অসীম সাহা
খোকা, শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা জীবনের ধাপে ধাপে নিজেকে অতিক্রম করা একটি নাম ও একটি বিশেষণ থেকে অবশেষে একটি জাতিরাষ্ট্রের নির্মাতা। পৃথিবীর ইতিহাসে নিজেকে নির্মাণ করার এই অভাবিতপূর্ব বিস্ময় সৃষ্টিকারী মহাকালের মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান নিজের নামটি ক্ষণকাল থেকে চিরকালের করে তুলেছেন তাঁর অসামান্য দুঃসাহসী ভূমিকার বিস্ময়কর নেতৃত্বের মহিমান্বিত শক্তি দিয়ে।
ক্ষণকালের ইতিহাসে পৃথিবীতে নিজেকে মহিমান্বিত করেছেন অনেকেই; কিন্তু চিরকালের করে তুলতে পেরেছেন তারাই, যারা মহাকালকে নিজেদের করতলগত করে তুলতে পেরেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই ব্যতিক্রমী ও দুঃসাহসী মহানায়ক, যিনি গোপালগঞ্জের অজ পাড়াগাঁ থেকে উঠে এসে সেই চিরজীবী মহাপুরুষ হয়ে উঠেছেন, ইতিহাস যাকে নির্মাণ করতে পারেনি; বরং যিনি ইতিহাস নির্মাণ করে একটি জাতিরাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বলতে গেলে প্রায় একক নেতৃত্বের মহিমান্বিত গুণে ৭ কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এই জাতিরাষ্ট্রের জন্মদানের কৃতিত্ব শুধুই তাঁর।
এ-কোনো অতিশয়োক্তি নয়, ইতিহাসের সত্য। যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে কটাক্ষ করেন কিংবা যারা এখনও তাঁকে ইতিহাসের পরম্পরায় রেখে বিচার করার চেষ্টা করতে ব্যর্থ হন, তারা দুর্ভাগা। অর্বাচীনরা চিরকাল ইতিহাসকে বিকৃত করতে চেয়েছে, কিন্তু ক্ষণকালের জন্য সেটা সম্ভব হলেও চিরকালের জন্য তা সম্ভব হয়নি, কখনও হয় না। কারণ ইতিহাস হলো সেই সত্যের আধার, যা নিজের শক্তিতে সকল মিথ্যেকে অপসারণ করে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়গিরির মতো আপন লাভার উদ্গীরণ করতে সক্ষম।
যে জাতি কখনো স্বাধীন ছিল না, যাদের কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র ছিলো না, সেই জাতিকে একটি রাষ্ট্র উপহার দেয়ার কৃতিত্ব যার, তাঁকে নিয়ে এখনও বিভ্রান্তি তৈরি করার অপপ্রয়াস শুধু তাদের পক্ষেই সম্ভব, যারা মনেপ্রাণে এখনো বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি, এখনো পাকিস্তান আর দ্বিজাতিতত্ত্বের বিষধর সাপ যাদের মনের কোটরে সংগোপনে বাস করে। ১৯৭৫ সালে সেই বিষধর সাপের ছোবলে আমরা হারিয়েছি আমাদের অস্তিত্বের শেকড়, আমাদের জাতিরাষ্ট্রের ভিতপাথর। কিন্তু এভাবে দেহের মৃত্যু হতে পারে, চেতনার মৃত্যু হয় না, জাতির পিতাকে হত্যা করার পরও তিনি পুনরায় যে আরও উজ্জ্বল, আরও মহিমান্বিত হয়ে সারা পৃথিবীতে এক অক্ষয় নাম হিসেবে প্রতিমুহূর্তে পৃথিবীর সংগ্রামী মানুষের প্রতীক হয়ে উঠেছেন, তা কি অর্বাচীনরা দেখেও দেখে না? যারা জানে না, বীরেরা কখনো মরে না, কাপুরুষরা বারবার মরে। তবু তারা আজও জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন বঙ্গবন্ধুর মতোই সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার কাজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন, তখন তারা এই জাতিরাষ্ট্রকে ধ্বংস করার জন্য, একটি ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। জাতিকে তাই সজাগ থাকতে হবে। যে কোনো মূল্যে শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার কোনও বিকল্প নেই। এ-ও মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা নেই, তো আমরা নেই, শেখ হাসিনা নেই তো, বাংলাদেশ নেই; শেখ হাসিনা নেই, তো বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা নেই! ৩০ লক্ষ শহিদ আর দু’লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের যে বাংলাকে আমরা পৃথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করেছি, তাকে কি আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশকে কি আমরা পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান বানাতে পারি? কখনও না। তাই এই স্বাধীনতার মাসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত সকলকে বিভেদ ভুলে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে
ঐকবদ্ধভাবে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। বলতে হবে :
আমরা ভুলতে দেবো না বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতার নাম
আমরা তাঁকে নিয়ে সারাটি জীবন চলবোই অবিরাম।
লেখক : কবি ও সংযুক্ত সম্পাদক, দৈনিক আমাদের সময়