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখন তিনি তার শিক্ষক প্রিন্সিপাল এবিএম মোকসেদ আলীর নাম প্রস্তাব করেন এবং বঙ্গবন্ধু তাকেই নমিনেশন দেন।
’৭৫ পরবর্তী সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে সামনের কাতারে নেতৃত্ব দেন।

মুক্তিযুদ্ধ
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পূর্বাঞ্চলীয় জোনে মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও কামারুজ্জামানের দূত হিসেবে কাজ করেন রৌফ চৌধুরী। । সেই সাথে বোঁচাগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক ছিলেন। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বোঁচাগঞ্জ উপজেলাকে পাক-হানাদার মুক্ত করেন।
মুক্তিযুদ্ধের পরপরই ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আব্দুর রৌফ চৌধুরী।
স্বাধীনতাপরবর্তী সময় তিনি আখচাষি সমবায় ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।

ক্রীড়াজীবন
৫০ থেকে ৬০ এর দশকে ফুটবল খেলায় দিনাজপুরের জন্য অনেক সুনাম বয়ে এনেছিলেন তিনি। তৎকালীন স্থানীয় ডি.এস.এ দলের অপরিহার্য খেলোয়াড় ছিলেন এবং দিনাজপুর ডি.এস.এ দলের হয়ে রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী জেলায় নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জয়ের মুকুট ছিনিয়ে নিয়ে আসেন। সেই সময় উত্তরবঙ্গের সেরা ফুটবলার হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন।

খেলোয়াড়ের পাশাপাশি তিনি সফল ক্রীড়া সংগঠকও ছিলেন। তার নির্দেশনায় অনেক কৃতী খেলোয়াড় গড়ে ওঠেন। 

মৃত্যু
আব্দুর রৌফ চৌধুরী ২০০৭ সালের ২১ অক্টোবর রাত ৯ টায় তার নিজ বাসভবন, বোঁচাগঞ্জ থানার ধনতলা গ্রামে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। 

SUMMARY

48-1.jpg