বঙ্গবন্ধু: বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দ্রষ্টা এবং স্রষ্টা

অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন 
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এখন অনেকটাই অবহেলিত। এমনকি আওয়ামী লীগও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে অনেকটাই বিচ্যুত। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে রেসকোর্সে ময়দানে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ হবে একটি আদর্শ রাষ্ট্র, যার ভিত্তি ধর্মভিত্তিক হবে না। কিন্তু ২০১১ সালের ১৫তম সংশোধনীর মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। তাতে করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তিটিও হয়ে গেছে ধর্ম। তার ফলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চরিত্রটিও বিনষ্ট হয়েছে। কারণ গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার।

আমরা লক্ষ্য করছি, আওয়ামী লীগে তৃণমূল পর্যায়ে অনেক জামায়াত কর্মী যোগ দিচ্ছে এবং আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের ফুল দিয়ে বরণ করছেন। তাতে করে আওয়ামী লীগ অনেকটাই আদর্শ বিচ্যুত হয়ে গেছে বলেই আমি মনে করি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাচনিক উচ্ছ্বাসে আছে, কিন্তু কর্মকা-ে নেই বলেই মনে করি আমি। বঙ্গবন্ধুর মূল শক্তি ছিল, বাংলার মানুষ। তিনি একবার বলেছিলেন, আমি ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময়ও বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার দেশ। ১৯৬৬ সালে যখন ৬ দফা আন্দোলন শুরু হয়, সেই সময় সিরাজুল আলম খান ছাত্রলীগের নেতা, তিনি একবার মন্তব্য করেছিলেন, দেশকে স্বাধীন করতে হবে শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই। কারণ লোকে তার কথা শুনে। বঙ্গবন্ধু মানুষের কথা বুঝতেন, মানুষের আশা-আকাঙ্খার কথা বুঝতেন। সেভাবেই তিনি রাজনীতি করেছেন। সাধারণ মানুষই ছিল তার রাজনৈতিক শক্তির উৎস।
 
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দ্রষ্টা এবং ¯্রষ্টা। সাতচল্লিশ পরবর্তী রাজনীতির যে আবর্তন ও বিবর্তন হয়েছে তার অনিবার্য পরিণতিতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়। সাতচল্লিশ সালের আগে তিনি হোসেন শহীদ সোহ্্রাওর্দীর অনুসারী হিসেবে পাকিস্তান আন্দোলনের একনিষ্ট কর্মী ছিলেন। কিন্তু সেই শেখ মুজিবুর রহমান সাতচল্লিশে কলকাতার বেকার হোস্টেলে সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে একটি সভা করেন। যেখানে তিনি বলেছিলেন, এই পাকিস্তান সেই পাকিস্তান নয়। এই পাকিস্তানে বাঙালির কোনো স্বার্থ রক্ষিত হবে না। সুতরাং দেশে ফিরে নতুন করে আন্দোলন শুরু করতে হবে।

সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর আমরা দেখব এই সময়ে বঙ্গবন্ধু এই রাষ্ট্রকে কিভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর কতটুকু মূল্যায়ন হয়েছে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ বাঙালিরদেরই একটি ক্ষুদ্র অংশ তাকে হত্যা করেছে পনের আগস্ট একাত্তরে। বলা হয়, এই হত্যাটি করেছে সামরিক বাহিনীরই কিছু বিপথগামী সদস্য। তারা আসলে বিপথগামী নয়, তারা তাদের পথেই ছিল। চিন্তা-চেতনা, মনোভাবে কখনোই তারা বাঙালি ছিল না। ছিল পাকিস্তানের ভাবাপন্ন। সে কারণেই তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পেরেছিল। বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় অপরাধ বোধ হয় ছিল, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জনক হওয়া! অপশক্তিগুলো যেন কোনোভাবেই তা মেনে নিতে পারছিল না।

লেখক : ইতিহাসবিদ

SUMMARY

472-1.jpeg